ঢাকা, রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫

৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মুহররম ১৪৪৭

মানিলন্ডারিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের উদ্যোগ

দি ব্যাংকার ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:৪৭, ২০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১২:৪৮, ২০ জুলাই ২০২৫

মানিলন্ডারিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের উদ্যোগ

মানিলন্ডারিং প্রক্রিয়া শুরু হয় অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ প্লেসমেন্টের মাধ্যমে। প্লেসমেন্টের প্রধান খাত হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকে তহবিল জমাকরণ। এজন্য বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মানিলন্ডারিং প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে যথাযথ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

মানিলন্ডারিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগসমূহ হলো:

কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট প্রতিষ্ঠা

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ব্যাংকের অভ্যন্তরে নেতৃত্ব প্রদানসহ যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, শাখার কাজ মনিটর করা, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করা এবং সর্বোপরি একটি সিস্টেম উন্নয়নের মাধ্যমে নিজ ব্যাংককে মানিলন্ডারিং ঝুঁকি থেকে রক্ষা করাই কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিটের কাজ। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েই কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট পরিচালনা করে থাকেন। এক্ষেত্রে তিনিই ঐ ব্যাংকের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা বলে বিবেচিত।

শাখা পর্যায়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধমূলক সিস্টেম উন্নয়ন

বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় অস্বাভাবিক লেনদেন চিহ্নিতকরণ, সন্দেহজনক লেনদেন সনাক্তকরণ, এগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ এবং
প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিটে রিপোর্টকরণই শাখা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমের উদ্দেশ্য। তাছাড়া শাখাকে ব্যবহার করে কোনো মানিলন্ডারার যেন মানিলন্ডারিং করতে না পারে সে বিষয়েও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ সিস্টেম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য। শাখা পর্যায়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রতিটি শাখায় একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ ঊর্ধ্বতন নির্বাহীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এরূপ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে শাখা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা বলা হয়ে থাকে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান খুবই
জরুরি। তাই বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্যোগে নিজ নিজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ডেস্কসমূহে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য গুরুত্বের সঙ্গে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

অস্বাভাবিক লেনদেন সনাক্তকরণ

বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিটি শাখার দৈনন্দিন লেনদেনগুলো সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হয়। কোনো শাখায় কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন সনাক্ত করা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি শাখা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তার নজরে আনা হয়। এ বিষয়ে শাখা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা কর্তৃক বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হয় এবং বিষয়টি শাখা ব্যবস্থাপকের অবগতিতে আনা হয়ে থাকে।

সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্টকরণ

শাখায় সনাক্তকৃত অস্বাভাবিক লেনদেন সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে লেনদেনগুলো অস্বাভাবিক বলে বিবেচিত হলে বা এসব লেনদেনের সঙ্গে মানিলন্ডারিং বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন জড়িত থাকতে পারে বলে অনুমিত হলে অনতিবিলম্বে তা নির্ধারিত ফরমে ব্যাংকের কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিটে রিপোর্ট করা হয়। কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট থেকে প্রতিবেদনটি পাবার পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করে উক্ত ইউনিটের বিবেচনায় প্রকৃতই এগুলো সন্দেহজনক বলে বিবেচিত হলে মন্তব্যসহ নির্ধারিত ফরমে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে রিপোর্ট করা হয়।

নগদ লেনদেন রিপোর্টকরণ

বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোনো শাখায় কোনো একজন গ্রাহকের হিসাবে একদিনে এক বা একাধিক লেনদেনের ফলে যদি নগদে দশ লক্ষ টাকার অধিক জমা বা উত্তোলন করা হয়, তাহলে বিষয়টি নির্ধারিত ফরমে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করা হয়। এ ধরনের রিপোর্ট যদিও একটি রুটিন ব্যবস্থা এবং সন্দেহজনক কোনো কিছু নয়, তবু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে এ রিপোর্ট সহায়ক হতে পারে।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধমূলক প্রচারণার আয়োজন

বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিটি শাখা থেকেই মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত তথ্যজ্ঞাপক লিফলেট গ্রাহকদের কাছে বিলি করা হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উদ্যোগে মিডিয়াতে নিয়মিত সতর্কবাণী প্রচার করা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের এ ধরনের প্রচারণার ফলে ব্যাপক গণসচেতনতা বাড়ছে এবং ব্যাংকের ক্ষেত্রে আইনের প্রায়োগিক দিকের পরিপালন সহজতর হচ্ছে। এ বিষয়টি চিন্তা করে এ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক একক ও যৌথভাবে কাজ করে চলেছে।

মানিলন্ডারিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে গ্রাহক পরিচিতি (Know your Customer বা KYC) পলিসি, গ্রাহক সম্মতি (Customer Acceptance) পলিসি, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া (Internal Control System), লেনদেনের অনুমিত মাত্রা (Transaction Profile) গ্রহণ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া এ ইউনিট থেকে নিয়মিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে অন-সাইট ও অফ-সাইট পরিদর্শন করা হয়। এ ইউনিট থেকে জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ পরিপালনের জন্য ওয়ার্কশপ, প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এছাড়া নিয়মিতভাবে পুলিশ ও দুর্নীতি দমন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করা হয়।

সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস

এএ

দি ব্যাংকার ডেস্ক

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন