ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্যাংকিং সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়নের সেকাল-একাল

গিয়াস উদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ: ১২:৫৩, ১ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৩৩, ১ মে ২০২৫

ব্যাংকিং সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়নের সেকাল-একাল

পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালের এই দিনে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য এবং দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকেরা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাদের এই আত্মত্যাগের সম্মানে সারা বিশ্বে দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। মে দিবসের পথ ধরে সারা বিশ্বে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন এবং ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে উঠে।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এক সময় খুবই শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৮ হতে ২০০৬ পর্যন্ত। দেশের সরকারি ব্যাংকগুলোতে সিবিএ ছিল। নানা মহলের অভিযোগ, সেসব ব্যাংকের সিবিএ নেতাদের কাছে ব্যাংকের সর্বোচ্চ প্রশাসন অসহায় ছিল৷ তাঁদের চাপ আর ধমকের মুখে থাকতে হতো কর্মকর্তাদের৷ এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও একই অবস্থা৷ তাঁরা গভর্নরকেও পরোয়া করেন না বলে অভিযোগ ছিল৷ প্রতিটি সরকারি ব্যাংকে সিবিএ বা কর্মচারি কল্যাণ সমিতি ছিল৷ নানা মহলের অভিযোগ, সিবিএ নেতারা প্রকৃতই শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণে যত না ব্যস্ত, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছাতে৷ আর সবখানেই সরকার সমর্থক সিবিএ-র দাপট থাকে৷ প্রতিপক্ষরা থাকে কোণঠাসা৷ সরকার বদল হলে পরিস্থিতিও বদলে যায়৷

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিতে শ্রমিক সংগঠনগুলো জড়িয়ে পড়ে৷ ফলে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে শ্রমিক সংগঠনগুলো রাজনৈতিক নেতাদের নানা ধরনের অন্যায্য সুযোগ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকে বলেও অভিযোগ নতুন নয়। এর ফলে দেখা যায়, শ্রমিক রাজনীতির নেতৃত্ব আর শ্রমিক শ্রেণির হাতে নেই৷ ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা কোনো না কোনোভাবে বড় রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকে।

১৯৯০ সালের পর থেকেই দেশের শ্রমিক রাজনীতির পরিবেশে পরিবর্তন দেখা দেয়। ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত খাত সংকুচিত হয় এবং বেসরকারি খাতের বিস্তৃতির সাথে সাথে শ্রমিক আন্দোলনেও পরিবর্তন আসতে শুরু করে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ধারা পরিবর্তনের সাথে সাথে শ্রমিক আন্দোলনও পাল্টে যেতে থাকে। ব্যাংকিং সেক্টরের মুকুটহীন সম্রাট বলে পরিচিত ব্যাংক নেতা জামাল উদ্দিন আহমেদ ১৯৭৮ সালে সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পাশাপাশি সব ব্যাংক মিলে বাংলাদেশ ব্যাংকস এমপ্লয়িজ ফেডারেশন গঠিত হয়। সোনালী ব্যাংকের জামাল উদ্দিন আহমেদ সভাপতি হন এবং জনতা ব্যাংকের মোস্তাক আহমেদ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মোস্তাক আহমেদ ১৯৮১ সালের ব্যাংক ধর্মঘটের সময় মৃত্যুবরণ করেন। ওই সময়ে জামাল-মোস্তাকের নেতৃত্বে ব্যাংক কর্মচারীদের অনেক দাবি আদায় হয়। এভাবেই জামাল উদ্দিন ব্যাংক কর্মচারিদের প্রিয় নেতায় পরিণত হন।

আশির দশকে সোনালী ব্যাংকে রফিকুল ইসলাম সভাপতি ও জামাল উদ্দিন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক; জনতা ব্যাংকে রফিকুল ইসলাম সভাপতি, সাজেদুর রহমান সাজু সাধারণ সম্পাদক; অগ্রণী ব্যাংকে শামসুদ্দিন সভাপতি, মজনু সাধারণ সম্পাদক; রূপালী ব্যাংকে কুদ্দুস সভাপতি, শাহ আলম সাধারণ সম্পাদক; পূবালী ব্যাংকে কামাল উদ্দিন সভাপতি, আবুল কাশেম সাধারণ সম্পাদক; কৃষি ব্যাংকে সোলয়মান খান সভাপতি, গিয়াস উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক; উত্তরা ব্যাংকে শামসুল আলম সভাপতি, সহিদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

চলবে......

আরও পড়ুন