ব্যাংকার ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:০৮, ১৭ জুন ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় এ দুই খাতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে রেমিট্যান্সে সবচেয়ে বেশি। প্রায় ২৮ শতাংশ। আর রফতানি আয় থেকে প্রবৃদ্ধি এসেছে প্রায় ১০ শতাংশ। তবে দুই খাত থেকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে না। গত ১১ মাস কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুযায়ী, গত ২৯ মে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি বা ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও চলতি অর্থবছরের শুরু তথা ২০২৪ সালের ১ জুলাই রিজার্ভ ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার ছিল। সে হিসাবে গত ১১ মাসে রিজার্ভ না বেড়ে উল্টো ১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। যদিও এ সময়ে কেবল রেমিট্যান্স হিসেবেই দেশে ৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার বেশি এসেছে। আর রফতানি আয় বেশি এসেছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এফডিআই কম এসেছে ৩৭ কোটি ডলার। একই সময়ে ১৮৬ কোটি ডলারের অনুদানও (ফরেন এইড) কম এসেছে। আর মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ কম এসেছে ১৩৬ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ তিন খাতে (এফডিআই, অনুদান ও ঋণ) ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার কম এসেছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বেশি আমদানি করা হয়েছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ও সেবা খাতের ব্যয়ও এ সময়ে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত দুই-তিন বছর ডলারের জন্য যে সঙ্কট ছিল সেটি এখন কেটে গেছে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি ঋণ, সেবার মাসুল ও বকেয়া ঋণপত্রের (এলসি) দায়। এ কারণে রেমিট্যান্স ও প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধির পরও রিজার্ভ বাড়েনি। তবে গত তিন বছরে যেভাবে রিজার্ভের ক্ষয় হয়েছিল, সেটি বন্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ের শুরুতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম৬ অনুযায়ী)। তবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর দায় পরিশোধের পর তা ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। ওই মাসের শেষে মজুদের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে। এর পরের আট মাস তা ১৮ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করে। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে এসে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর দায় পরিশোধের পর আবারো ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন তথা গত ৪ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়ন পদ্ধতিতে ওইদিন মজুদের পরিমাণ ২৬ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছিল।
রিজার্ভের উন্নতি না ঘটলেও রেমিট্যান্সের বড় প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল শেষে বিওপির ঘাটতি মাত্র ৬৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সূচকে ঘাটতি ছিল ৬৫৭ কোটি ডলার। আর ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বিওপির ঘাটতি ৮২২ কোটি ডলার ছিল।
এমএ/