তারেক সিদ্দিকী
প্রকাশ: ১৪:২৮, ১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২২:৪৬, ১ নভেম্বর ২০২৫
আপনার আশেপাশে একই পেশায় থাকা মানুষদের প্রতিযোগী হিসেবে না দেখে—সমমনা, সহকর্মী, কিংবা নিজের আপনজনের মতো দেখুন। দেখবেন, একসময় তারাও আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে—বিপদে, প্রয়োজনে, মানবিকতায়।
বিসিবিএল সোনারগাঁও শাখায় দায়িত্ব নেয়ার তৃতীয় দিনেই আমি এক অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। ব্যাংক এশিয়ার ম্যানেজার মোস্তাফিজ স্যার, সিটি ব্যাংকের ম্যানেজার সাঈদ স্যার এবং স্থানীয় একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী আমার সাথে দেখা করতে আসেন। আমি সত্যিই বিস্মিত হয়েছিলাম—একসাথে সম্মানিত, অনুপ্রাণিতও বোধ করেছি।
নতুন এলাকায় দায়িত্ব পালনের শুরুতেই বুঝে গিয়েছিলাম—আমি একা নই। আমার পাশে আছেন কিছু আন্তরিক মানুষ, যারা সহযোগিতা করতে দ্বিধা করেন না। বাস্তবে তেমনটাই হয়েছে।
যখনই ক্যাশ সংকটে পড়েছি ব্যাংক এশিয়ার মোস্তাফিজ স্যার ছিলেন অবিচলভাবে পাশে—একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধুর মতো। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার সাইফুদ্দিন স্যার জমির ডকুমেন্ট বিষয়ে একেবারে বিশেষজ্ঞ। মর্টগেজ ডকুমেন্ট নিয়ে যখনই তার কাছে গিয়েছি, সময় দিয়েছেন, ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এমনকি পরামর্শ দিয়েছেন—লোন গ্রাহকদের পাশাপাশি তাদের জামিনদারদেরও ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে, যাতে প্রয়োজনে সহজে যোগাযোগ করা যায়।
সিটি ব্যাংকের সাঈদ স্যার নিয়মিত স্টুডেন্ট লোন রেফার করেন—সবসময় পাশে থাকা একজন সহকর্মীর মতো। আইএফআইসি ব্যাংকের বেলাল ভাই আমার প্রতিবেশী; তিনি প্রায়ই আসেন, ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন—তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সহযোগিতা পেয়েছি সরকারি সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের স্থানীয় চারটি শাখা থেকে। তরুণ ম্যানেজাররা ছিলেন দ্রুত, আন্তরিক, দায়িত্বশীল। সরকারি ব্যাংকের সেবা নিয়ে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা তারা ভেঙে দিয়েছেন। বিকেল ৪টায় গিয়ে ওবিসি চেকে ১০ লাখ টাকা ক্যাশ পাওয়া—এমন অভিজ্ঞতা আজও মনে দাগ কেটে আছে। তারা শিখিয়েছেন— ব্যাংকিং আইনের বাইরেও ‘ব্যাংকিং প্রাকটিস’ বলে একটি বিষয় আছে, যার মধ্য দিয়ে প্রকৃত সেবার মান ফুটে ওঠে।
একইভাবে এমটিবিএল-এর ম্যানেজার ও সেকেন্ড ম্যানও ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। ইসলামি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, এমনকি এনসিসি উপশাখার ইনচার্জ—সবার কাছ থেকেই পেয়েছি উষ্ণ অভ্যর্থনা, সহযোগিতা, আর একধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ।
অবশ্যই সবাই একরকম নন—একজনের কাছ থেকে ভিন্নরকম আচরণও পেয়েছি। হয়তো সেদিন তিনি কোনো চাপের মধ্যে ছিলেন। তবে এতসব ইতিবাচক মানুষদের উষ্ণতা সেই একফোঁটা খারাপ লাগাকে ঢেকে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে।
আমি বিশ্বাস করি, এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের দেশের প্রতিটি পেশার মানুষদের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ুক। মহান সৃষ্টিকর্তা সবাইকে কল্যাণ ও প্রেরণায় ভরিয়ে দিন। আমিন।
লেখক: শাখা ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড
এএ
তারেক সিদ্দিকী