ঢাকা, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

২০ আষাঢ় ১৪৩২, ০৯ মুহররম ১৪৪৭

আল্লাহ অন্তর্যামী

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯:৪৪, ১ জুলাই ২০২৫

আল্লাহ অন্তর্যামী

প্রতীকী ছবি

আল্লাহ অন্তর্যামী। মহাকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা। ভূমণ্ডল নভোমণ্ডলের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। সৃষ্টির বুদ্ধির অগম্য গোপন রহস্য ও নিগূঢ় তত্ত্ব সবই তাঁর জানা। মানুষের অন্তরের গোপন চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছা সম্পর্কে তিনি সবিশেষ ওয়াকিবহাল। তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সমগ্র সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তিনি জানেন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত কোন কিছুই তাঁর এখতিয়ারের বাহিরে নয়। তিনি প্রকাশ্য-গুপ্ত-সূক্ষ্ম-ক্ষুদ্র-অণু-পরমাণু-দৃশ্যমান বা অদৃশ্য সবকিছুরই খবর রাখেন। 

মহান আল্লাহ অন্তর্যামী; এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে যা বলা আছে-

‘তিনিই স্রষ্টা, তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। তারপর তোমরা কেউ বিশ্বাসী হয়েছ, কেউ হয়েছ সত্য অস্বীকারকারী। তোমরা যা করো, আল্লাহ তার সম্যক-দ্রষ্টা। ৩. তিনি মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এক অন্তর্নিহিত সত্যের ভিত্তিতে। আর তোমাদেরকে দান করেছেন সুন্দর চৌকস আকৃতি। কিন্তু তোমাদেরকে শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে হবে তাঁরই কাছে। ৪. মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। তিনি জানেন তোমরা যা গোপন করো ও তোমরা যা প্রকাশ করো। তিনি তো অন্তর্যামী।’ (সূরা তাগাবুন, আয়াত ২-৪)

‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি শাশ্বত চিরঞ্জীব। বিশ্বপ্রকৃতির সর্বসত্তার ধারক। তিনি তন্দ্রা-নিদ্রাহীন সদাসজাগ। মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর মালিক। তাঁর সদয় অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করার সাধ্য কারো নেই। দৃশ্যমান বা অদৃশ্য, অতীত বা ভবিষ্যৎ—সৃষ্টির সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু জানাবেন, এর বাইরে তাঁর জ্ঞানের সীমানা সম্পর্কে ধারণা করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাঁর আসন, তাঁর কর্তৃত্ব পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের সর্বত্র বিস্তৃত। আর তা সংরক্ষণে তিনি অক্লান্ত। তিনি সর্বোচ্চ সুমহান।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৫)

‘তোমরা গোপনে কানে কানে বলো বা প্রকাশ্যে উচ্চকণ্ঠে বলো, আল্লাহর কাছে সবই সমান। তিনি তো অন্তর্যামী। আশ্চর্য! যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তোমার মনের ভেদ জানবেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী প্রজ্ঞাময়, সব বিষয়ে অবগত।’ (সূরা মূলক, আয়াত ১৩)

‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর মালিক। আর আখেরাতেও সকল প্রশংসাই তাঁর। তিনি প্রজ্ঞাময়, সব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। ২. তিনি জানেন জমিনে যা প্রবেশ করে, জানেন জমিন থেকে যা বেরিয়ে আসে। তিনি জানেন যা-কিছু আকাশ থেকে অবতীর্ণ হয়, জানেন যা-কিছু আকাশে উঠে যায়। তিনি পরমদয়ালু, অতীব ক্ষমাশীল।’ (সূরা সাবা, আয়াত ১)

‘মহাকাশ ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই। আর সবকিছু ফিরে যায় তাঁরই কাছে। ৬. তিনি দিনকে ছোট করে রাতকে বড় করেন। আবার রাতকে ছোট করে দিনকে বড় করেন। তিনিই অন্তর্যামী।’ (সূরা হাদিদ, আয়াত ৫-৬)

‘মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সবই আল্লাহর। তোমাদের মনে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ অবশ্যই সবকিছুর হিসাব নেবেন। তারপর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন বা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৪)

‘মহাবিশ্বের সবকিছুই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ২. মহাকাশ ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই। তিনিই জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যু ঘটান। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। ৩. শুরুতেও তিনি ছিলেন, শেষেও তিনিই থাকবেন। প্রকাশ্য যা-কিছু সবই তাঁর, যা-কিছু অপ্রকাশ্য তা-ও তাঁর। তিনি সব বিষয়ে সম্যক-অবহিত।’ 

‘তিনি সময়ের ছয় স্তরে মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন, যা-কিছু মাটিতে প্রবেশ করে আর যা-কিছু মাটি থেকে বেরিয়ে আসে। জানেন, যা-কিছু ঊর্ধ্বলোক থেকে নামে ও ঊর্ধ্বলোকে যা-কিছু ওঠে। তুমি যেখানেই থাকো না কেন, তিনি তোমার সাথে আছেন এবং যা-কিছুই করো না কেন, আল্লাহ তা দেখেন।’

‘মহাকাশ ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই। আর সবকিছু ফিরে যায় তাঁরই কাছে। ৬. তিনি দিনকে ছোট করে রাতকে বড় করেন। আবার রাতকে ছোট করে দিনকে বড় করেন। তিনিই অন্তর্যামী।’ (সূরা হাদিদ, আয়াত ১-৬)

‘যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কিছু বলো (তা-ও তিনি শোনেন) আবার মনের না-বলা কথাও (শোনেন) এবং অবচেতন মনের গভীরের সুপ্ত চিন্তাও তিনি জানেন।’ (সূরা তাহা, আয়াত ৭)

‘দেখ! সত্য অস্বীকারকারীরা আল্লাহর কাছ থেকে গোপন রাখার জন্য অন্তরকে ঢেকে রাখার চেষ্টা হিসেবে বস্ত্রের নিচে বক্ষকে কুঞ্চিত করছে। শোনো! ওরা যখন নিজেদের অভিসন্ধি গোপন করে, তখন ওরা কী গোপন করছে আর কী প্রকাশ করছে, তা কি তিনি জানেন না? নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের সকল গোপন কথাই জানেন।’ (সূরা হুদ, আয়াত ৫)

‘সত্য অস্বীকারকারীরা কি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে? নিক! আমিও ব্যবস্থা ঠিক করে রেখেছি। ওরা কি মনে করে, আমি ওদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার কোনো খবর রাখি না? অবশ্যই রাখি। আমার নিযুক্ত ফেরেশতারা তো ওদের কাছে থেকে সবকিছুই রেকর্ড করছে।’ (সূরা জুখরুফ, আয়াত ৭৯)

‘নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। কিন্তু এদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। ৭৪. তারা যা মনের গভীরে লুকিয়ে রাখে আর যা প্রকাশ করে, তোমার প্রতিপালক সবই জানেন। ৭৫. মহাকাশ ও পৃথিবীতে এমন কোনো গোপন রহস্য নেই, যা তাঁর লিপিকায় লিপিবদ্ধ নেই।’ (সূরা নমল, আয়াত ৭৩-৭৫)

‘হে মানুষ! জেনে রাখো, মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর। তোমাদের অবস্থান তিনি জানেন, তোমাদের লক্ষ্যও তাঁর কাছে পরিষ্কার। একদিন সবাইকে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। তোমরা জীবনে কী করেছ, সেদিন তিনি তোমাদের সব দেখিয়ে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে সবকিছু জানেন।’ (সূরা নূর, আয়াত ৬৪)

হাদিসে যা বলা আছে

আল্লাহ আমাদের অন্তরের গোপন অভিপ্রায়, অনুভূতি ও ইচ্ছাসমূহ জানেন। তাঁর কাছে আমাদের জীবন, ধন-সম্পদ, কৃতকর্মের সবকিছুর জবাবদিহি করতে হবে।। 

রাসুল (স.) বলেছেন, প্রতিটি কাজ তুমি সবচেয়ে ভালোভাবে করবে এটাই আল্লাহর নির্দেশ। 

তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমাকে তোমার দায়িত্বের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নেতাকে তার অধীনস্থের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। পরিবার প্রধানকে পরিবারের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। স্ত্রীকে তার স্বামীর সংসারের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। —আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা); বোখারী, মুসলিম

যে ব্যক্তি ঘোষণা করে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রসুল’ এবং সব ধরনের মূর্তিপূজা পরিহার করে, তার জান ও মাল নিরাপদ হয়ে যায়। তার সকল কাজের জন্য তখন তাকে শুধু আল্লাহর কাছেই জবাবদিহি করতে হবে। —আবু আবদুল্লাহ ইবনে তারেক (রা); মুসলিম

ছোট ছোট পাপ সম্পর্কে সচেতন হও। যখন জবাবদিহি করতে হবে, তখন ছোট ছোট পাপ জমা হয়ে তোমার সর্বনাশের কারণ হবে। —সহল ইবনে সাদ (রা); আহমদ

আমাদের উচিত, অন্তরের শুদ্ধতা ও পবিত্রতা অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য ঈমান ও আমল যেমন লৌকিকতা, দুনিয়াবি স্বার্থ ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও নির্ভেজাল হতে হবে। অন্তর থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতা, অহংকার, রাগ- ক্ষোভ, পরচর্চা, পরনিন্দা ইত্যাদি দূর করতে হবে। 
 

আরও পড়ুন