ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ঋণ পরিশোধে অনীহা পোষণকারীর বিষয়ে ইসলাম কী বলে

ব্যাংকার ডেস্ক

প্রকাশ: ১১:২৭, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১১:৫৫, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

ঋণ পরিশোধে অনীহা পোষণকারীর বিষয়ে ইসলাম কী বলে

ঋণ মানে ধার দেনা কর্যকে বোঝায়। দুই অবস্থায় মানুষ  ঋণ করে। এক শ্রেণি আছে আক্ষরিক অর্থে অভাব অনটন বা সংকটে পড়ে ঋণ করে। সংকট কেটে গেলে ঋণ পরিশোধ করে অথবা পরিশেধের সৎ উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু যখন সে নির্দিষ্ট সময়ে অঙ্গীকার পুরণে ব্যর্থ হয় সমস্যা শুরু হয় তখনি। আরেক শ্রেণি আছে যারা ঋণ করে স্বভাবজাতভাবে। ঋণ করে ঘি খায়। এরা ঋণ নিয়ে পরিশোধের ব্যাপারে মনে অসৎ উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় পোষণ করে।  
ঋণ বলতে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে একটি চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত দেওয়ার শর্তে ধার দেয়াকে বুঝায়। ঋণগ্রহীতাকে গৃহীত অর্থ ব্যবহার করার বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাড়তি অর্থ বা সুদ পরিশোধ করতে হয়।  

মানুষের জীবনযাত্রায় কখনও কখনও এমন মুহূর্ত আসে যখন প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে হাতে যথেষ্ট অর্থ থাকে না। এই পরিস্থিতিতেই মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে ওঠে। ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা জরুরি প্রয়োজনে—ঋণ এমন একটি আর্থিক সহায়তা যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ ব্যবহারের সুযোগ দেয়। সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে ব্যবহার করলে ঋণ হতে পারে জীবন উন্নয়নের সোপান। আর অযথা ও অপরিকল্পিতভাবে গ্রহণ করলে এটি হয়ে উঠতে পারে বড় আর্থিক চাপের কারণ। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক জীবন বিষাদময় হয়ে ওঠে। 
ঋণ গ্রহণ করলে তা পরিশোধ না করা কঠিন গুনাহের কাজ। মহান রব্বুল আল আমিন পবিত্র কুরআনে ঋণ সম্পর্কে অনেক জায়গায় বর্ণনা করেছেন। রাসুল (স.) ঋণের ভয়াবহতা, কুফল সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন।

পবিত্র কুরআনে ঋণ

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে ঋণসংক্রান্ত লেনদেন করো তখন তা লিখে রেখো। আর তোমাদের মধ্যে কোনো লেখক যেন তা সঠিকভাবে লিখে দেয়। যেহেতু আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তাই লেখক কখনোই লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ-সচেতন থেকে ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে। কোনো বিষয় যেন বাদ না যায়। কিন্তু ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ বা দুর্বল হয় বা লেখার বিষয়বস্তু বলতে অক্ষম হয়, তবে যেন তার অভিভাবক ন্যায্যভাবে লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয়। আর উভয়পক্ষের পছন্দমতো দুজন পুরুষ সাক্ষী থাকবে। দুজন পুরুষ যদি না থাকে তবে একজন পুরুষ ও দুজন নারী। কারণ নারীদের মধ্যে একজন যদি ভুল করে তবে অন্যজন যেন তা মনে করিয়ে দিতে পারে। সাক্ষীদের যখনই ডাকা হোক, তারা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করবে না। ছোট হোক বা বড় হোক, ঋণ ফেরত দেয়ার সময়সহ লেনদেনের প্রতিটি খুঁটিনাটি শর্ত লিখে রাখতে কখনো বিরক্ত হবে না। যত বিস্তারিত লিখবে তত আল্লাহর কাছে এটি বেশি ন্যায্য, সাক্ষ্য হিসেবে বেশি নির্ভরযোগ্য, পরবর্তী সময়ে সংশয় ও মতবিরোধ রোধে বেশি কার্যকর হবে। তবে তোমাদের ব্যবসায় নগদ ও মালামাল আদান-প্রদানে লিখিত দলিল না রাখলেও কোনো দোষ নেই। অবশ্য যে-কোনো লেনদেন ও বেচাকেনায় সাক্ষী রেখো। লেখক ও সাক্ষী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখো। যদি এদের ক্ষতিগ্রস্ত করো তবে তা হবে অন্যায়। সবসময় আল্লাহ-সচেতন থেকো। কারণ আল্লাহই তোমাদের কল্যাণের সঠিক কর্মনীতি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি সব বিষয়ে সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮২)
হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ-সচেতন থেকো। সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি সত্যি সত্যি তোমরা বিশ্বাসী হয়ে থাকো। ২৭৯. যদি তোমরা সুদ না ছাড়ো তবে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো এবং সুদ পরিত্যাগ করো তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই প্রাপ্য হবে। তোমরা জুলুম কোরো না এবং তোমাদের ওপরও জুলুম করা হবে না। ২৮০. যদি খাতক অভাবী হয়, তবে সচ্ছল না হওয়া পর্যন্ত তাকে ছাড় দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরো কল্যাণের, যদি তোমরা তা জানতে! (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৯-২৮০) 

ঋণশোধের ব্যাপারে নবীজী (স) যে কারণে তাগাদা দিতেন

রসুলুল্লাহ (স) বলেন, যে ব্যক্তি ঋণী হয় সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে।

একবার নবীজী (স) মসজিদে নববীতে আবু উমামা সাহাবীকে অসময়ে বসে থাকতে দেখে নবীজী (স) তার কাছে গেলেন। বললেন, উমামা এখন তো নামাজের সময় নয়, বসে আছ কেন? তখন সে বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ! ঋণের চিন্তায় আমি পেরেশান আছি। তখন তিনি সকাল সন্ধ্যা পাঠ করার জন্যে তাকে একটা দোয়া শিখিয়ে দিলেন। (সে দোয়াটি হচ্ছে- হে আল্লাহ! দুশ্চিন্তা ও দুর্দশাগ্রস্ত হওয়া থেকে, অক্ষমতা ও আলস্য থেকে আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি। হে আল্লাহ! ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণজর্জরিত পরাভূত হওয়া থেকে আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি)। আবু উমামা পরবর্তীতে বলেন, এই দোয়া পাঠের বরকতে আল্লাহ আমাকে দুশ্চিন্তা এবং ঋণ থেকে মুক্তি দিন।
একজন মানুষ যখন ঋণ করে তার চিন্তার বড় অংশ জুড়ে থাকে কীভাবে এই ঋণ শোধ করবে। তার এই চিন্তা থেকে সে কিন্তু বের হতে পারে না। পাওনাদারের সামনে সে সবসময় সংকুচিত হয়ে থাকে। সে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, অমুক দিন দেবো কিন্তু সে দিতে পারে না এবং যখন দিতে পারে না তখন আবার এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের যে গুনাহ, এই গুনাহ তার নামে জমা হয়। পাওনাদারের কাছে সে আরো অপদস্থ হয়। অর্থাৎ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কখনো সম্মানের অধিকারী হয় না। তার আত্মসম্মান বোধটাই শেষ হয়ে যায়।
ঋণশোধ করার ব্যাপারে নবীজী (স) তাগাদা দিতেন এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, একজন বিশ্বাসীর আত্মা ঐ ঋণশোধ না করা পর্যন্ত প্রশান্তি পায় না। সে ঝুলে থাকে। জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না। সাহাবীরা এবং পরবর্তীকালে তাবে তাবেঈন এবং সমস্ত বুজুর্গরা প্রত্যেকেই ঋণমুক্ত হয়ে মারা যাওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন।
ঋণগ্রস্ত হওয়াটাকে নবীজী (স) কত অপছন্দ করতেন সেটা বোঝা যায় তার জানাজা পড়ানোর ঘটনা থেকে। তিনি যখনই কারো জানাজা পড়াতেন আগে খোঁজ নিতেন যে, মৃতের কোনো ঋণ আছে কিনা। যদি মৃত ব্যক্তি দেনাগ্রস্ত হতো তিনি জানাজায় অংশ নিতেন না। তো ঋণগ্রস্ত হলে তার শাফায়াত পাওয়া যাবে? যিনি নিজের চোখের সামনের ঋণগ্রস্ত মৃতের জানাজা পড়াতেন না।
একবার জানাজা পড়াতে গিয়ে তিনি তিনি শুনলেন মৃত ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত এবং সে কোনো সম্পদ রেখে যায় নি যেখান থেকে ঋণশোধ করা যাবে। তিনি সাহাবীদের বললেন, তোমরা জানাজা পড়াও। কতটুকু ঋণ খোঁজ নেয়া হলো। ঋণ খুবই অল্প দুই বা তিন দিনার। উপস্থিত আরেক সাহাবা আবু কাতাদা আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি এই ঋণের জিম্মাদার হলাম। তখন নবীজী (স) জানাজায় ইমামতি করলেন।
জানাজা পড়ানোর পরদিন আবু কাতাদার সাথে দেখা হতেই নবীজী (স) জিজ্ঞেস করলেন, ঋণটা কি শোধ করেছ? আবু কাতাদা বললেন যে, পাওনাদারের পুরো প্রাপ্য পরিশোধ করা হয়েছে। নবীজী (স) স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন, এখন সে শান্তি পাবে।
হযরত জালাল উদ্দিন রুমি যখন মৃত্যুশয্যায় হঠাৎ তার মনে পড়ল, তার কাছে একজন ৫০ দিরহাম পাবে। ৫০ দিরহাম ঋণের কথা মনে পড়ার সাথে সাথেই তিনি সক্রিয় হয়ে উঠলেন এবং ৫০ দিরহাম সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করলেন যে, কীভাবে সংগ্রহ করা যাবে। এর মধ্যে যে পাবে সে পাওনাদার তারই ভক্ত। সে যখন শুনল যে, হুজুর অস্থির হয়ে গেছে সে-ও দৌড়ে আসল। জালাল উদ্দিন রুমিকে বলল যে, হুজুর আমার পাওনা নিয়ে আমার কোনো দাবি নাই, আমি এটা উপহার হিসেবে দিলাম। তখন রুমি শান্তির স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন যে, তুমি আমাকে বাঁচালে। আলহামদুলিল্লাহ! একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া থেকে আমি বেঁচে গেলাম।

অন্যন্য ধর্মে ঋণ সম্পর্কে কী বলা আছে

অথর্ববেদে ষষ্ঠ অধ্যায়ে প্রার্থনা আছে- ইহলোকে উত্তমর্ণের কাছে সকল ঋণশোধ করার শক্তি দাও। তোমার প্রাসাদে আমার সকল ঋণ থেকে মুক্ত করো। ঋণ নিমিত্ত নরকপাত থেকে আমায় মুক্ত করো। অর্থাৎ হিন্দুশাস্ত্রেও কিন্তু ঋণশোধ না করলে নরক বাস নিশ্চিত। ‘লৌকিক ও বৈদিক সকল ঋণ থেকে মুক্ত করো। দেহত্যাগের পর সর্বলোকে আমাকে মুক্ত করো’। অথর্ববেদে এই যে প্রার্থনা এটাও কিন্তু ঋণমুক্তির প্রার্থনা।

হাদিসে কী আছে

দুর্দশাগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দিলে বা ঋণ মওকুফ করে দিলে আল্লাহ মহাবিচার দিবসে তাঁর আরশের ছায়ায় তাকে আশ্রয় দান করবেন। - উসমান ইবনে আফফান (রা), আবু কাতাদা (রা), আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী, আহমদ
ঋণ ভালোভাবে পরিশোধ করো। যে ভালোভাবে ঋণ পরিশোধ করে, সে-ই তোমাদের মধ্যে উত্তম। - আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
ঋণ সম্পর্কে সাবধান! মহাবিচার দিবসে প্রত্যেকের ঋণই শোধ করতে হবে। - আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
অপরিশোধিত ঋণ ছাড়া শহিদের সকল গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন। - আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা); মুসলিম
টাকা থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করবে না। এটা অন্যায়। আর কারো ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব যদি কোনো সক্ষম ব্যক্তি গ্রহণ করে, তবে তা মেনে নেবে। - আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
আল্লাহর পথে শহিদ হলেও ঋণ মাফ করা হবে না। এর শাস্তি ভোগ করতে হবে।- আবু কাতাদা হারিস ইবনে রিবি (রা); মুসলিম
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সকল পাপ ও ঋণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ নবীজী (স) প্রায়ই এই দোয়া করতেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনি কেন প্রায়ই ঋণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে আল্লাহর আশ্রয় চান? তিনি জবাবে বললেন, ঋণগ্রস্ত হলে একজন মানুষ কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। - আয়েশা (রা); বোখারী
প্রতিটি বিলাসবহুল ভবন তার মালিকের জন্যে দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। - আনাস ইবনে মালেক (রা); আবু দাউদ, মেশকাত
[আসলে বিল্ডিং নির্মাণে ফুটানি করতে গিয়ে মানুষ অপচয় করে সবচেয়ে বেশি। ডিজাইন, ফিটিংস অন্যের চেয়ে আকর্ষণীয় চোখ ধাঁধানো করতে গিয়ে সঞ্চিত সকল অর্থ ব্যয় ছাড়াও ঋণ করার পরিণাম ভয়াবহ। তাকে খরচে উৎসাহ দেয়া হয় এই বলে—‘বাড়ি তো একবারই করছ’। খরচ সামলাতে না পেরে বাড়ি-আসক্তদের একটা বড় অংশ হৃদরোগ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে জীবনের শান্তির বিনাশ ঘটায়। বাড়ি নির্মাণে নেমে বা প্লটের পেছনে ঘুরে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় অনেকে। দাতা হওয়ার পরিবর্তে ঋণগ্রস্ত হিসেবে মারা যায়। ছেলেমেয়ের ওপরও রেখে যায় ঋণের বোঝা।]
মহাবিচার দিবসের কঠিন অবস্থা থেকে যে আল্লাহর সুরক্ষা চায়, সে যেন ঋণ পরিশোধে অক্ষম মানুষের ঋণ মওকুফ করে দেয় বা পরিশোধ করার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়। - আবু কাতাদা (রা); মুসলিম
শোধ করার আন্তরিক ইচ্ছা নিয়ে টাকা ধার করার পর সে যদি তা পরিশোধ করতে অক্ষম হয়, তবে আল্লাহ যে-কোনো উপায়ে ঋণ পরিশোধের পথ করে দেবেন। তবে প্রথম থেকেই যদি তার ঋণ শোধ করার কোনো ইচ্ছা না থাকে, এই বদ নিয়তের জন্য আল্লাহ তার সর্বনাশের পথ খুলে দেবেন। - আবু হুরায়রা (রা); বোখারী
‘হে আল্লাহ! দুশ্চিন্তা ও দুর্দশাগ্রস্ত হওয়া থেকে, অক্ষমতা ও আলস্য থেকে আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি। হে আল্লাহ! ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণ জর্জরিত ও পরাভূত হওয়া থেকে আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি।’- আবু সাঈদ খুদরী (রা); আবু দাউদ
অনেকের সাথে আর্থিক লেনদেন রয়েছে—এমন এক ব্যক্তি তার কর্মচারীদের বলে রেখেছিল, যখন তোমরা টাকা আদায় করতে যাবে, তখন যদি এমন কাউকে দেখো যে, সে টাকা দিতে অক্ষম, তাহলে তার ঋণ মওকুফ করে দিও। এই ওসিলায় হয়তো (মহাবিচার দিবসে) আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। মৃত্যুর পর যখন আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ হলো, আল্লাহ তার সকল গুনাহ মাফ করে দিলেন। - আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
যখন কেউ কারো জন্যে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, সে যেন ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কোনো উপহার গ্রহণ না করে।- আনাস ইবনে মালেক (রা); বোখারী 
একজন নবীজীকে (স) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল ! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে? আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কি? নবীজী (স) জবাব দিলেন, যার দ্বারা মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়, সে-ই আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়। আর সবচেয়ে প্রিয় কাজ হচ্ছে কোনো দুর্দশাগ্রস্তের দুর্দশা দূর করা, ঋণগ্রস্থকে ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করা, ক্ষুধার্তের ক্ষুধা নিবারণ করা। আর কাউকে সাহায্য করার জন্যে তার সাথে হেঁটে যাওয়া মদিনার মসজিদে একমাস এতেকাফ করার চেয়েও বেশি কাঙ্ক্ষিত । - ইবনে ওমর (রা); তাবারানী
ঋণশোধ না হওয়া পর্যন্ত একজন বিশ্বাসীর আত্মা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রবেশপথে আটকে থাকবে। - আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী
অহংকার, অসততা ও ঋণমুক্ত হয়ে যদি কেউ মারা যায় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।- সাওবান (রা); তিরমিজী, ইবনে মাজাহ, দারিমি

ঋণ এবং ধার দুটো ভিন্ন

ঋণ এবং ধার দুটো কিন্তু এক জিনিস নয়। আপনি ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নিলেন চাচার কাছ থেকে ধার নিলেন বাবার কাছ থেকে ধার নিলেন এটার সঙ্গে সুদ জড়িত নয়। এটা আলাদা জিনিস। বন্ধুর কাছ থেকে নিলেন এটা আলাদা জিনিস এটার জন্যে আপনাকে কোনো লাভ দিতে হচ্ছে না।

ঋণমুক্ত থাকার উপায়

শোকর আলহামদুলিল্লাহ। মানে সর্বাবস্থায় শুকরিয়ার ধারণা মনে পোষণ করা। যা আছে তাতেই শোকর আলহামদুলিল্লাহ। দেখবেন লোভ চলে যাবে। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদাও কমে যাবে। লোক দেখানোর প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। আপনার যা-ই আছে, তাই নিয়েই আপনি ভালো থাকতে শুরু করুন। দেখবেন আপনার ভালো থাকার নানা উপায় বেরিয়ে এসেছে।
ঋণ হচ্ছে একটা নেশা আফিমের নেশার মতো। ঋণ একটা আসক্তি। যে একবার ঋণের স্বাদ পায় সে ঋণ ছাড়া অন্য কোনো অর্থে সে কোনো স্বাদ পায় না খুঁজে। এজন্য ঋণ করার ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।

এমএ

আরও পড়ুন