ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ইসলামী ব্যাংক পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে: ওমর ফারুক খান

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭:৫৯, ১৩ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৫৯, ১৩ মে ২০২৫

ইসলামী ব্যাংক পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে: ওমর ফারুক খান

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওমর ফারুক খান বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, বিকাশ ও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানো ছিল বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এটি ছিল দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শরিয়াহভিত্তিক প্রথম ব্যাংক। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের অভূতপূর্ব সাফল্য দেশের কিছু মানুষ মেনে নিতে পারেনি। তবে আশার কথা, ইসলামী ব্যাংক পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ব্যাংকটির ঘুরে দাঁড়ানোকে ‘মিরাকল’ সম্বোধন করেছেন।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি।

ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, গত কয়েক বছরে ইসলামী ব্যাংকের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা অন্য কোনো ব্যাংকে হলে সেটি ঘুরে দাঁড়াতে পারত বলে আমার বিশ্বাস হয় না। বিস্ময়কর হলেও সত্য, ব্যাংকটি অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সিআরআর হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আমাদের ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জমা থাকার কথা। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সিআরআর জমা তো দূরের কথা উল্টো ২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। সে ঘাটতি আমরা এরই মধ্যে কাটিয়ে উঠেছি। চলতি মাসের মধ্যেই আমাদের সিআরআর উদ্বৃত্ত থাকবে। 

তিনি বলেন,  গত বছরের ৫ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের এসএলআর ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। বর্তমানে এসএলআর উদ্বৃত্ত রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার প্রচেষ্টায় গত ১০ মাসে আমাদের ব্যাংকে ১৮ লাখ ৬৮ হাজার গ্রাহক নতুন হিসাব খুলেছেন। আমরা এখন আড়াই কোটি গ্রাহকের ব্যাংক। আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আমরা ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি নতুন আমানত সংগ্রহ করেছি। 

মো. ওমর ফারুক খান বলেন, গত এপ্রিলে আমানত স্থিতি ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল, ফলে আন্তঃব্যাংক লেনদেন বিঘ্নিত হচ্ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দ্রুত আমরা এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন চলতি হিসাব ইতিবাচক হওয়ায় আরটিজিএস, এনপিএসবি ও ক্লিয়ারিং ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। বর্তমানে গ্রাহকরা নির্বিঘ্নে লেনদেন ও যখন খুশি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছেন। বৈদেশিক বাণিজ্য তথা আমদানি-রফতানিও স্বাভাবিক হয়েছে।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে তার বেশির ভাগই বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিনিয়োগের একটি বড় অংশ কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার জটিলতার কারণে এ অর্থ পুনরুদ্ধার অত্যন্ত কঠিন। তবে যে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা গেলে বেশকিছু টাকা আদায় সম্ভব হবে। তবে এটি আইনি প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।

ব্যাংক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকে এলসি খোলার জটিলতা এখন নেই। ৫ আগস্টের আগে তারল্য সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে নতুন এলসি খোলার প্রক্রিয়ায় ধীরতা থাকলেও এখন কেটে গেছে। নিয়মিত এলসি দায়ও পরিশোধ করা হচ্ছে। শিগগিরই ব্যাংক আবার হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে আমার বিশ্বাস।

ওমর ফারুক খান বলেন, ব্যাংকটির দায়িত্ব নেয়ার পর পরই রেমিট্যান্স সংগ্রহে ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষস্থান ধরে রাখতে এবং ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দ্রুত ও নিরাপদে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মাসব্যাপী রেমিট্যান্স সেবা ক্যাম্পেইন শুরু করি। আমানত বাড়ানোর জন্য বিশেষ কার্যক্রম ও খেলাপি বিনিয়োগ আদায়েও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে নিয়মিত সরাসরি ও ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আলোচনা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ সাল হবে এ ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। তবে আমরা যেভাবে কাজ করছি, তাতে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ইসলামী ব্যাংক দৃঢ় অবস্থানে পৌঁছবে বলে আমার বিশ্বাস। ব্যাংককে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, গণমাধ্যম, ব্যাংকের কর্মী, গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা কামনা করছি। কারণ এ ব্যাংকের সঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও অন্তত পাঁচ কোটি মানুষের ভালো-মন্দও জড়িত।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্টের পর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন  মো. ওমর ফারুক খান। দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৬ সালে শরিয়াহভিত্তিক এ ব্যাংকটির কর্মকর্তা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি।

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন