ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ সফর ১৪৪৭

স্বর্ণে বিনিয়োগ করার আগে ভাবুন

নাঈমা সুলতানা

প্রকাশ: ১৪:৩৯, ৪ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৫:০৭, ৪ মে ২০২৫

স্বর্ণে বিনিয়োগ করার আগে ভাবুন

গত মাস থেকে স্বর্ণের দামে ইতিবাচক উন্নতি দেখা গেছে। গত সপ্তাহে দুই দফা সোনার দাম কমলেও তা বিগত যেকোনো সময়ের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। ২২ ক্যারেটের ভরিপ্রতি সোনার দাম বেড়ে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে। দেশের বাজারে এটিই এখন পর্যন্ত সোনার সর্বোচ্চ দাম। প্রশ্ন হচ্ছে সোনার দাম হঠাৎ করে এত বাড়ছে কেন? আরও কত বাড়তে পারে সোনার দাম? অনেকের মনে প্রশ্ন, এখন স্বর্ণে বিনিয়োগ করা লাভজনক হবে কি?

আন্তর্জাতিক বাজারে দর বাড়ার কারণে গত সপ্তাহে ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৬ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। ২১ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, আর ১৮ ক্যারেট মানের সোনার  ১ লাখ ৪৫ হাজার ১৬৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কেন বাড়ছে? মূলত বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ডলারের মান পতনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে এক ধরনের শংকা দেখা দিয়েছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ডলার ধরে রাখা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বহুদিন ধরে পরীক্ষিত নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত স্বর্ণই হয়ে উঠেছে তাদের প্রথম পছন্দ। এটা বিশ্বব্যাপী দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ চর্চায় পরিণত হয়েছে। যখনই মার্কিন ডলার দুর্বল হয় তখন স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে। আবার ডলার যদি বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী হয় তখন স্বর্ণের দাম কমতে থাকে। এই মুহূর্তে ডলারের মান তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, যা স্বর্ণের দাম বাড়াতে সহযোগিতা করছে।  বিশেষ করে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অব্যাহতভাবে স্বর্ণ কিনছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন এখন মার্কিন ডলারের ‍উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হতে চায়। তাই তারা স্বর্ণে রিজার্ভ বাড়িয়ে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিকল্প ভিত্তি তৈরি করতে চায়। ফলে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে, যা এর দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আগ্রহের ফলে স্বর্ণের বাজারে যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদে এর দাম বাড়তির দিকে রাখতে পারে। সম্প্রতি গোল্ডম্যান স্যাকস এক পূর্বাভাসে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৭০০ ডলার হতে পারে বলে জানিয়েছে। ইতোমধ্যে এ দর ৩ হাজার ৪৮০ ডলার ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় র্স্বর্ণে বিনিয়োগ করা কতটা লাভজনক হতে পারে? যেহেতু স্বর্ণের দাম বাড়তে পারে এ ধরনের পূর্বাভাস রয়েছে, তাই এ সময়ে স্বর্ণ কিনে কেউ কেউ লাভ করতে পারবেন। তবে এর অন্য দিকও রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্বর্ণে বিনিয়োগ একটি 'নিরাপদ' বিনিয়োগ, তার মানে এই নয় যে এ ধরনের বিনিয়োগে কোনো ঝুঁকি নেই। স্বর্ণের দাম বাড়বে এই আশায় বিনিয়োগ করাটা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল বলেই তারা মনে করেন। কারণ একবার বিশ্ব অর্থনীতিতে স্বস্তি চলে আসলে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে গেলে স্বর্ণের দাম কমে যেতে পারে।  তাই স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে চাইলে বাজার পরিস্থিতি বুঝে ধাপে ধাপে এগোনো উচিত। বিশেষ করে যেহেতু স্বর্ণে তাৎক্ষণিক লভ্যাংশ মেলে না, ফলে দীর্ঘমেয়াদে কেউ বিনিয়োগ করলে তা লাভজনক হতে পারে। তাছাড়া স্বর্ণ কিনতে গেলে তাতে ভ্যাট রয়েছে। আবার বিক্রি করতে গেলে বাজারে যে দাম, তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে হয়। স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে গেলে এসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। সর্বোপরি, স্বর্ণ কিনে তার নিরাপত্তা রক্ষা করার কথা সবার আগে ভাবতে হবে। যেন স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে গিয়ে আপনার আম-ছালা দুটোই হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুন