ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ সফর ১৪৪৭

আল্লাহ সবকিছুর হিসাব নিবেন

ব্যাংকার ডেস্ক

প্রকাশ: ০১:৪২, ১১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ০১:৪৫, ১১ জুলাই ২০২৫

আল্লাহ সবকিছুর হিসাব নিবেন

প্রতীকী ছবি

আল্লাহ মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দিয়েছেন জীবন বিধান মহাগ্রন্থ আল কুরআন। সে সঙ্গে রয়েছে রাসুল (স.) এর জীবন আদর্শ। শেষ বিচার দিবসে আল্লাহ আমাদের সবকিছুর হিসাব নিবেন। সেদিন প্রত্যেক মানুষকে তার পার্থিব জীবনের কাজকর্মের জন্য আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। সেখানে ভালো ও মন্দের বিচার করা হবে। কেউ তার কৃতকর্মের হিসাব এড়িয়ে যেতে পারবে না। যারা সৎকর্ম ও নেক আমল করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। আর যারা অবাধ্য হয়ে নিজের ওপর জুলুম করেছে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি। 

কুরআন এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন- 

‘পার্থিব ভোগবিলাসের মোহে যারা আচ্ছন্ন, বিনোদন-খেলা-তামাশাকেই যারা নিজেদের ধর্ম বা জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আত্মপ্রতারণায় ভুগছে, তুমি তাদের সঙ্গ বর্জন করো। তুমি ওদের কোরআনের বাণী শোনাও ও উপদেশ দাও। আর সতর্ক করে দাও সেদিন সম্পর্কে, যেদিন ওদের সকল কৃতকর্মের হিসাব নেয়া হবে। আর তখন আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার জন্যে ওদের কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকবে না, সেদিন কোনো মুক্তিপণও গ্রহণ করা হবে না। সত্য অস্বীকার করার কারণে ওরা তখন পান করবে ফুটন্ত আঠালো পানীয় আর ভোগ করবে কঠিন শাস্তি।’ (সূরা আনআম, আয়াত ৭০)

‘অবশ্যই ওদের সবাইকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে এবং সকল কাজের হিসাব দিতে হবে আমারই কাছে।’ (সূরা গাশিয়াহ, আয়াত ২৫-২৬)

‘মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সবই আল্লাহর। তোমাদের মনে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ অবশ্যই সবকিছুর হিসাব নেবেন। তারপর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন বা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৪)

‘মানুষ কি মনে করে (কৃতকর্মের হিসাবনিকাশ ছাড়াই) তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেয়া হবে?’ (সূরা কিয়ামা, আয়াত ৩৬)

‘সেই দিন তোমরা মহাবিচারের সম্মুখীন হবে। তোমাদের কোনোকিছুই গোপন থাকবে না। তখন যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে আনন্দিত হবে। বলবে, এই নাও আমার আমলনামা পড়ে দেখ। আমি জানতাম যে, একদিন আমাকে আমার প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হবে!সুতরাং সে থাকবে উপচে পড়া সুখের মধ্যে সুউচ্চ জান্নাতে, সেখানে গুচ্ছ গুচ্ছ রকমারি ফল ঝুলে থাকবে হাতের নাগালের মধ্যে। (আল্লাহর এই রহমতপ্রাপ্তদের বলা হবে) দুনিয়ায় তুমি যে সৎকর্ম করেছিলে, তারই পুরস্কার হিসেবে পানাহার করো পূর্ণ তৃপ্তির সঙ্গে।’ (সূরা হাক্কা, আয়াত ১৮-২৪)

‘হে (পাপভারাক্রান্ত) জ্বীন ও মানুষ! একদিন আমি তোমাদের সবারই হিসাব নেব। অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ (সূরা আর রাহমান, আয়াত ৩১-৩২)

‘যে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে, কোনো সনদ ছাড়াই অন্য উপাস্যের উপাসনা করে, তার হিসাব তার প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। এ ধরনের সত্য অস্বীকারকারীরা কখনো সফল হবে না!’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত ১১৭) 

‘যারা সত্যের বাণীবাহক আর যারা সত্যের অনুসারী তারাই আল্লাহ-সচেতন। তাদের কাঙ্ক্ষিত সবকিছুই তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে। এটাই সৎকর্মশীলদের পুরস্কার। আল্লাহ তাদের হিসাব থেকে সকল ভুলভ্রান্তি, পাপ মুছে দেবেন এবং তাদের সৎকর্মের অনুপাতে পুরস্কৃত করবেন।, (সূরা জুমার, আয়াত ৩৩-৩৫)

যাদের হিসাব হবে খুব কঠিন

‘(যখনই) তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন, তখন (একদা শুষ্ক) নদীতটগুলো যার যার আয়তন অনুসারে পানিতে ভরে যায়। স্রোতধারা ফেনা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অলংকার ও তৈজসপত্র বানানোর জন্যে গলানো ধাতুর ওপরও ওঠে এরকম ফেনা। এমনিভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত দেন। ফেনা বা আবর্জনা ভেসে চলে যায় আর যা মানুষের জন্যে কল্যাণকর তা জমিনে থেকে যায়। যারা তাদের প্রতিপালকের নির্দেশ ভালোভাবে পালন করে আর যারা তা পালন করে না, তাদের উপমা আল্লাহর কাছে এরকমই। (যারা আল্লাহর আদেশ পালন করে না) তারা যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পত্তি, (এমনকি) দ্বিগুণ সম্পত্তির অধিকারী হতো, তা-ও (মহাবিচার দিবসে) তারা মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চাইত। ওদের হিসাব হবে খুব কঠিন। ওদের নিবাস হবে জাহান্নাম। আর তা কতই না নিকৃষ্ট নিবাস!’ (সূরা রাদ, আয়াত ১৭-১৮)

‘আমি প্রত্যেক মানুষের আমলনামাকে (কর্মবিবরণের রেকর্ড) তার গলার সাথে যুক্ত করেছি। মহাবিচার দিবসে এ রেকর্ড তার সামনে দৃশ্যমান করে বলব, ‘পড়ো তোমার আমলনামা। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাবনিকাশের জন্যে যথেষ্ট।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ১৩-১৪)

‘মানুষের হিসাবনিকাশের সময় আসন্ন (কিন্তু সত্য অস্বীকারকারীরা এখনো তা বুঝতে পারছে না)। তাই ওরা উদাসীন হয়ে মুখ ফিরিয়ে আছে।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১)

‘সেদিন যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাবনিকাশ হবে খুবই সহজ। সে তার প্রিয়জনদের কাছে আনন্দিতচিত্তে ফিরে যাবে।’ (সূরা ইনশিকাক, আয়াত ৭-৯)

রাসুল (স.) হাদিসে কী বলা আছে

মহাবিচার দিবসে প্রথমেই হিসাব নেয়া হবে নামাজের। নামাজ ঠিক থাকলে সে সফলকাম বলে গণ্য হবে। এখানে হিসাব না মিললে সে ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যর্থ হবে। ফরজ নামাজে যদি কোনো ঘাটতি থাকে, তবে খোঁজ নেয়া হবে নফল নামাজ আছে কিনা। নফল থাকলে তা দিয়ে ফরজের হিসাব মেলানোর সুযোগ দয়াময় দেবেন। - আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী

শেষ বিচারের দিনে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে—১. সময় কীভাবে ব্যয় করেছ। ২. মানসিক ও দৈহিক শক্তি কী কাজে ব্যয় করেছ। ৩. সম্পদ কীভাবে অর্জন করেছ। ৪. কীভাবে সম্পদ ব্যয় করেছ এবং ৫. যা সত্য বলে জেনেছ, তা কতটুকু অনুসরণ করেছ। - আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); তিরমিজী

আল্লাহ তোমার চেহারা বা ধনসম্পত্তির দিকে তাকাবেন না, তিনি দেখবেন তোমার অন্তর আর হিসাব নেবেন তোমার কর্মের। -আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম, ইবনে মাজাহ

জনপ্রশাসনের কোনো পদে কেউ নিযুক্ত হলে তাকে তার এখতিয়ারে সংগৃহীত ছোট-বড় সবকিছুরই হিসাব দিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে তা থেকে সে শুধু অনুমোদিত পরিমাণই গ্রহণ করতে পারবে। যা নেয়া থেকে তাকে বারণ করা হবে, তা কখনোই নেবে না। (যদি নেয়, তবে সে আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে গণ্য হবে।) - আদী ইবনে উমাইরাহ (রা); মুসলিম, আবু দাউদ

যদি কেউ অন্যের ওপর জুলুম করে, তবে জীবদ্দশায়ই যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়। তা না হলে মহাবিচার দিবসে তার জুলুমের বিনিময়ে সমপরিমাণ নেকি কেটে নেয়া হবে। যদি তার কোনো নেকি না থাকে, তবে নির্যাতিতের গুনাহ থেকে সমপরিমাণ গুনাহ জুলুমকারীর হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। - আবু হুরায়রা (রা); বোখারী

বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (স.) বলেছেন- হে মানুষ! প্রত্যেককেই শেষবিচারের দিনে সব কাজের হিসাব দিতে হবে। অতএব সাবধান হও!

তাই আল্লাহকে অন্তরে ভয় করে কুরআন ও হাদিসের আলোকে দুনিয়ায় জীবনযাপন করতে হবে। 

আরও পড়ুন