অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান
প্রকাশ: ১৪:৪৩, ৬ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৪৪, ৬ মে ২০২৫
ইসলামী ব্যাংক সুদী ব্যাংক থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ দুটি ব্যাংক সম্পূর্ণ আলাদা চালিকা শক্তির ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত। সুদী ব্যাংকের চালিকাশক্তি হলো সুদ, আর ইসলামী ব্যাংকের চালিকা শক্তি হলো হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য। কেননা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, وأخل الله الْبَبْعَ وَحَرَّم الزنا 'আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।” (সুরা বাকারা, ২: ২৭৫)
আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর ভিত্তিতেই মূলত গড়ে উঠেছে ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা। কাজেই ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার মূল কাজ হলো ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পূর্ণভাবে সুদ পরিহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ভিত্তিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে ইসলামী শরিয়াহর বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করা। ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন এবং তার অগ্রযাত্রা সুসংহত করা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী বিধি বিধানের প্রতিফলন। এ কারণেই ইসলামী ব্যাংক পরিচালিত হয় শরিয়াহ সুপারভাইজারি বোর্ড দ্বারা। ইসলামী ব্যাংক-কে তার দৈনন্দিন কাজ কারবারে যে সব শরিয়াহ, বিষয়ক সমস্যা দেখা দেয় তা শরিয়াহ বোর্ডের সামনে নিয়ে আসতে হয়। সে সব ব্যাপারে শরিয়াহ বোর্ডের দেওয়া দিক নির্দেশনা, পরামর্শ কার্যকর ও বাস্তবায়ন করতে হয়। সুদী এসব কিছুর প্রয়োজন হয় না। আমাদের জানা মতে এটাই হলো ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। ইসলামী ব্যাংক-কে তার সকল ব্যাংকিং কার্যক্রমে, তার সকল লেনদেনে সুদ সম্পূর্ণভাবে পরিহার করে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামী শরিয়াহ মেনে চলতে হয়। বিশেষত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শরিয়াহ পরিপালনের জন্যই এ ব্যাংকব্যবস্থা। সুতরাং শরিয়াহই হলো এর মূল চালিকাশক্তি।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে জানা গেল যে, ইসলামী ব্যাংক একটি শরিয়াহ সুপারভাইজারি বা শরিয়াহ এডভাইজারি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত। শরিয়াহ বোর্ড গঠিত হয় দেশে বরেণ্য ওলামায়ে কিরাম এবং ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি দ্বারা। যাদের ইসলামী শরিয়াহ বিষয়ক প্রগাঢ় জ্ঞান রয়েছে, বিশেষত ইসলামী ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংকিং বিষয়ে পাণ্ডিত্য রয়েছে। আমরা এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া শরিয়াহ বোর্ডের সদস্যদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করছি।
শরিয়াহ সুপারভাইজারি বোর্ড
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণিত Guidlines for Islamic Banking-November-2009, মতে যে কোনো ইসলামী ব্যাংক-কে শরিয়াহ বোর্ড গঠন করতে হবে। উক্ত গাইড লাইন মতে শরিয়াহ সুপারভাইজারি বোর্ডের সদস্যদের নিম্নোক্ত শিক্ষাগত ও নৈতিক যোগ্যতা থাকা আবশ্যক।
১. শিক্ষাগত যোগ্যতা
ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি, ইসলামী আইন, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে কামিল বা দাওরা হাদিস অথবা পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি থাকতে হবে। সাথে সাথে আরবি ভাষায় পর্যাপ্ত দক্ষতাও থাকতে হবে।
২. অভিজ্ঞতা
ক. কমপক্ষে তিন বছরের শিক্ষকতা, কিংবা ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স, ইসলামী আইন, ইসলামী ব্যাংকিং বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
খ. যেকোনো দারুল ইফতা/ফতোয়া বোর্ডে তিন বছরের ইসলামী ব্যবসা-বাণিজ্য/ব্যাংকিং অথবা অর্থনীতি বিষয়ে শরিয়াহর বিধান বিষয়ক ফাতওয়া দানের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
গ. ইসলামী ব্যবসা-বাণিজ্য, ইসলামী ব্যাংকিং, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামিক কমার্সিয়াল জুরিসপ্রুডেন্স, বিষয়ে যেকোনো স্বীকৃত জার্নালে তিনটি প্রবন্ধ অথবা উক্ত বিষয়ে তিনটি প্রকাশিত গ্রন্থ থাকতে হবে।
৩. স্বচ্ছতার রেকর্ড
ক. অবশ্যই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ থাকতে হবে।
খ. কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পরিচালক বা ডাইরেক্টর কর্তৃক বহিস্কৃত কিংবা বরখাস্তকৃত নয় এমন হতে হবে।
৪. আর্থিক স্বচ্ছতা
ক. কোনো অনৈতিক কাজের সাথে/ বিশেষত ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত নয় এমন হতে হবে।
খ. কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডিফল্টার নয় এমন হতে হবে/ কোনো কর পরিশোধের ক্ষেত্রে ডিফল্টার নয় এমন হতে হবে।
৫. স্বচ্ছতা ও সুনাম
ক. কোনো সামাজিক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো অনৈতিকতা ও অসততা ধরা পড়েনি এমন হতে হবে।
খ. কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, বিশেষত অর্থনৈতিক বিষয়ে যথা : জালিয়াতি, প্রতারণা ইত্যাদির সাথে জড়িত নয় এমন হতে হবে।
গ. দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক শিষ্টাচারবিরোধী কোনো কাজের সাথে জড়িত নয় এমন হতে হবে।
ঘ. ধর্মীয় আইনের ব্যাখ্যা দানের ব্যাপারে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (সর্বজন শ্রদ্ধেয় ধর্মীয়) ব্যক্তি কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত নয় এমন হতে হবে।