ব্যাংকার ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:১৩, ২৯ মে ২০২৫ | আপডেট: ২২:১৫, ২৯ মে ২০২৫
প্রতীকী ছবি
মহান আল্লাহ আমাদের অন্তরে কী আছে সেটা জানেন, নিয়তে কী আছে সেটা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তিনি অন্তর্যামী। মানুষের অন্তরের গোপন চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছাসমূহ সম্পর্কে অবগত। আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের একটি হলো আল আলীম। যার অর্থ সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী, সর্বজান্তা।
মহান আল্লাহ সৃষ্টির সবকিছু সবিশেষ অবহিত। তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা সারা সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তিনি জানেন যা ঘটা জরুরি, যা ঘটা অসম্ভব এবং যা ঘটা সম্ভব। ঘটনার পরিণামে কী ঘটবে তা তিনি যেমন জানেন তেমনি জানেন যা ঘটে গেছে, বর্তমানে যা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে। তিনি প্রকাশ্য-গুপ্ত-সূক্ষ্ম-ক্ষুদ্র-অণু-পরমাণু-দৃশ্যমান বা অদৃশ্য সবকিছুরই খবর রাখেন। সৃষ্টির কোন বিষয়ে তিনি বেখবর নন।
মহান আল্লাহ সৃষ্টির সবকিছু জানেন এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে যা বলা আছে-
‘মহাবিশ্বের সকল নিগূঢ় রহস্য ও অদৃশ্য বাস্তবতা আল্লাহ জানেন। মানুষের অন্তরের সকল ভাবনা সম্পর্কেও তিনি সবিশেষ অবহিত। ৩৯. তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি করেছেন। তাই কেউ সত্য অস্বীকার করলে তার অবাধ্যতার জন্যে সে-ই দায়ী হবে। সত্য অস্বীকারকারীদের অবাধ্যতা শুধু প্রতিপালকের অসন্তোষই বৃদ্ধি করে। অবাধ্যতা শুধু তাদের ক্ষতিই বাড়ায়।’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৮)
‘দেখ! সত্য অস্বীকারকারীরা আল্লাহর কাছ থেকে গোপন রাখার জন্য অন্তরকে ঢেকে রাখার চেষ্টা হিসেবে বস্ত্রের নিচে বক্ষকে কুঞ্চিত করছে। শোনো! ওরা যখন নিজেদের অভিসন্ধি গোপন করে, তখন ওরা কী গোপন করছে আর কী প্রকাশ করছে, তা কি তিনি জানেন না? নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের সকল গোপন কথাই জানেন।’ (সূরা হুদ, আয়াত ৫)
‘ওরা যা প্রকাশ করে বা ওদের অন্তর যা গোপন করে, নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তা সবই জানেন। কারণ তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। সৃষ্টির শুরুর সময় থেকে সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত সকল প্রশংসা শুধুই তাঁর! সর্বময় বিচারক্ষমতাও শুধু তাঁর। তাঁর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে।’ (সূরা কাসাস, আয়াত ৬৯)
‘যদি তোমরা সফরে থাকো এবং কোনো লেখক পাওয়া না যায়, তবে বন্ধক রাখা বৈধ। তোমরা একে অপরকে বিশ্বাস করলে, যাকে বিশ্বাস করা হয়, সে যেন আমানত ফেরত দেয়, সে যেন সবসময় আল্লাহ-সচেতন থাকে। আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন কোরো না। যে সাক্ষ্য গোপন করে তার অন্তর কালিমালিপ্ত হয়। তোমরা যা-ই করো না কেন আল্লাহ সবই জানেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৩)
‘তোমরা অকৃতজ্ঞ হলে জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ তাঁর অকৃতজ্ঞ বান্দাকে পছন্দ করেন না। আর তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে আল্লাহ তোমার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। মনে রেখো, একজনের পাপের বোঝা অন্যজন বহন করবে না। যথাসময়ে তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে তোমাদের প্রতিপালকের কাছে। তখন জীবনে যা করেছিলে, সবকিছুই তিনি দেখিয়ে দেবেন। তোমাদের অন্তরের কথাও তিনি ভালোভাবে জানেন।’ (সূরা জুমার, আয়াত ৭)
এরপর আল্লাহ যখন জিজ্ঞেস করবেন, ‘হে মরিয়মপুত্র ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে আমাকে ও আমার মা-কে উপাস্যরূপে গ্রহণ করো?’ তখন সে বলবে, ‘তুমি মহামহিম! যা আমার বলার অধিকার নেই তা আমি কীভাবে বলব? যদি আমি তা বলতাম, তুমি তো তা জানতে। আমার মনের সবকিছুই তুমি জানো। কিন্তু তোমার অন্তরের কোনোকিছুই আমি জানি না। সৃষ্টির বুদ্ধির অগম্য গোপন রহস্য ও নিগূঢ় তত্ত্ব সবই তোমার জানা।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত ১১৬)
‘যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কিছু বলো (তা-ও তিনি শোনেন) আবার মনের না-বলা কথাও (শোনেন) এবং অবচেতন মনের গভীরের সুপ্ত চিন্তাও তিনি জানেন।’(সূরা তাহা, আয়াত ৭)
‘ওরা যখন তোমার কাছে আসে তখন বলে, ‘আমরা বিশ্বাস করি।’ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ওরা সত্যকে অস্বীকার করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েই আসে আর সত্য অস্বীকারকারীরূপেই ফিরে যায়। ওদের মনের গোপন কথা আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত ৬১)
‘আল্লাহর সঙ্গে করা অঙ্গীকার ভঙ্গ ও মিথ্যাচারের পরিণামে মুনাফেকি বা ভণ্ডামি ওদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেল। আর তা স্থায়ী থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। ৭৮. ওরা কি জানে না যে, ওদের মনের সকল গোপন কথা ও গোপন সলাপরামর্শ সবকিছু সম্পর্কেই আল্লাহ অবগত? আসলে আল্লাহ তো অদৃশ্য ও রহস্যাবৃত সকল বিষয় সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল।’ (সূরা তওবা, আয়াত ৭৭)
‘সৎপথ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানার পরও যারা তা পরিত্যাগ করে, শয়তান তাদের প্রবঞ্চিত করে। শয়তান মিথ্যা আশায় ওদের মনকে ভরিয়ে রাখে। (ওরা এতটাই অধঃপতিত হয় যে) আল্লাহর সত্যবাণীকে যারা অপছন্দ করে, ওদের কাছে গিয়ে বলে, ‘কোনো কোনো বিষয়ে আংশিকভাবে আমরা তোমাদের কথা মেনে চলব।’ ওদের গোপন অভিসন্ধি আল্লাহ ভালো করেই জানেন।’ (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ২৫)
‘হে বিশ্বাসীরা! (যেখানে স্বার্থের সুস্পষ্ট সংঘাত রয়েছে, সেখানে) বিশ্বাসীদের ছেড়ে কোনো সত্য অস্বীকারকারীকে মিত্র বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ কোরো না। যে তা করবে, তার সাথে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। অবশ্য তাদের জুলুম থেকে বাঁচার জন্যে (দৃশ্যত এরূপ) করলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ তোমাদের (কল্যাণের জন্যেই এ বিষয়ে) সাবধান করে দিচ্ছেন। আর (পার্থিব জীবন শেষে) তোমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। ২৯. (হে নবী!) বলো, তোমরা তোমাদের মনের কথা গোপন রাখো বা প্রকাশ করো, আল্লাহ সবই জানেন। মহাকাশ ও পৃথিবীর পরতে পরতে যা-কিছু আছে, তিনি তা-ও জানেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ২৮)
‘দুঃখ ও বিপর্যয়ের পর তিনি তোমাদের নিরাপত্তা ও প্রশান্তি দিলেন। একদল তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গেল। আরেক দল মূর্খদের মতো আল্লাহ সম্পর্কে অবান্তর ধারণা করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত হচ্ছিল। ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলছিল, ‘আমাদের কি কিছু বলার অধিকার আছে?’ (হে নবী! ওদের) বলো, ‘সবকিছুই আল্লাহর এখতিয়ারে! আসলে এদের অন্তরের গোপন কথাটি হচ্ছে, তারা বলতে চায়, এ ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থাকলে আমরা এখানে মারা পড়তাম না।’ (হে নবী!) বলো, ‘যদি তোমরা ঘরেও থাকতে তবুও মৃত্যু নির্ধারিত হয়ে থাকলে, তোমরা তোমাদের মৃত্যুস্থানে নিজে নিজেই পৌঁছে যেতে।’ আর আল্লাহ এভাবে তোমাদের মনে যা আছে তা পরীক্ষা করেন এবং অন্তরকে পরিশুদ্ধ করেন। আসলে তোমাদের মনের খবর আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৪)
‘তোমরা গোপনে কানে কানে বলো বা প্রকাশ্যে উচ্চকণ্ঠে বলো, আল্লাহর কাছে সবই সমান। তিনি তো অন্তর্যামী। আশ্চর্য! যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তোমার মনের ভেদ জানবেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী প্রজ্ঞাময়, সব বিষয়ে অবগত।’ (সূরা মূলক, আয়াত ১৩)
‘মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সবই আল্লাহর। তোমাদের মনে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ অবশ্যই সবকিছুর হিসাব নেবেন। তারপর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন বা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৪)
‘যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কিছু বলো (তা-ও তিনি শোনেন) আবার মনের না-বলা কথাও (শোনেন) এবং অবচেতন মনের গভীরের সুপ্ত চিন্তাও তিনি জানেন।’ (সূরা তাহা, আয়াত ৭)
‘এরপরও ওরা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য উপাস্য গ্রহণ করেছে এই আশায় যে, ওরা সাহায্য পাবে। (কিন্তু ওরা জানে না যে) এইসব উপাস্য ওদের কোনো সাহায্য করতে পারবে না। এমনকি এই উপাস্যদের সবাইকে কাতারে কাতারে উপস্থিত করা হলেও নয়। ৭৬. অতএব সত্যবিমুখদের কোনো কথায় তোমার দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। ওদের প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুই আমি জানি।’ (সূরা ইয়া-সীন, আয়াত ৭৪)
‘সত্য অস্বীকারকারীরা কি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে? নিক! আমিও ব্যবস্থা ঠিক করে রেখেছি। ওরা কি মনে করে, আমি ওদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার কোনো খবর রাখি না? অবশ্যই রাখি। আমার নিযুক্ত ফেরেশতারা তো ওদের কাছে থেকে সবকিছুই রেকর্ড করছে।’ (সূরা জুখরুফ, আয়াত ৭৯)
‘নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। কিন্তু এদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। ৭৪. তারা যা মনের গভীরে লুকিয়ে রাখে আর যা প্রকাশ করে, তোমার প্রতিপালক সবই জানেন। ৭৫. মহাকাশ ও পৃথিবীতে এমন কোনো গোপন রহস্য নেই, যা তাঁর লিপিকায় লিপিবদ্ধ নেই।’ (সূরা নমল, আয়াত ৭৩)
‘হে মানুষ! জেনে রাখো, মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর। তোমাদের অবস্থান তিনি জানেন, তোমাদের লক্ষ্যও তাঁর কাছে পরিষ্কার। একদিন সবাইকে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। তোমরা জীবনে কী করেছ, সেদিন তিনি তোমাদের সব দেখিয়ে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে সবকিছু জানেন।’ (সূরা নূর, আয়াত ৬৪)
হাদিসে কী বলা আছে
‘নিয়ত সকল কর্মের অঙ্কুর। প্রত্যেকের কর্মের মূল্যায়ন করা হবে তার নিয়ত বা অভিপ্রায় অনুসারে। কেউ যদি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করে, তবে সে সেভাবেই মূল্যায়িত হবে। আর যদি কেউ পার্থিব ধনসম্পত্তি বা কোনো নারীকে পাওয়ার জন্যে হিজরত করে, তবে তার মূল্যায়নও সেভাবেই হবে।
[হিজরত অর্থ দেশত্যাগ। দেশত্যাগী বা শরণার্থীর জীবনে কষ্ট অনেক। অর্থাৎ দুনিয়া হোক বা আখেরাত, একজন মানুষ যে উদ্দেশ্যে কষ্টস্বীকার করছে, মূল্যায়নটা হবে সেভাবেই। কষ্ট করার উদ্দেশ্যটাই গুরুত্বপূর্ণ। উম্মে কায়েস নামে এক কুমারীকে বিয়ে করার জন্যে মক্কা থেকে এক যুবক মদিনায় এলে নবীজী (স) একথা বলেন।] —ওমর ইবনে খাত্তাব (রা); বোখারী, মুসলিম
‘প্রত্যেকের বুকের ভেতরে একটি ক্ষুদ্র মাংসপিণ্ড রয়েছে। একে বলে ক্বালব বা মন বা হৃদয়। জেনে রাখো, এই ক্বালব বা মনের দূষণ শরীরকে দূষিত ও অসুস্থ করে তোলে আর ক্বালব বা মন দূষণমুক্ত হলে শরীর দূষণমুক্ত ও সুস্থ হয়।’ (তাই মনের আবর্জনা পরিষ্কার করার দিকে নজর দাও।) —নোমান ইবনে বশীর (রা); বোখারী, মুসলিম
‘মানুষের উত্থান হবে তাদের নিয়ত অনুসারে।’ —আবু হুরায়রা (রা), জাবির (রা); ইবনে মাজাহ
আল্লাহ আমাদের অন্তরের গোপন অভিপ্রায়, অনুভূতি ও ইচ্ছাসমূহ জানেন। আমাদের উচিত, অন্তরের শুদ্ধতা ও পবিত্রতা অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা।
এমএ/