ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

বিশ্বব্যাপী বাংলার গ্রামীণ ব্যাংক

প্রকাশ: ১৬:৩৫, ৭ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৩৮, ৭ মে ২০২৫

বিশ্বব্যাপী বাংলার গ্রামীণ ব্যাংক

গোটা বিশ্বে বাংলা শব্দ ‘গ্রামীণ’কে পরিচিত করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ৬৪টিরও বেশি দেশে এ মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। গ্রামীন ব্যাংক একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা ক্ষুদ্র ঋণ বা সামাজিক ব্যবসা পরিচালনা করে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ব্যাংকের সদস্যদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামীন ব্যাংক স্বচ্ছতার সঙ্গে গ্রাহকসেবা দিয়ে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মও এ প্রতিষ্ঠানের অডিট করে এসেছে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিমুক্ত বলেই সারা দেশে পরিচিত অর্জন করেছে।    

গ্রামীণ ব্যাংক কী

গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি সতন্ত্র্য ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী, আধা-সরকারি সংস্থা এবং সামাজিক উন্নয়ন ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার জোবরা গ্রামে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালু করেন। তার নিজস্ব ভাবনার ফসল জোবরা গ্রামে ড. ইউনূস ৪২টি পরিবারকে ২৭ মার্কিন ডলার ঋণ দেন। এভাবে দলগতভাবে জোবরা গ্রামের বাসিন্দারা কর্মসংস্থান গড়ে নিতে সক্ষম হয়। ক্ষুদ্র এ ঋণ দেয়ার মাধ্যমে দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনা তিনি লক্ষ করেন।

ড. ইউনূসের চালু করা ক্ষুদ্রঋণের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য এ ঋণে কোনো জামানত প্রয়োজন হয় না। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে পাইলট প্রকল্পটি একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত নয়। দেশের ৫টি অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের একটি গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা এখন বিশ্বের ৬৪টিরও বেশি দেশে অনুকরণ করা হচ্ছে।

‘গ্রামীণ’ নামের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কোম্পানি আইনের সেকশন ২৮ দ্বারা গঠিত। এ আইনের অধীনে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা নেই এবং আইন অনুসারে কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফা নিতে পারেন না। আইনি ভাষায় গ্রামীণ ব্যাংক ‘নন স্টক কোম্পানী লিমিটেড বাই গ্যারান্টি’ ধরনের প্রতিষ্ঠান। ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালকেরা প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দেন কিন্তু কোনো মুনাফা গ্রহণ করতে পারেন না। গ্রামীণ ব্যাংকের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ‘ফর প্রফিট’ কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠানগুলো সংগ্রহ করে।

প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে গ্রামীণ ব্যাংক আলাদা। অন্যান্য ব্যাংকে ঋণ সুবিধার জন্য ক্লান্তিকর ব্যাংকিং প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক প্রথম থেকেই সুবিধাবঞ্চিত নিম্ন আয়ের মানুষ ও গ্রামীণ নারীদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার জন্য কাজ করছে। গ্রামীণ ব্যাংকের কেন্দ্রিয় কর্মকর্তারা নিয়মিত সভা আয়োজন করে ঋণ দিয়ে থাকে। সামষ্টিক ঋণ দেওয়ার এ পদ্ধতি দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের স্বচ্ছলতা গড়তে ব্যাপক অবদান রেখেছে।  

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ব্যাংকটিকে সরকারি মালিকানায় নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় ব্যাংকে সরকারের শেয়ার ছিল ৬০ শতাংশ। তবে প্রতিষ্ঠার সময় আশ্বস্ত করা হয়, ব্যাংকটিকে এক সময় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। ১৯৮৬ সালে অধ্যাদেশ সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানটির ৭৫ শতাংশ শেয়ার বেসরকারি মালিকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে সরকার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সরকারের শেয়ার ২৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। তবে আইন জারি না করায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ২৫ শতাংশ শেয়ার সরকারের কাছে রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগও সরকার দিয়ে থাকে।

সরকার ব্যাংকের জন্মকালে এক কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছিল। এখনো সরকারের মোট শেয়ারের পরিমাণ এক কোটি ২০ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক প্রত্যেকে ৩০ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছে। ফলে সরকারের মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছিল এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা দিয়েছে। তবে সরকার মূলধনের পরিমাণ না বাড়ানোয় বর্তমানে সরকারের মালিকানা কার্যত ৩ শতাংশে নেমে এসেছে।

সরকারের অনুরোধে বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক বিদেশি ঋণ ও অনুদান নিয়েছে। ১৯৯৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আর বিদেশি ঋণ বা অনুদান নেবে না। চালু ঋণ/অনুদানগুলো ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চালু থাকে। এর পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংক আর কোনো বিদেশি ঋণ বা অনুদান নেয়নি।

গ্রামীণ ব্যাংকের মূলধনের উৎস

গ্রামীণ ব্যাংকের মূলধনের প্রধান উৎস সদস্যদের শেয়ার কেনা বাবদ সংগৃহীত অর্থ। গ্রামীণ ব্যাংক শেয়ারপ্রতি ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা দিয়ে থাকে। শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিষ্ঠানটি ডিভিডেন্ট দিয়ে আসছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রত্যেক সদস্য যেকোনো সময় ১০০ টাকা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শেয়ার কিনতে পারেন। ৮৪ লাখ ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৫৫ লাখ ঋণগ্রহীতা এ পর্যন্ত শেয়ার কিনেছেন। এর মাধ্যমে তারা ৫৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনে ৯৭ শতাংশ মূলধনের মালিক হয়েছেন। সরকার ও সরকারি ব্যাংক এক কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার কিনে ৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

এ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক সরকারকে এক কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ারের বিনিময়ে দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের প্রত্যেককে ৩০ লাখ টাকার শেয়ারের বিনিময়ে ৬৩ লাখ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে বাৎসরিক হিসাব অনুমোদন করার সময় বছরের অর্জিত মুনাফা বণ্টনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শেয়ারের মালিকদের মুনাফা বণ্টনের বিষয়টিও বোর্ডের সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়।

মুনাফার পরিমাণ কম হলে গ্রামীণ ব্যাংক যাতে একই হারে মুনাফা বণ্টন করে যেতে পারে, সে জন্য ‘মুনাফা সমতা আনয়ন তহবিল’ গঠন করে। ২০১০ পর্যন্ত এই তহবিলে ৬৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জমা হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের সুদহার

দেশে সরকারি ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাসহ যাবতীয় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সর্বনিম্ন। গ্রামীণ ব্যাংকের সর্বোচ্চ সুদের হার ২০ শতাংশ। এটি সরল সুদ। ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে সুদের হার নির্ধারিত হয়। এ পদ্ধতিতে সুদহার ১০ শতাংশে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) দেশের সব ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সুদের হার নির্ধারণ করেছে ২৭ শতাংশ। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার নির্ধারিত হারের চেয়ে ৭ শতাংশ কম।

গ্রামীণ ব্যাংকের গৃহনির্মাণ ঋণের বার্ষিক সুদের হার ৮ শতাংশ। উচ্চশিক্ষা ঋণের সুদের হার, শিক্ষাজীবনে শূন্য শতাংশ (অর্থাৎ সুদ নেই) এবং শিক্ষা সমাপ্তির পর ৫ শতাংশ। ভিক্ষুক সদস্যদের জন্য প্রদত্ত ঋণের সুদের হার শূন্য শতাংশ (অর্থাৎ সুদ নেই)। বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণের ওপর সর্বনিম্ন সুদ নেয় এবং সঞ্চয়ের ওপর সর্বোচ্চ (সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ) সুদ দেয়।

গ্রামীণ ব্যাংকের জন্মলগ্ন থেকে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের নীতি নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ক্রমান্বয়ে এর পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেহেতু সদস্যরা নিজেরাই সঞ্চয়ের ব্যাপারে অভ্যস্ত ও আগ্রহী হয়ে গেছেন, সে কারণে পরে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের নিয়ম রহিত করা হয়। সেই সময় থেকে সব সঞ্চয় সম্পূর্ণরূপে ঐচ্ছিক। এখন গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো বাধ্যতামূলক সঞ্চয় নেই। গ্রামীণ ব্যাংক গোড়া থেকেই সঞ্চয়ের ওপর ৮.৫% থেকে ১২% চক্রবৃদ্ধি হারে পর্যন্ত সুদ দেয়। উল্লেখ্য, মাইক্রো ফাইন্যান্স রেগুলেটরি অথরিটি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর জন্য সঞ্চয়ের সর্বনিম্ন সুদের হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। সদস্যরা এর ফলে উৎসাহী হয়ে বেশি টাকা সঞ্চয়ে জমা করেন।

অনেকে এককালীন দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ে টাকা জমা রাখেন। সঞ্চয়ের টাকা যখন ইচ্ছা তখন তোলা যায়, জমা দেওয়ার পরদিনই তোলা যায়। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক সদস্যদের মোট সঞ্চয়ের ব্যালান্স সাত হাজার কোটি টাকা। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার ৯৮%, যা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় অত্যন্ত বেশি।

 

গ্রামীণ ব্যাংকের অর্জিত পুরষ্কার

২০০৬ সালে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়াও গ্রামীণ ব্যাংক বহু আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় পুরস্কার অর্জন করেছে, যেমন:

  • আগাখান স্থাপত্য পুরস্কার: ১৯৮৯ (সুইজারল্যান্ড)
  • কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার: ১৯৯২ (বাংলাদেশ)
  • রাজা বোঁদওয়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পুরস্কার: ১৯৯৩ (বেলজিয়াম)
  • তুন আবদুল রাজাক পুরস্কার: ১৯৯৪ (মালয়েশিয়া)
  • স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার: ১৯৯৪ (বাংলাদেশ)
  • বিশ্ব বসতি পুরস্কার: ১৯৯৭ (যুক্তরাজ্য)
  • গান্ধী শান্তি পুরস্কার: ২০০০ (ভারত)
  • পিটার্সবার্গ পুরস্কার: ২০০৪ (যুক্তরাষ্ট্র)
  • এমসিসিআই, ঢাকা-এর শতবর্ষ পদক পুরস্কার: ২০১৪ (বাংলাদেশ)
  • ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন এর ‘বেস্ট করপোরেট সোস্যাল রেসপন্সেবল ব্যাংক পুরস্কার: ২০১৪ (যুক্তরাজ্য)
  • আইসিএমএবি-এর বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার: ২০১৪ (বাংলাদেশ)

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাংকিং পদ্ধতি

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাংকিং সিস্টেম প্রচলিত ব্যাংক থেকে আলাদা। এ ব্যাংকিং সিস্টেমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি : গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যক্রম হলো ক্ষুদ্রঋণ দেয়া। এই ঋণ পরিসেবা দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষকে সহায়তা করার জন্য চালু হয়েছে। সাধারণত ভূমিহীন ও দরিদ্র নারী মিলিয়ে পাঁচ জনের ক্ষুদ্র দল গঠন করে ঋণ নেয়া যায়। এই পদ্ধতিতে দলীয়ভাবে ঋণ নেয়া হয় এবং দলের প্রত্যেক সদস্য ঋণ পরিশোধে একে অপরের সহায়ক হয়।

সমিতিভিত্তিক ঋণ প্রদান : গ্রামীণ ব্যাংক ব্যক্তিগত ঋণের পরিবর্তে সমিতি ভিত্তিক ঋণ প্রদান করে থাকে। একটি দল সাধারণত পাঁচজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় এবং দলের প্রত্যেক সদস্য একজনের গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করে। যদি কোনো সদস্য ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তবে দলের অন্যান্য সদস্যরা তার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

নিয়মিত সভা : গ্রামীণ ব্যাংক সদস্যদের জন্য নিয়মিত সভার আয়োজন করে। এসব সভায় সদস্যরা তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা শেয়ার করেন, ঋণের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন, এবং নতুন সদস্যদের সাথে পরিচিত হন। এর ফলে সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহায়তামূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন : গ্রামীণ ব্যাংক সদস্যদের শুধুমাত্র ঋণ দেয় না, বরং তাদের ব্যবসায়িক উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে। এর মাধ্যমে তারা আরও ভালোভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।

ঋণের নমনীয়তা : গ্রামীণ ব্যাংক ঋণের শর্তাবলীর ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা দেখায়। ফলে দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা এবং পরিমাণ নির্ধারণ করতে সহায়ক হয়।

বিকল্প ব্যাংকিং মডেল : গ্রামীণ ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে একটি বিকল্প মডেল তৈরি করেছে, যেখানে কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদান করা হয়। এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে।

প্রযুক্তির ব্যবহার : গ্রামীণ ব্যাংক প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের ব্যাংকিং সিস্টেমকে আরও উন্নত করেছে, যাতে গ্রাহকরা সহজে তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। মোবাইল ব্যাংকিং ও ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আরও পড়ুন