প্রকাশ: ১৪:৫৯, ২৭ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৫:০৪, ২৭ আগস্ট ২০২৫
প্রতীকী ছবি
ধৈর্য বা সবর। এর অর্থ সহিষ্ণুতা, সংযম, ত্যাগ স্বীকার। ছোট্ট একটি শব্দ হলেও এর ব্যাপ্তি বিশাল। জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধৈর্যই হচ্ছে সাফল্যের মূলমন্ত্র। সবর মানে সক্রিয় কর্মতৎপরতা এবং নীরব অপেক্ষা। সবর মানে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ইতিবাচক থেকে নীরব সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। সত্যিকার অর্থে সবর করতে পারলে জীবনের আপাত অনেক অসম্ভবও সম্ভব হতে পারে। কঠিন প্রতিকূলতা রূপান্তরিত হতে পারে স্বতঃস্ফূর্ত আনুকূল্যে। সাফল্যের প্রাকৃতিক সূত্র অনুসারেই তখন কাজের ভিত্তিতে ফল আসতে শুরু করবে। ধৈর্য ধারণকারীর সাফল্য সুনিশ্চিত। আল্লাহ বলেছেন তিনি ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে থাকেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার সঙ্গে থাকবেন, তার সফলতা অনিবার্য। সবরকারীদের জন্য পরকালেও রয়েছে মহান স্রষ্টার প্রতিশ্রুত মহাপুরস্কার।
ধৈর্য এমন একটি মানবিক গুণ যা জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ, বন্ধুর পথ ও বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষকে সাহসী করে তোলে। এটি কেবল সহনশীলতা নয়, বরং সময় ও পরিস্থিতির অপেক্ষায় স্থির থাকার অদম্য শক্তি। ধৈর্য আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায় এবং চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরলে সফল্য অনিবার্য। এই গুণের চর্চা মানুষকে পরিণত, শান্ত ও বিচক্ষণ করে তোলে। মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম হলো ধৈর্য।
ধৈর্যকে ইসলামে সাধারণভাবে তিনভাবে ভাগ করা যায়: আল্লাহর ইবাদতে ধৈর্য— যেমন: নিয়মিত নামাজ আদায়, সিয়াম পালন ও দান-সাদাকা, ইত্যাদি অভ্যাস কঠিন হলেও ধৈর্য সহকারে এতে লেগে থাকতে হয়।
কষ্ট ও পরীক্ষায় ধৈর্য — জীবনের নানা সংকটে ধৈর্য বজায় রাখা মানবআত্মাকে পরিশুদ্ধ করে তোলে।
পাপ থেকে বিরত থাকতেও ধৈর্য— যেমন: রাগ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা, হারাম ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা এগুলো একটি দৃঢ় আধ্যাত্মিক সংকল্প ও ধৈর্যের পরিচয়।
কুরআনে ধৈর্যের দৃষ্টান্ত
হজরত আইয়ুব (আ.): ছিলেন অসীম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মূর্ত প্রতীক। আল্লাহ তাকে কঠিন রোগ, সম্পদহানি এবং সন্তান হারানোর মতো পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই আত্মবিশ্বাস হারাননি। এই কঠিন সময়েও তিনি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অটুট রেখেছিলেন। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার কারণে আল্লাহ তাকে রোগমুক্ত করেন, সম্পদ ফিরিয়ে দেন এবং তাঁর পরিবারকে আবার একত্রিত করে দেন।
হজরত ইউসুফ (আ.) : যিনি তার ভাইদের ঈর্ষার শিকার হয়ে কুয়োতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং পরে মিশরে দাস হিসেবে বিক্রি হন। মিথ্যে অপবাদে কারাবাস সত্ত্বেও বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করেন। অসাধারণ মেধা ও প্রজ্ঞায় তিনি মিশরের বাদশাহর পরে দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন এবং পরে সেখানে শাসনভার লাভ করেন। পরিবারের সবাইকে ফিরে পান।
হজরত ইউনুস (আ.) : আল্লাহ ইউনুস (আ.)-কে ইরাকের নিনোভে শহরের অধিবাসীদের কাছে নবী হিসেবে পাঠান। তিনি শহরবাসীকে আল্লাহর একত্ববাদের পথে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু তার কওম তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি এবং তাকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে, ইউনুস (আ.) ক্রোধান্বিত হয়ে শহর ত্যাগ করেন এবং রাগ করে নৌকাযোগে যাচ্ছিলেন। নৌকা ঝড়ের কবলে পড়লে যাত্রীরা লটারির মাধ্যমে একজনকে সাগরে নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়। লটারিতে তিনবার ইউনুস (আ.)-এর নাম ওঠে এবং তাকে সাগরে নিক্ষেপ করা হয়। সাগরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর একটি বিশাল মাছ তাকে গিলে ফেলে। মাছের পেটে বন্দি অবস্থায় তিনি আল্লাহর কাছে ধৈর্য ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাওবা করেন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন এবং মাছটিকে তীরে এসে ইউনুস (আ.)-কে বমি করে ফেলার নির্দেশ দেন। মাছটি ইউনুস (আ.)-কে তীরে নিক্ষেপ করে এবং তিনি সুস্থ হয়ে পুনরায় নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে যান।
এই তিনটি ঘটনা পবিত্র কুরআনে বিপদে,কষ্টে রোগ শোকে পড়ে ধৈর্য বা সবর করার অনুকরণীয় উদাহরণ।
এ জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র। তাই নানাভাবে মানুষের জীবনে বিভিন্নমুখী পরীক্ষা আসবে। নানারকম বিপদাপদ আসবে। এ পরীক্ষায় ও বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে কুরআনে নানা জায়গায় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, আল্লাহতায়ালা কুরআনে নব্বই স্থানে সবর বা ধৈর্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। হাদিস শরিফে সবরকে জ্যোতি বা আলো বলা হয়েছে।
কুরআনে ধৈর্য সম্পর্কে আল্লাহ যা বলেছেন-
আলাপ-আলোচনায় কেউ যদি আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেয়, তবে তুমি শুধু সমপরিমাণ জবাব দিতে পারো, তবে (উত্তেজনা ও বিতর্ক পরিহার করে) ধৈর্যধারণ করাই উত্তম। ধৈর্যশীলদের জন্যই রয়েছে কল্যাণ। (সূরা আন-নহল, আয়াত ১২৬)
হে বিশ্বাসীগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই থাকেন। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)
নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনেককে ভয়, ক্ষুধা, জানমাল ও শ্রমের ফল বিনষ্ট করে অর্থাৎ বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করব। তবে এ বিপদের মধ্যে যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের সুসংবাদ দাও। ১৫৬. ধৈর্যশীলরা বিপদে পড়লে বলে, ‘আমরা আল্লাহর। তাঁর কাছ থেকে এসেছি। তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৫-১৫৬)
হে বিশ্বাসীগণ! (প্রতিকূলতার মোকাবেলায়) ধৈর্যশীল হও! পরস্পরের সঙ্গে সহনশীলতা ও ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো। সদাপ্রস্তুত থাকো সত্য রক্ষায়, সত্য অনুসরণে। সবসময় আল্লাহ-সচেতন থাকো। তাহলেই তোমরা লাভ করবে অনন্ত কল্যাণ। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ২০০)
হে বিশ্বাসীগণ! প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় সবসময় দৃঢ় থাকবে এবং বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করবে, তাহলেই তোমরা সফল হবে। ৪৬. আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করবে। কখনো পারস্পরিক কোন্দলে লিপ্ত হবে না। যদি হও তবে তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হবে। তোমরা সকল প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যে অবিচল থাকবে। আল্লাহ সবসময় ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন। (সূরা আনফাল, আয়াত ৪৫)
(হে নবী! সত্য অস্বীকারকারীরা যা-ই বলুক) তুমি ধৈর্যের সঙ্গে তোমার কাজ করে যাও। সবসময় মনে রেখো, প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যধারণের শক্তিও আল্লাহরই দান। ওদের আচরণে তুমি দুঃখ পেয়ো না। ওদের চক্রান্তে বা মিথ্যা ও অপ্রাসঙ্গিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনায় মন খারাপ কোরো না। (সূরা আন-নহল, আয়াত ১২৭)
স্মরণ করো ইসমাইল, ইদরিস ও জুলকিফল-এর কথা! তারা ছিল ধৈর্যশীল ও সৎকর্মশীল। তারা ছিল আমার অনুগ্রহভাজনদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৫)
যা হোক, আপাতত আল্লাহ তোমাদের দায়িত্ব লাঘব করে দিয়েছেন। আল্লাহ জানেন, তোমাদের দুর্বলতার কথা। তাই আল্লাহর অনুগ্রহে তোমাদের মধ্যে বিপদে ধৈর্যশীল ও প্রত্যয়ী ১০০ জন প্রতিপক্ষ ২০০ জনের ওপর বিজয়ী হবে আর এক হাজার জন বিজয়ী হবে দুই হাজার জনের ওপর। বিপদে যারা ধৈর্যশীল, আল্লাহর অনুগ্রহ তাদের সঙ্গেই থাকে। (সূরা আনফাল, আয়াত ৬৬)
অতএব, (হে বিশ্বাসীগণ!) প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যধারণ করো, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রসুলগণ। আর (যারা এখনো সত্য অস্বীকার করছে) ওদের দ্রুত বিনাশের জন্য তাড়াহুড়ো কোরো না। ওদের যে-বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল, যেদিন ওরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন ওদের মনে হবে দুনিয়ায় যেন ওরা অবস্থান করেছে মাত্র একটি মুহূর্ত। সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, দুরাচারী সম্প্রদায়কেই ধ্বংস করা হবে। (সূরা আহকাফ, আয়াত ৩৫)
আর হে নবী! তোমার ওপর যে বাণী ও বিধিবিধান নাজিল হয়েছে, তুমি তা অনুসরণ করো। আর আল্লাহ তাঁর ফয়সালা না করা পর্যন্ত সকল বিপদে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোত্তম বিচারক! (সূরা ইউনুস, আয়াত ১০৯)
(হে নবী!) গায়েবের এ সংবাদ আমি ওহীর মাধ্যমে তোমাকে জানাচ্ছি, যা তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়ও জানত না। তাই (নূহের মতো) ধৈর্যধারণ করো। শুভ পরিণতি তো শুধু আল্লাহ-সচেতনদের জন্যেই। (সূরা হুদ, আয়াত ৪৯)
মুসা তার সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলল, আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো এবং সকল প্রতিকূলতায় ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয়ই এ জমিন আল্লাহর। তিনি যাকে চাইবেন, তাকেই এর উত্তরাধিকারী বানাতে পারেন। আর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তো আল্লাহ-সচেতনদের জন্যেই। (সূরা আরাফ, আয়াত ১২৮)
যারা (বিশ্বাস স্থাপনের কারণে) নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করেছে, আল্লাহর পথে প্রাণান্ত প্রয়াস চালিয়েছে, বিপদ মোকাবেলায় ধৈর্যের সঙ্গে লেগে থেকেছে, তোমার প্রতিপালক তাদের অবশ্যই ক্ষমা করবেন, পরমদয়া করবেন। (সূরা আন-নহল, আয়াত ১১০)
অতএব (হে নবী!) সকল প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যে অটল থাকো। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি (মহাবিচার দিবস) সত্য। যারা বিশ্বাসে দৃঢ় নয়, তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে। (সূরা রুম, আয়াত ৬০)
হে নবী! তোমার প্রতিপালকের সিদ্ধান্তের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করো। তুমি আমার চোখের সামনেই আছ। অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো ঘুম থেকে উঠে, রাতে আর তারকাদের অস্তগমনের পর। (সূরা তুর, আয়াত ৪৮)
(জীবনে) ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের পুরস্কার হিসেবে তারা জান্নাতে সুউচ্চ অবস্থানে উন্নীত হবে। সেখানে তাদের সালামসহকারে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হবে। (সূরা ফোরকান, আয়াত ৭৫)
রাতের আঁধারে কাঁদতে কাঁদতে ওরা ওদের পিতার কাছে এলো। বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতায় মত্ত ছিলাম। ইউসুফকে রেখে গিয়েছিলাম আমাদের মালপত্রের কাছে। এ সময়ে নেকড়ে এসে তাকে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু (আমরা জানি) আপনি আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যি বলছি।’ এরপর ওরা নকল রক্ত মাখানো ইউসুফের জামা পেশ করল। (কিন্তু ইয়াকুব) বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, না (তোমাদের কথা ঠিক নয়), তোমরা এক মনগড়া কাহিনী বলছ। অবশ্য এখন আমার পক্ষে ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয় (কারণ বিপদে ধৈর্যধারণ করা আল্লাহর দৃষ্টিতে উত্তম)। আর তোমরা যা বলছ, সে ব্যাপারে আমি শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করছি। (সূরা ইউসুফ, আয়াত ১৬)
(তারা ফিরে এসে তাদের পিতার কাছে সব ঘটনা বলল। সব শুনে) পিতা আর্তনাদ করে বলল, ‘না! আসলে তোমরা এক মর্মান্তিক ঘটনার মনগড়া কাহিনী বানিয়ে নিয়ে এসেছ! তবে আমি জানি, বিপদে ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়! আল্লাহ তাদের সবাইকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনতে পারেন। অবশ্যই তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়!’(সূরা ইউসুফ, আয়াত ৮৩)
তারা সমস্বরে বলে উঠল, ‘তবে কি তুমিই ইউসুফ?’ তখন সে পরিচয় দিল, ‘হাঁ! আমিই ইউসুফ আর এ আমার ভাই। আল্লাহ আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। নিশ্চয়ই কেউ যদি আল্লাহ-সচেতন থাকে এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করে তবে আল্লাহ তার কর্মফল নষ্ট হতে দেন না।’(সূরা ইউসুফ, আয়াত ৯০)
নিশ্চয়ই সমর্পিত পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়ী পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনসংযমী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারী পুরুষ ও নারীদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা আহজাব, আয়াত ৩৫)
হে নবী! বিশ্বাসীদেরকে রণে (মৃত্যুভয়কে জয় করতে) উদ্বুদ্ধ করো। তাহলে চূড়ান্ত প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যশীল ও প্রত্যয়ী ২০ জন ২০০ জনের ওপর বিজয়ী হতে পারবে। আর ১০০ জন বিজয়ী হবে হাজার জন সত্য অস্বীকারকারীর ওপর। আর সত্য অস্বীকারকারীরা এ বাস্তবতাকে কখনো বুঝতে পারবে না। (সূরা আনফাল, আয়াত ৬৫)
বিশ্বাসীরা প্রার্থনা করে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমাকে বিশ্বাস করেছি। সুতরাং তুমি আমাদের পাপমোচন করো, ক্ষমা করো এবং আগুনের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা করো।’ ১৭. এরা (এক) বিপদে ধৈর্যশীল, (দুই) সত্যবাদী, (তিন) অনুগত, (চার) দাতা এবং রাতের শেষ প্রহরে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬)
অতএব (হে বিশ্বাসীগণ!) ওরা যত কিছুই বলুক, (উত্তেজিত না হয়ে) তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো রাতের একাংশে এবং ফরজ নামাজের পরও। (সূরা কাফ, আয়াত ৩৯)
সকল প্রতিকূলতায় ধৈর্যধারণ করো। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের কর্মফল কখনো বিনষ্ট করেন না। (সূরা হুদ, আয়াত ১১৪)
আর আমি ওদের জায়গায় দুর্বল বলে গণ্য সম্প্রদায়কে উত্তরাধিকার দান করি। তারা পায় আমার আশীর্বাদপুষ্ট রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চল। প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যধারণ করায় বনি ইসরাইলের প্রতি আমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করি। আর ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের নির্মিত প্রাসাদ ও দম্ভ মাটিতে মিশিয়ে দেই। (সূরা আরাফ, আয়াত ১৩৭)
বলো, (আল্লাহ বলেছেন) ‘হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা আল্লাহ-সচেতন হও! যারা পার্থিব জীবনে সৎকর্ম করে, চূড়ান্ত কল্যাণ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য’ আর মনে রেখো, ‘আল্লাহর দুনিয়া অনেক বড়।’ নিশ্চয়ই যারা প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যধারণ করে, তাদের অশেষ পুরস্কার দেয়া হবে। (সূরা জুমার, আয়াত ১০)
হে আমার সন্তান! নামাজ কায়েম করো। অন্যকে সৎকর্মে অনুপ্রাণিত করো ও অসৎকর্মে নিরুৎসাহিত করো। আর বিপদ-মুসিবতে ধৈর্যধারণ করো। এটাই প্রত্যয়ী মানুষের কাজ। ১৮. কখনো অহংকারবশত মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না, মাটিতে গর্বিতভাবে পা ফেলো না। উদ্ধত অহংকারীকে নিশ্চয়ই আল্লাহ অপছন্দ করেন। (সূরা লোকমান, আয়াত ১৭)
তাঁর মহিমার অন্যতম নিদর্শন সমুদ্রে ভাসমান পাহাড়সম জাহাজগুলো। ৩৩. তিনি ইচ্ছা করলে বায়ুপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারেন। তখন জাহাজগুলো পানির ওপর অচল দাঁড়িয়ে থাকবে। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও শোকরগোজার মানুষের জন্য শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে। (সূরা শুরা, আয়াত ৩২-৩৩)
বাস্তবতা হচ্ছে, যখন মানুষকে অনুগ্রহ-সম্পদ দান করার পর তা ফিরিয়ে নিই, তখন সে হতাশায় ভেঙে পড়ে এবং (নেতিবাচকতা ও) অকৃতজ্ঞতায় ডুবে যায়। ১০. দুঃখকষ্টে নিমজ্জিত করার পর যখন তাকে অনুগ্রহ-সম্পদ দান করি, তখন সে বলে, আমার বিপদ-আপদ কেটে গেছে। সে অর্থহীন ফুটানি ও উল্লাসে মেতে ওঠে, হয়ে ওঠে অহংকারী। ১১. (অধিকাংশ মানুষই এরকম।) তাই শুধু সৎকর্মশীল ও বিপদে ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা হুদ, আয়াত ৯-১১)
ছেলে যখন পিতার কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার মতো বড় হলো, তখন ইব্রাহিম একদিন তাকে বলল, ‘হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে কোরবানি দিতে হবে। এখন বলো, এ ব্যাপারে তোমার মত কী? ইসমাইল জবাবে বলল, ‘হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা-ই করুন। ইনশাল্লাহ! (আল্লাহর ইচ্ছায়) আপনি আমাকে বিপদে ধৈর্যশীলদের একজন হিসেবেই পাবেন।’(সূরা সাফফাত, আয়াত ১০২)
তুমি কি লক্ষ্য করো না যে, আল্লাহর অনুগ্রহেই নৌযানগুলো সমুদ্রে বিচরণ করে। এ-তো তাঁর মহিমার নিদর্শন। অবশ্যই এতে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ মানুষের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। যখন উত্তাল তরঙ্গে নৌযান দুলতে থাকে, তখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে ওরা হৃদয়ের গভীর থেকে আল্লাহকে ডাকে, আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু যখন তিনি ওদের উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন, তখন ওদের অনেকেই (বিশ্বাস আর শিরকের) মাঝপথে আটকে যায়। আসলে কেবল মিথ্যাচারী ও অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে। (সূরা লোকমান, আয়াত ৩১)
তোমরা আল্লাহর সঙ্গে করা অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি কোরো না। আল্লাহর কাছে যা আছে, কেবল তা-ই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে! তোমাদের কাছে যা আছে, সবই ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে যা আছে, তা স্থায়ী। যারা ধৈর্যের সাথে লেগে থাকবে, আমি তাদের কাজের উত্তম পুরস্কার দেবো। (সূরা আন-নহল, আয়াত ৯৫)
কিন্তু (দিন হোক বা রাত) সবসময়ই তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিবেদিত থাকো। ৯. তিনি উদয়াচল ও অস্তাচলের মালিক। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। অতএব তাঁকেই তুমি তোমার একক কর্মবিধায়করূপে গ্রহণ করো। ১০. সত্য অস্বীকারকারীরা তোমার বিরুদ্ধে যা-ই বলুক, তুমি ধৈর্য ধরো এবং সৌজন্যসহকারে ওদের এড়িয়ে চলো। (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত ৮-১০)
হে চাদরাবৃত! ২-৭. ওঠো! মানুষকে সতর্ক করো আর তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ (পরিমণ্ডল) পরিচ্ছন্ন-পবিত্র রাখো। আর অপরিচ্ছন্নতা-অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো। বেশি পাওয়ার আশায় কাউকে কিছু দিও না আর তোমার প্রতিপালকের পথে ধৈর্যের সাথে লেগে থাকো। (সূরা মুদাসসির, আয়াত ১)
অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্য ধরো। তুমি সেই মাছওয়ালার (ইউনুস) মতো অধৈর্য হয়ো না, যে ক্ষুব্ধ হয়ে (মাছের পেটে) বিপন্ন অবস্থায় সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করেছিল। ৪৯. তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ তার কাছে না পৌঁছলে সে লাঞ্ছিত হয়ে খোলা বালুকাময় মাঠে পড়ে থাকত। ৫০. কিন্তু তার প্রতিপালক তাকে আবার মনোনীত করলেন এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করলেন। (সূরা কলম, আয়াত ৪৮-৫০)
সত্য অস্বীকারকারীরা যখন এই কোরআনের সতর্কবাণী শোনে, তখন তারা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকায় যেন তোমাকে খুন করে ফেলবে! আর বলে, ‘এ-তো এক বদ্ধ উন্মাদ।’ (অতএব তুমি ধৈর্য ধরো!) ৫২. কারণ এ কোরআন তো সমগ্র মানবজাতির জন্য উপদেশ! (সূরা কলম, আয়াত ৫১)
আমি তোমার ওপর কোরআন নাজিল করেছি ধাপে ধাপে, পর্যায়ক্রমে। ২৪. অতএব তুমি ধৈর্যের সঙ্গে তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষা করো। ওদের দলভুক্ত কোনো পাপিষ্ঠ বা সত্য অস্বীকারকারীর কথা শুনো না। ২৫. আর তুমি সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করো। ২৬. তুমি রাতে তাঁর কাছে সেজদায় অবনত হও। আর রাতে দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা দাহর, আয়াত ২৩-২৬)
সময়ের শপথ! (তাকাও মহাকালের দিকে। তাহলেই বুঝতে পারবে) ২-৩. বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল ছাড়া প্রতিটি মানুষ অবশ্যই ক্ষতিতে নিমজ্জিত। বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে পরস্পরকে সত্যের পথে উদ্বুদ্ধ করে। আর (প্রতিকূলতার মুখে) ধৈর্যের (সঙ্গে পরিস্থিতি পরিবর্তন ও আত্মশুদ্ধির জন্য নিরলস প্রয়াস চালানোর) উপদেশ দেয়। (সূরা আসর, আয়াত ১-৩)
পূর্ব বা পশ্চিমমুখী হওয়ার মধ্যে কোনো পুণ্য নেই। পুণ্য রয়েছে (এক) আল্লাহ, আখেরাত, ফেরেশতা, সকল কিতাব ও নবীদের ওপর বিশ্বাসে। (দুই) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, অসহায়, মুসাফির ও সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থদানে। (তিন) নামাজ কায়েম ও যাকাত আদায়ের মধ্যে। (চার) ওয়াদা রক্ষায়। (পাঁচ) দুঃখকষ্ট, বালা-মুসিবত ও (সত্যের পথে যে-কোনো) দুর্যোগে ধৈর্যধারণ করায়। যারা তা করবে, তারাই প্রকৃত সত্যানুসারী ও আল্লাহ-সচেতন। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৭৭)
(হে বিশ্বাসীগণ!) আমি অবশ্যই পরীক্ষা করব, যতক্ষণ পর্যন্ত পরিষ্কার বোঝা না যায় যে, তোমাদের মধ্যে কে কে জেহাদ করে ও প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যধারণ করে। তোমাদের (বিশ্বাসের ব্যাপারে সকল দাবির সত্যতা) আমি অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখব। ৩২. যারা সত্য অস্বীকার করে ও মানুষকে আল্লাহর পথ অনুসরণে বাধা দেয় এবং সত্যবাণী ও পথের দিশা জানার পরও যারা রসুলের বিরোধিতা করে, তারা আল্লাহর কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। বরং তিনি ওদের সকল কর্ম নিষ্ফল করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৩১-৩২)
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর (সবসময় যেন মনে রাখে) একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য। অতএব তাঁর কাছেই পুরোপুরি সমর্পিত হও। আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে দান করে। (সূরা হজ, আয়াত ৩৪)
(হে নবী!) ভালো ও মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো ভালো কাজ, ভালো আচরণ দিয়ে। তা হলে তুমি দেখতে পাবে—শত্রু হয়ে যাবে মিত্র। ৩৫. এই গুণের অধিকারী হয় তারাই, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে। এই গুণের অধিকারী হয় তারাই, যারা অত্যন্ত ভাগ্যবান। ৩৬. আর শয়তান যদি তোমাকে উত্তেজিত (রাগান্বিত হয়ে বিবাদে জড়িত) হতে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। তিনি সব শোনেন, সব জানেন। (সূরা হা-মিম-সেজদা, আয়াত ৩৪-৩৬)
অতএব হে নবী! সকল প্রতিকূলতার মুখে তুমি ধৈর্য ধরো। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সবসময় সত্য বলে প্রমাণিত। তুমি তোমার ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সূরা মুমিন, আয়াত ৫৫)
ইতঃপূর্বে বহু নবীকেই আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। তাদের সঙ্গে ছিল বহু আল্লাহওয়ালা। আল্লাহর পথে কোনো বিপর্যয়েই তারা হতোদ্যম হয় নি। দুর্বলতা দেখায় নি। অন্যায়ের সামনে মাথানত করে নি। আল্লাহ অবশ্যই ধৈর্যশীল সংগ্রামীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৬)
কিন্তু (সবসময় মনে রেখো) অত্যাচারের প্রতিকার করতে গিয়ে (তুমি যেন) অত্যাচার না করে ফেলো। তাই যে তার শত্রুকে ক্ষমা করে দেয় এবং শান্তিস্থাপন করে, আল্লাহর নিকট তার জন্যে মহাপুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ জালেমদের অপছন্দ করেন। ৪১. তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যে সমান প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকবে না। ৪২. অভিযুক্ত হবে তারা, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীর বুকে অন্যায় ও অশান্তি সৃষ্টি করে। ওদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি! ৪৩. কিন্তু কেউ যদি প্রতিকূলতার মুখে ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে, তা হবে (অতিমহৎ মানবিকতা) অতিসাহসী কাজ। (সূরা শুরা, আয়াত ৪০)
(মনে রেখো) তোমাদেরকে বর্তমানে যা-কিছু দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের জন্য। আর আল্লাহ যা রেখেছেন, তা এর চেয়ে অনেক ভালো ও চিরস্থায়ী। এ সবকিছু পাবে তারাই, যারা বিশ্বাসী ও আল্লাহর ওপর ভরসাকারী। বিশ্বাসী ও ভরসাকারীরা (এক) গুরুতর পাপ ও অশ্লীলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করে, (দুই) ক্রোধান্বিত হলেও (রাগ দমন করে) ক্ষমা করে, (তিন) প্রতিপালকের নির্দেশ মেনে চলে, (চার) নামাজ কায়েম করে, (পাঁচ) পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ করে কাজ করে, (ছয়) তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি, তা থেকে অন্যের জন্য ব্যয় করে এবং (সাত) অত্যাচারিত হলে (ধৈর্যের সঙ্গে) তার মোকাবেলা ও প্রতিকার করে। (সূরা শুরা, আয়াত ৩৬)
স্মরণ করো আমার বান্দা আইয়ুবের কথা! যখন সে আর্তনাদ করে তার প্রতিপালককে বলল, ‘শয়তান আমাকে খুব কষ্ট ও যন্ত্রণা দিচ্ছে!’ (তখন তাকে বলা হলো) ‘তুমি মাটিতে পদাঘাত করো। (সঙ্গে সঙ্গে ঝর্নাধারা সৃষ্টি হলো) এই তোমার গোসলের শীতল পানি এবং পান করার পানীয়।’ (ঐ পানি ব্যবহার করে সে নিরাময় লাভ করল।) ৪৩. আমি তাকে ফিরিয়ে দিলাম তার পরিবার-পরিজন। বিশেষ রহমত দিয়ে তার বংশের বিস্তার ঘটালাম। তাকে শিক্ষণীয় করে রাখলাম সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগকারী মানুষের জন্যে। ৪৪. (পরিশেষে আমি বললাম) ‘একমুঠো ঘাস নাও। তা দিয়ে আঘাত করো। শপথ ভঙ্গ কোরো না।’ আমি তাকে পেয়েছি বিপদে ধৈর্যশীল। কত ভালো বান্দা সে! সবসময়ই অনুশোচনায় ফিরে আসত আমারই কাছে। (সূরা সাদ, আয়াত ৪১)
হাদিস শরিফে ধৈর্য সম্পর্কে রাসুল (স.) যা বলেছেন-
একজন বিশ্বাসীর জানমাল-সন্তানের ওপর বিপদ-আপদ লেগে থাকতে পারে। (এটা তার জন্য পরীক্ষা। যে সবর বা ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতির মোকাবেলা করবে) সে গুনাহমুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। - আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী
যে ধৈর্যশীল হতে চায়, আল্লাহ তাকে পর্যাপ্ত ধৈর্য বা সবর দান করেন। ধৈর্য বান্দার প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় উপহার। - আবু সাঈদ খুদরী (রা); বোখারী, মুসলিম
রোজা সবরের অর্ধেক। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা-পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। - সুফিয়ান সাওরী (র); তিরমিজী
মহামারির সময় কেউ যদি নিঃশঙ্কচিত্তে সবরের সঙ্গে নিজ এলাকায় থাকে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তার কোনো ক্ষতিই হবে না, তার মর্যাদা হবে শহিদের সমান। - আয়েশা (রা); বোখারী
ধৈর্য ও বিনয় আল্লাহ পছন্দ করেন। - আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); মুসলিম
দোয়া করো। কখনো অধৈর্য হয়ো না। কখনো তাড়াহুড়ো কোরো না। (কখনো বোলো না যে, এত দোয়া করলাম, কই, কবুল তো হতে দেখলাম না!) ধৈর্য হারালে দোয়ায় আগ্রহ কমে যাবে। হতাশা তোমাকে আচ্ছন্ন করবে। আসলে অস্থির হয়ে নেতিবাচক কথা না বললে বিশ্বাসীর দোয়া সবসময় কবুল হয়। - আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম, বোখারী
মনোলোভা ভোগ্যপণ্যের আড়ালেই অপেক্ষা করছে নরক বা জাহান্নাম। আর কষ্ট, ধৈর্য ও সংগ্রামের পেছনে অপেক্ষা করছে স্বর্গ বা জান্নাত। - আনাস (রা), আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
যখন কোনো বিশ্বাসী বিপদ-আপদ, রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্ট, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা-বেদনা, আঘাত-দুর্ঘটনা, দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়, তখন আল্লাহ এগুলোকে তার গুনাহর কাফফারা করে দেন। (যদি সে ধৈর্য ধরে।) - আবু সাঈদ (রা), আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম, আহমদ, মুফরাদ
কৃতজ্ঞচিত্তে খাবার গ্রহণকারীর মর্যাদা ধৈর্যশীল রোজাদারের সমান। - আবু হুরায়রা (রা); ইবনে মাজাহ
জুলুম-অত্যাচারের মুখে কোনো মজলুম যখন ধৈর্যধারণ করে (ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য আন্তরিক প্রয়াস চালায়), তখন আল্লাহ তার সম্মান বৃদ্ধি করেন। - আবু কাবশা আমর (রা); তিরমিজী
যারা মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং (সত্যের পথে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে) তাদের দেয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে, তারা বিশ্বাসীদের মধ্যে উত্তম। আর যারা মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে না, মানুষের দেয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারে না, বিশ্বাসী হিসেবে তাদের অবস্থান পেছনের কাতারে। - আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা); মুফরাদ (বোখারী), ইবনে মাজাহ
দেহ-মনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, একাগ্রচিত্তের নামাজ এবং ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত—আল্লাহর পথে জেহাদ করার মতোই সওয়াবের কাজ। - আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যদি কেউ সকল কষ্ট ও ক্ষয়ক্ষতিতে ধৈর্যধারণ করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
- আবু উমামা (রা); ইবনে মাজাহ
আমার [নবীজী (স)] পরে তোমরা অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। তখন তোমরা নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবে এবং (ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি পরিবর্তন ও নিজের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। - আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); বোখারী, মুসলিম
আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আমি যখন তোমার সবচেয়ে প্রিয় দুটি জিনিস (দু-চোখ) তোমার কাছ থেকে নিয়ে নিই আর দৃষ্টিশক্তি হারানোর পরও তুমি যখন ধৈর্যশীল থাকো, তখন আমি তোমাকে পুরস্কৃত করব জান্নাত দিয়ে’। - আবু উমামা (রা), আনাস (রা); মুফরাদ
এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমার এমন আত্মীয় রয়েছে, যাদের সঙ্গে আমি সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি, কিন্তু তারা সম্পর্কচ্ছেদ করে। আমি তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। আমি তাদের সঙ্গে ধৈর্যধারণ করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে হঠকারিতা করে। নবীজী (স) বললেন, তোমার কথা ঠিক হয়ে থাকলে তুমি ভালো কাজ করছ। যতদিন পর্যন্ত তুমি তোমার এই আচরণ ঠিক রাখবে, ততদিন পর্যন্ত আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন। তাদের সকল চক্রান্ত থেকে তোমাকে রক্ষা করবেন। - আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
এমএ/