ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

৪ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৫:২৩, ১৬ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৫:২৩, ১৬ জুন ২০২৫

ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। কেবল জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকেই বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

রবিবার (১৫ জুন) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ শ্রেণিকরণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে। পাশাপাশি আগের সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যেসব শীর্ষ গ্রুপের মন্দ ঋণ গোপন ছিল— সেগুলোর অনেকটাই এখন শ্রেণিকরণের আওতায় আসায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, এটি ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সেই তুলনায় এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিতরণ করা মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। তিন মাস আগে তা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। মার্চ শেষে এ খাতের ব্যাংকের ঋণ স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, এর মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা খেলাপি। বেসরকারি ব্যাংকের এই হার ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ। এই ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণ ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা খেলাপি।

এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়াদি ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণের সময় পুনর্নির্ধারণ; বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ বড় ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকৃত করা; গ্রাহকের চলতি ঋণ নবায়ন না হওয়া; পুন:তফসিল ঋণের কিস্তি পরিশোধিত না হওয়া এবং বিদ্যমান খেলাপি ঋণ হিসাবের বিপরীতে সুদারোপের কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাংকখাতে খেলাপি স্থিতিশীল ছিল। ২০১২ সালে খেলাপি ঋণ দ্বিগুণ বেড়ে ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০১১ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ওই এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় ২০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। ওই বছরেই হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ঋণ খেলাপি হতে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়ার কারণেও অনেকে খেলাপি হয়ে পড়েন। ফার্মার্স ব্যাংকেও জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। এর প্রভাবে মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়।

২০১৩ সালে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে ৪০ হাজার কোটি টাকার ঘরে নেমে এলেও—২০১৪ সালে আবার বেড়ে প্রথমবারের মতো অর্ধলক্ষ কোটি টাকা অতিক্রম করে। ওই বছরে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ওই সময়ে বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতির কারণে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে। এরপর থেকে খেলাপি ঋণ হতে থাকে ঊর্ধ্বমুখী।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন