ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

অনেকদূর যেতে চাই

মুশরিফিন আনোয়ার

প্রকাশ: ১৮:০৩, ৪ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০০, ৫ মে ২০২৫

অনেকদূর যেতে চাই

“জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা অধিক গুরুত্বপূর্ণ”—আলবার্ট আইনস্টাইনের এ উক্তিটি আপাত সরল মনে হলেও কথাটির ভার ব্যাপক। কারণ কল্পনা থেকে আসে উদ্যম। আর উদ্যমই কল্পনাকে দেয় বাস্তব রূপ। ফলে কল্পনাই জ্ঞানের পথ উন্মোচন করে দেয়। আমিও তাই কল্পনা ও উদ্যমকে বাড়তি গুরুত্ব দেই।

আসলে মানুষ যা ভাবতে পারে তা অর্জন করতে পারে। তাই অর্জন করতে হলে আগে ভাবতে হবে। একজন মানুষ যদি সফলতার বিষয়ে আত্নবিশ্বাসী হয় তাহলে সে তা করতে পারে।

আপনি সফল হবেন না ব্যর্থ হবেন, আলোকোজ্জ্বল দীপ্যমান হবেন নাকি নিষ্প্রভ হবেন, প্রদীপের দীপশিখার মতো জ্বলজ্বল করবেন না টিমটিম টিমটিম করতে করতে নিভে—এটা নির্ভর করে আপনার ভাবনার ওপরে।

আসলে খেলাধুলা, পড়াশোনা, জীবনযুদ্ধ বা বাস্তব রণক্ষেত্র বলেন, (খেলাধুলাও অনেকটা রণক্ষেত্র) এখানে দুইপক্ষ নামে জানপ্রাণ দিয়ে নামে। কিন্তু জানপ্রাণ দিয়ে নামুক বা যেভাবে নামুক জয়-পরাজয়টা কিন্তু নির্ধারিত হয়ে যায় ভাবনার ওপরে। যে টিম ভাবতে পারে যে, আমরা জিতব। সে টিম জিতে। তার খেলার মধ্যে নিজস্ব রূপ চলে আসে। আর যে টিম মনে করে হেরে যাব, তারা বরাবরই খোলসবন্দি থাকে। আসলে জয় বা পরাজয় সাফল্য বা ব্যর্থতা। আপনি সফল হবেন না ব্যর্থ হবেন তা নির্ভর করে আপনার ভাবনার ওপরে।

কল্পনা থেকেই জন্ম নেয় স্বপ্নের। অনেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখে। আমিও তাদের একজন। আমি অস্ট্রেলিয়াতে পুরকৌশলে পড়তে যেতে চাই। বেশ কয়েকটি কারণে এ দেশটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাই। এমনকি এ বিষয়ে পড়ার আগ্রহের পেছনেও আমার সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে।

 

কেন অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যেতে চাই

অস্ট্রেলিয়া আমার পছন্দ কারণ দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা ভালো। তাছাড়া সেখানকার পরিবেশ স্বচ্ছ এবং জীবনযাপনের মানও ভালো। উচ্চশিক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণ এবনং নিরাপদ একটি দেশ বলেই আমার মনে হয়। এ ধরনের ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, মনোযোগ এবং আত্নোন্নয়নের পথ অনেকাংশে নিশ্চিত হয়।

দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্কলারশিপগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে। এগুলোতে প্রায় সরকারি অনুদানের কাছাকাছি সুবিধা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্সগুলোর ভিত্তিতে প্রতি মাসে বা বছরে অনেক সুযোগসুবিধাও রয়েছে। থাকা-খাওয়ার খরচসহ নগদ অর্থের পরিমাণ কম-বেশি হয়। শতকরা ১০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সার্বিক ভ্রমণ ভাতা এবং থিসিস ভাতা প্রদান করে থাকে। এছাড়া রয়েছে নির্ভরশীল শিশু ভাতাসহ চিকিৎসা ভাতা, ম্যাটারনিটি এবং প্যাটারনিটি লিভ।

আরেকটি আকর্ষণ অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস

দেশটির সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস চালু করেছে। এ সম্মানতার মাধ্যমে প্রায় সবকিছুই বিনা মূল্যে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে দেশটি। এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে দেশটিতে যাওয়ার জন্য বিমান ভাড়া ও ফিরতি টিকেট, পড়াশোনার সামগ্রিক খরচ, আবাসন ও খাওয়ার খরচসহ মাসিক নগদ অর্থ। এছাড়া নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা।

এছাড়া প্রতিবছর কমনওয়েলথ ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং মাস্টার্স ও পিএইচডিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ প্রদানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তহবিল দিয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও পরিচালিত হয়ে এজিআরটিপি স্কলারশিপগুলো। এই স্কলারশিপের আবেদনের সময় চলে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে পরের বছরের আগস্ট পর্যন্ত।

অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ পেতে

অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ স্কলারশিপ দেওয়া হয় কেবলমাত্র স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি প্রোগামগুলোতে। প্রোগ্রামভেদে একেক রকম সুবিধা পাওয়া যায়। বেশির ভাগ স্কলারশিপ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের হওয়াতে ব্যাচেলরের সনদ থাকতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি সবচেয়ে বেশি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। সারা বিশ্বের অনেক শিক্ষার্থী মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে পোষণ করে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে   এখানে ভালো সিজিপি সহ একাডেমিক রেকর্ডের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় ইংরেজি ভাষা দক্ষতা এবং টিউশন ফি চালানোর সক্ষমতার প্রমাণপত্র।

ভালো একাডেমিক ফলাফল , ইংরেজি ভাষা দক্ষতা এবং টিউশন ফি দেওয়ার সক্ষমতার প্রমাণ সবার আগে বিবেচ্য। পাশাপাশি আবেদনকারীর নির্বাচিত বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিও গুরুত্ব রাখে। কিছু স্কলারশিপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ডও সুবিধা হিসেবে কাজ করে। যে বিষয়ে স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে সে বিষয় সংলগ্ন কোন কাজে ন্যূনতম চার বছরের অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে। সর্বোপরি আবেদনের সাথে গবেষণার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার স্বপক্ষে ডেভেলপমেন্ট ইম্পেক্ট প্ল্যান প্রেরণ করতে হবে।

সামরিক পদে চাকরিরত কেউ অবশ্য স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীরা আবেদন করতে পারবেন না।

ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রে আইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে ৬.৫ চেয়ে থাকে যেখানে মডিউলগুলোতে তথা রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং ও স্পিকিং-এ ব্যান্ড স্কোর ন্যূনতম ৬ হতে হবে। তবে নারী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আবেদনকারীরা আইইএলটিএস স্কোর ৬.০ দেখিয়ে আবেদন করতে পারবেন। আইইএলটিএস-এর পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অফ ইংলিশ) চেয়ে থাকে, যার স্কোর হতে হয় ন্যূনতম ৫৮। টোফেল-এর পেপার বেজড টেস্টে কমপক্ষে ৫৮০ এবং কম্পিউটার বেজড টেস্টে কমপক্ষে ২৩৭ নম্বর পেতে হবে।

 

আবেদন করার উপায়

অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরেও শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট ভিসায় আলাদা করে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার জন্যই যে অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়া হচ্ছে তা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এর পরেই আসে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহনের আর্থিক সচ্ছলতার বিষয়টি।

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অথবা স্কলারশিপের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে দেয়া নীতিমালা খুঁটিনাটি স্পষ্টভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত প্রোফাইল বা সিভি, স্টেটমেন্ট অফ পারপাস, রিকমেন্ডেশন লেটার গুরুত্বপূর্ণ নথি। এগুলোর নমুনা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি চলাকালীন আবেদন ফর্মের সাথেই সরবরাহ করা থাকে।

আবেদনপত্রের অংশে যাবার আগে কোন কোন ক্ষেত্রে আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে আসা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে। সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনীয় সকল নথির আপলোড করে অনলাইনের আবেদনের সার্বিক কাজ সম্পাদন করা যাবে।

আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সাথে সাথে আবেদনের সময় প্রদত্ত শিক্ষার্থীর ইমেইলে তা জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পাঠানো হবে।

আমি অনেকদূর যেতে চাই

উন্নত শিক্ষা গ্রহণের আশায় অনেক শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। ভালো মানের পড়াশোনার পাশাপাশি দেশটিতে সরকারি বৃত্তির এমন সুযোগও রয়েছে যাতে পড়াশোনা তো বিনা মূল্যেই, বরং সরকার উল্টো টাকা দেবে মাসে মাসে। এসব শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন।

আমি পুরকৌশল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে চাই। কারণ আমি সুন্দর ভবন এবং সুপরিকল্পনার নিরিখে গড়ে তোলা ভবন পছন্দ করি। আমার বিশ্বাস, সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার কাজ করেন। এ পেশার মাধ্যমে স্বচ্ছ, সুসংগঠিত এবং আরামদায়ক পাটাতন গড়ার কাজ সহজ হয়। এ কারণে আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার লক্ষস্থির করেছি।

ভবিষ্যতে আমি নিজের ব্যবসা শুরু করারও পরিকল্পনা রেখেছি। আমি বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করতে চাই। যাদের সহযোগীতা প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি একটি শান্তিপূর্ণ জীবন চাই যেখানে অন্যদের জন্য ভালো কিছু করতে পারি।

একদিন অনেক মানুষ আমার ওপর আস্থা রাখবে, এ আমার বিশ্বাস। আমি আস্থাশীল কেউ হয়ে উঠতে চাই। আমার মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান গড়ুক এমনটিই আমার সংকল্প। কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ার কাজেও আমি নিবেদিত হতে চাই। ইনশাল্লাহ, আমি পারব।

 

আরও পড়ুন