তারেক সিদ্দিকী
প্রকাশ: ২০:০৭, ১৬ মে ২০২৫ | আপডেট: ২০:০৮, ১৬ মে ২০২৫
একজন মানুষের সবকিছুর মধ্যে ব্যালেন্স করতে পারাটাই হচ্ছে অনন্য মানুষের বৈশিষ্ট্য। পেশা, বাসা ও ধর্ম—এই তিনটি ক্ষেত্রেই ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন আদর্শ ব্যাংকার শুধু দক্ষ পেশাজীবী নন, তিনি পরিবারে একজন দায়িত্বশীল সদস্য এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও একজন সৎ ও নৈতিক মানুষ। এই তিনটি দিককে সমান গুরুত্ব দিয়ে চলতে পারলেই একজন ব্যাংকার হতে পারেন সত্যিকারের আদর্শবান।
যদি অতিরিক্ত ধর্মাচক্র করতে গিয়ে বাসা/পরিবার ধ্বংস করে ফেলেন, এটা সীমালঙ্ঘন হলো। যদি পরিবারে বেশি ব্যস্ত থাকতে গিয়ে ধর্মের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেন—এটাও সীমালঙ্ঘন। যদি অতিরিক্ত ধর্মাচার করতে গিয়ে পেশার বারোটা বাজিয়ে দেন, সেটাও সীমালঙ্ঘন। আবার পেশার জন্য ধর্মকে বাদ দিয়ে দিলেন—এটা আপনার জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ, ব্যালেন্স করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জীবন এমন এক সমীকরণ, যেখানে প্রতিটি উপাদানকে সঠিক পরিমাপে রাখতে না পারলে ভারসাম্য ভেঙে পড়ে।
আপনি বলতে পারেন—এই ব্যালেন্সিংটা কি সম্ভব? আসলেইা সম্ভব। কারণ, ব্যাংকিং চাকরির একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। হ্যাঁ, কখনো কখনো তা সময়ের বাইরে গিয়েও কাজ করতে হয়। কিন্তু যদি তা অতিরিক্ত সময়জুড়ে চলতে থাকে, আপনি যদি দীর্ঘসময় ধরে কাজ করে যান অথচ সেটি আপনার ধর্মীয় জীবন ও পারিবারিক শান্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তখন এই ভারসাম্যহীনতা আপনাকেই ভিতর থেকে ক্ষতবিক্ষত করবে, হতাশ করে তুলবে।
তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত— আমরা যেই পেশাতেই থাকি না কেন, সে পেশায় দক্ষতার পাশাপাশি যেন নিজের কল্যাণ, অন্যের কল্যাণ ও ধর্মাচারে সময় দিতে পারি, পরিবারকে সময় দিতে পারি।
তা না হলে আমাদের অবস্থা হয়তো টেড টার্নারের মতো হয়ে যেতে পারে। সিএনএন –এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি, যিনি দীর্ঘ ১২ বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন, সিএনএন-ই ছিলো তার অফিস, ঘুমাতেন সেখানেই। ধর্মাচার ছিলো না, একে একে তিনজন স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ওয়ার্কাহলিক। যদিও তিনি সিএনএন–কে বিশ্বের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমে রূপান্তর করেছিলেন, কিন্তু এক সময় এই সিএনএন–এর কর্মীরাই তাকে অফিস থেকে বের করে দেয়।
তখন তিনি বুঝলেন— *তার পরিবার নেই, তার শান্তি নেই, এমনকি তার নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটিও আর তার নেই। তিনি একা, শুধুই একা।
তাই আমাদের উচিত—ব্যাংকিং পেশায় অতিরিক্ত সময় দিতে গিয়ে যেন পরিবার না হারাই, মহান স্রষ্টার রহমত থেকে বঞ্চিত না হই, আর একসময় যেন চাকরিটাও না হারাতে হয়।
তাহলে ব্যাংকিং কর্মজীবনকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যেটা আমার মেধাকে বিকশিত করবে, পারিবারিক কল্যাণ করবে, সামাজিক কল্যাণ করবে এবং যে কাজের প্রতিদান আমি দুনিয়াতে পাবো এবং আখেরাতেও পাবো। এটিই হচ্ছে সফল ব্যাংকিং ক্যারিয়ার এবং এটিই হচ্ছে সফল কর্মজীবন।
লেখক: এফএভিপি ও শাখা ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড।
এএ
তারেক সিদ্দিকী