ঢাকা, রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫

৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মুহররম ১৪৪৭

স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি কমেছে ৭.৪২ শতাংশ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪:০০, ২০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০০, ২০ জুলাই ২০২৫

স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি কমেছে ৭.৪২ শতাংশ

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি আরও কমেছে। এক বছরের ব্যবধানে মে শেষে স্বল্প মেয়াদে নেওয়া বিদেশি ঋণের স্থিতি কমেছে ৮২ কোটি ডলার বা ৭. ৪২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মে মাস শেষে দেশের স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। অথচ ঠিক এক বছর আগেও এই অংক ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার।

স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ বলতে বোঝায় বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া এমন অর্থায়ন যার মেয়াদ এক বছরের কম। এটি সাধারণত আমদানি পণ্যের অর্থ পরিশোধ, সেবা ক্রয় বা অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি আর্থিক চাহিদা পূরণের মত ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য নেওয়া হয়।

এই ধরনের ঋণ দ্রুত আসে এবং দ্রুত পরিশোধও করতে হয়। তাই এটি দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চিত্র বুঝতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছর মে মাসে বেসরিকারি খাতের উদ্যোক্তারা স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণ নিয়েছেন ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। এ সময় সুদ-আসল পরিশোধ করা হয়েছে ১ দশমিক ৯৮বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মে মাসে স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণ যা এসেছে তার চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধ হয়েছে বেশি।

তবে এপ্রিল মাসে চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। তখন ঋণ এসেছিল ১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার, আর পরিশোধ হয়েছিল ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। সে সময় ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছিল ১০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

এই ধীরগতি ও ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বড় কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সেন্টার ফর ইস্ট এশিয়ান ফাউন্ডেশনের রিসার্চ পরিচালক মাজেদুল হক বলেন, “নির্বাচিত সরকার না থাকায় বিদেশি ঋণদাতারা আপাতত সরে গেছে। স্থিতিশীল সরকার আসলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”

তিনি বলেন, “তাছাড়া আগের বছরগুলোতে বিভিন্ন বিদেশি রেটিং এজেন্সি বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ডলার দরের স্থিতিশীলতাও বিবেচনা করেন বিনিয়োগকারীরা। তাই দুই ধরণের সমস্যা রয়েছে।”

চলতি বছর জানুয়ারিতে চার বছর পর ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায় স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি। ওই মাস শেষে তা দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোভিড মহামারীর মধ্যে তা ৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল।

গত বছরের জানুয়ারিতে স্থিতির পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এসে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন এবং ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গত বছর এই দুই মাসে যা ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ও ১১ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছর প্রথম চার মাসে স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণ যা এসেছে, এর চেয়ে বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে বিদেশি ঋণ এসেছে ৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। এসময়ে পরিশোধ করা হয় ৭ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার। মে মাসেও এই ধারায় রয়েছে বিদেশি ঋণের স্থিতি।

এটি একদিকে ঋণের ভার কমার সংকেত দিলেও, অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ ও আর্থিক আস্থা কমে যাওয়ার দিকেও ইঙ্গিত করে।

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন