ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

দেশকে ভালবাসব যেভাবে

রাহুমা ইসলাম নাবা

প্রকাশ: ১৫:৪০, ১ মে ২০২৫

দেশকে ভালবাসব যেভাবে

মা-মাটি-দেশকে ভালবাসে না কে! জন্মস্থানের প্রতি মানুষের টান সহজাত। দেশ ছাড়লেই বোঝা যায় দেশের প্রতি টান কী! সেই টানেই আমরা ফিরি মাতৃভূমিতে।

দেশপ্রেমিকমাত্রই ভাবেন দেশকে আমি কী দিতে পারি? দেশ আমাকে কী দিলো সেটা তার কাছে গৌণ।

নিজের কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করা-ই প্রকৃত দেশপ্রেম। দেশপ্রেমের এই সরল ব্যাখ্যা নিয়ে দ্বিমত আপনি করতেই পারেন। তবে সরল এই কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন করলেই কথাটার স্বার্থকতা বুঝতে পারবেন।

সার্কাস শোতে একটা খেলা দেখানো হচ্ছিল। এক যুবক লাঠির ডগায় অল্পবয়সী একটি মেয়ের ভারসাম্য ধরে রাখবে। মেয়েটি থাকবে লাঠির মাথায়, যুবক কপালে ধরে রাখবে লাঠির অন্য মাথা। ঝুঁকিপূর্ণ খেলা! লোকটি মেয়েটিকে বলল ব্যালেন্স ঠিক রাখতে। দুজন দুজনের দিকে খেয়াল রাখবে। মেয়েটি বলেছিল, উল্টো! দুজন যদি প্রত্যেকে নিজের অংশটুকুতে পুরো মনোযোগ দেয় তাহলেই ব্যালেন্স থাকবে ঠিকঠাক।

আসলে দেশের আঠারো কোটি মানুষের সবার ভূমিকা এক নয়। একেকজন একেক পেশায় নিবেদিত। একেক পেশার অবদানও একেক রকম। তবে সবার কাজ নিয়েই নিরূপিত হয় দেশের ভাগ্য।

একজন ডাক্তার যদি যত্ন নিয়ে রোগী দেখেন, একজন স্থপতি যদি যথাযথ স্থাপত্যকৌশল কাজে লাগিয়ে নির্মাণকাজ করেন, একজন ব্যবসায়ী যদি সততার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করেন, একজন কৃষক যদি আন্তরিকতার সাথে ফসল উৎপাদন করেন, একজন শিক্ষার্থী যদি লক্ষ্যাভিসারী হয়ে লেখাপড়া করেন অর্থাৎ প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ভূমিকা পালন করে তাহলেই এগিয়ে যাবে দেশ।

নিজের কাজের পাশাপাশি দেশের ব্যাপারে সর্বদা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে হবে। দেশ নিয়ে কখনোই নেতিবাচক কথা বলা যাবে না। কারণ একজন দেশপ্রেমিক কখনো তার দেশকে ছোট করতে পারে না।

অনেককেই বলতে শোনা যায়, এ দেশে কোন ভবিষ্যত নেই! এ দেশে মানুষ বাঁচে? দেশ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। আরেক দেশ কত উন্নত সেই চিন্তা করে হীনম্মন্যতায় না ভুগে উচিৎ হবে নিজের দেশকে ভালবাসার আকর হিসেবে গ্রহণ করা, দেশকে ভালবাসা। দেশ নিয়ে নেতিবাচক হওয়ার চেয়ে ভালো হবে নিজের গুণ ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা। দেশকে ‘বাসযোগ্য’ করার চেষ্টা করা।

দেশ কোনো একক সত্ত্বা নয়। দেশ হলো মানুষের সম্মিলিত রূপ। আমরা যখন বলি সিঙ্গাপুর একটি সভ্য দেশ, তখন আসলে আমরা বোঝাই দেশটির জনগণের কথা যারা নিয়মনীতি পরিপালনে আন্তরিক। মানুষ ভালো হলে দেশ ভালো হয়। তাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক আপনি তখনই হবেন যখন আপনি মানুষ হিসেবে ভালো হবেন। নীতিবান ও শুদ্ধাচারী হবেন।

একজন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যদি সঠিকভাবে পালন করে, কাউকে হয়রানি না করে, দুর্নীতিতে অংশগ্রহণ না করে; তবে সেটাই হবে তার জন্য দেশপ্রেম।

একজন ব্যবসায়ী যদি পণ্যে ভেজাল না দেন, মজুতদারী ও সিন্ডিকেটবাজির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য না বাড়ান তাহলেই তিনি প্রকৃত দেশপ্রেমিক।

দেশ নিয়ে ইতিবাচক ভাবনাই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে। আসলে দেশ নিয়ে আমাদের ভাবনা তেমনটাই হওয়া উচিৎ যেমনটা আমরা দেশকে দেখতে চাই। কারণ ভাবনা এক বিরাট শক্তি। আপনার নেতিবাচক ভাবনার ছাপ বাস্তবে পড়বে, দেশকে আপনি সেরূপেই দেখবেন। অন্যদিকে দেশকে যদি ইতিবাচকভাবে ভাবেন তাহলে দেশের বাস্তবতায় ইতিবাচকতার প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাবেন।

‘নিজের ভেতর থেকে না বদলালে (অর্থাৎ দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে) আল্লাহ কোনো জাতির (বা মানুষের) অবস্থা বদলান না।’ (সূরা রাদ, আয়াত ১১)

বাংলাদেশে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলে  ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে’—ওপরের আয়াতটির আলোকে বোঝা যায় কথাটা কেবল ব্যক্তিই নয়, পুরো জাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমরা বিশ্বের সেরা দশ জাতির এক, আমাদের দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ। জাতিগতভাবে যদি এই ভাবনাকে আমরা মননে ধারণ করতে পারি, মানে দৃষ্টিভঙ্গি যদি বদলাই তাহলে দেখা যাবে দেশ সেই অবস্থানেই পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন