ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

সময়ে নিহিত জীবনের গুরুত্ব

দি ব্যাংকার ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:৩৫, ৬ মে ২০২৫ | আপডেট: ২১:৪৯, ৬ মে ২০২৫

সময়ে নিহিত জীবনের গুরুত্ব

সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত স্রষ্টার মহিমা নবরূপে দীপ্যমান/সময়ের অপচয় স্রষ্টার দান ও মহিমাকে অবহেলা করার শামিল/সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। 

সময় মহান আল্লাহর নেয়ামত। সময়ের সমষ্টিই জীবন। মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, তাই সময়ের মূল্যায়ন করা অপরিহার্য। জীবন থেকে যে সময় চলে যায় সেই সময় আর ফিরে আসে না। সময়ের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে জ্ঞানের উচ্চতর স্থানে যেমন যাওয়া যায়, আবার সময়ের সদ্ব্যবহার না করলে দুর্ভোগও পোহাতে হয়। পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে আল্লাহ সময় সম্পর্কে বলেছেন। রাসুল (স.) -এর হাদিসেও সময়ের গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষকে সময় ও সুযোগ যেমন দিয়েছেন তেমননি এই সময়ের হিসাবও আল্লাহ তায়ালা নিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

সময় নিয়ে কোরআনে যা বলা হয়েছে

আল্লাহ বলেন, মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়; যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে সহায়তা করে। (সুরা আসর, আয়াত: ১-৩)।

সময়ের হিসাবের নিমিত্তে আল্লাহ তাআলা চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন। কোরআনের বর্ণনা, তিনিই সূর্যকে তেজক্রিয় ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তাদের মনজিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানীদের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন। (সুরা: ১০ ইউনুস, আয়াত: ৫)।

আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, ইহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মনজিল; অবশেষে সেটি শুষ্ক বক্র পুরোনো খেজুর শাখার আকার ধারণ করে। (সুরা: ৩৬ ইয়াসিন, আয়াত: ৩৮-৩৯)।

নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী-পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস ১২টি। (সুরা: ৯ তাওবা, আয়াত: ৩৬)।

সূরা মুজাম্মিলের ২-৪নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তুমি রাতে প্রার্থনার জন্যে দাঁড়াও, রাতের অর্ধেক বা তার চেয়ে কিছু কম বা কিছু বেশি সময় নিয়ে। তুমি সে সময় কোরআন তেলাওয়াত করো শান্তভাবে, সুস্পষ্ট উচ্চারণে, অর্থের প্রতি মনোযোগী হয়ে।

সূরা ইনশিরাহর ৭-৮নং আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন বলেছেন, তুমি দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করো আর যখনই সময় পাও প্রতিপালকের কাছে একান্তভাবে নিমগ্ন হও।

সূরা-আরাফের ১৩১নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যখন ভালো সময় আসত, তখন ওরা বলত এটাই আমাদের প্রাপ্য। আর যখন খারাপ সময় আসত তখন মুসা ও তার সঙ্গীদেরকে ওরা এ দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করত। কিন্তু ওদের দুর্ভাগ্য যে আল্লাহ (প্রণীত নিয়মে) নির্ধারিত ছিল, সে বিষয়ে ওদের কোনো বোধোদয়ই হয়নি।

(হে মানুষ! প্রতি মুহূর্তে তোমার সময় ঘনিয়ে আসছে) তোমার খুব কাছেই, খুব কাছেই! আবার বলছি, তোমার আরো কাছে, আরো কাছে! সময় ঘনিয়ে আসছে! সূরা কিয়ামা, আয়াত ৩৪

 

ওরা কী নিয়ে পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? ২-৫. কেয়ামতের মহাসংবাদ নিয়ে? ওরা সুস্পষ্টভাবেই এ নিয়ে মতবিরোধ করছে। করুক! সময় এলেই ওরা জানতে পারবে। (আবারও বলছি) সময় এলেই ওরা সত্যকে জানতে পারবে। সূরা নাবা, আয়াত ১

(হে মানুষ! সময় থাকতে সতর্ক হও।) আল্লাহকে সেজদা করো এবং শুধু তাঁরই ইবাদত করো। [সেজদা], সূরা নজম, আয়াত ৬২

তারপর সময়ের দুই স্তরে তিনি মহাকাশকে সাতটি স্তরে বিন্যস্ত করলেন। প্রত্যেক স্তরের জন্য বিধিবিধান প্রদান করলেন। নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলেন প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলেন সুরক্ষিত। এ সবকিছুই মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর পরিকল্পনা। সূরা হা-মিম-সেজদা, আয়াত ১২

 

হাদিসে সময় নিয়ে কী বলা আছে

মহানবী হযরত মুহম্মাদ (স.) নিজে সময়কে গুরুত্ব দিতেন এবং তাঁর উম্মতদেরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে তাগিদ দিয়েছেন। প্রতিটি মানুষকে সময়ের হিসাব কিয়ামতের দিন দিতে হবে বলে তিনি সর্তক করে দিয়েছেন।

রাসুল (স.) বলেছেন, শেষবিচারের দিনে ৫টি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে

১. সময় কীভাবে ব্যয় করেছ।

২. মানসিক ও দৈহিক শক্তি কী কাজে ব্যয় করেছ।

৩. সম্পদ কীভাবে অর্জন করেছ।

৪. কীভাবে সম্পদ ব্যয় করেছ এবং

৫. যা সত্য বলে জেনেছ, তা কতটুকু অনুসরণ করেছ।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); তিরমিজী

 

কোনো পশু জবেহ করার সময় যদি আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যাও, তবে (খাওয়ার আগে) আল্লাহর নাম নাও এবং খাও।- আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); দারাকুতনি, আশকালানী

 

সময়ের গুরুত্ব

সময় এই ছোট্ট শব্দটির মধ্যে নিহিত রয়েছে জীবন, গতি, পরিবর্তন এবং অনন্ত প্রবাহের গল্প। সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না, কেউ চাইলে থামিয়েও রাখতে পারে না। সে চলে নিজের নিয়মে, এক অদৃশ্য স্রোতের মতো। সময়ই আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদের প্রত্যেকটি কাজকে দেয় পরিমাপের কাঠামো। সময়ের প্রকৃত রূপ ধরা যায় না সে অদৃশ্য, অথচ সবার উপরে।

সময়কে বলা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। কারণ সে শিক্ষা দেয় ধৈর্য, কষ্ট, অপেক্ষা ও পরিবর্তনের প্রকৃত অর্থ। কেউ সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠে সফল, আবার কেউ অপচয় করে হয়ে পড়ে ব্যর্থ।

বিখ্যাত কবি, পণ্ডিত, দার্শনিক এবং মনীষীগণ সময়কে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। সময় নিয়ে তারা বলেছেন

সময় গেলে সাধন হবে না’— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সময়ের মূল্য বুঝতে হলে, আমরা অবশ্যই আমাদের সময়ের ব্যবহার বুঝতে হবে।’— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সময় নষ্ট করা এক ধরনের আত্মহত্যা, কারণ সময় চলে গেলে তা আর ফিরবে না।, আলী ইবন আবি তালিব

সময় কখনও থামে না, এটি শুধুমাত্র চলে যায়। অস্কার ওয়াইল্ড

তোমার সময়ের মূল্য উপলব্ধি কর, কারণ সময় একবার চলে গেলে তা আর ফিরে আসে না। জন ফিটজেরাল্ড কেনেডি

সময় একটি অব্যর্থ উপহার, যা কখনও ফিরে আসে না। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

ভারতের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালাম সময় নিয়ে যা বলেছেনসময় নষ্ট করা হচ্ছে জীবন নষ্ট করা

কঠোর পরিশ্রম ও সময়ের সদ্ব্যবহারই সাফল্যের চাবিকাঠি

যদি তুমি সময়ের সঠিক ব্যবহার না কর, তাহলে ভবিষ্যত পরিবর্তন সম্ভব নয়।

সময় কখনো ফিরে আসে না। যতটুকু সময় আপনার হাতে রয়েছে, সেটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন

যদি তুমি সূর্যের মতো জ্বলতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে হবে।

যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করে না, তারা অর্ধেক সফলতা অর্জন করে, যা চারপাশে বিষণ্ণতা সৃষ্টি করে।

যারা সময়ের মূল্য জানে না, তারা জীবনে কখনও সফল হতে পারে না।

 

সময় নিয়ে বিখ্যাত উক্তি

 

সময়ই টাকা।’— বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন; অর্থ: সময় নষ্ট করা মানে অর্থ নষ্ট করা।

ভবিষ্যতের কথা ভাবো, তবে সময়কে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমানকে কাজে লাগাও। মহাত্মা গান্ধী

 

সময় এবং পরিস্থিতি কখনোই একরকম থাকে না। বুদ্ধদেব

আপনার সময় সীমিত, তাই অন্যের জীবনের অনুকরণ করে সময় নষ্ট করবেন না।  স্টিভ জবস

সময় হলো একটি তরবারির মতো; তুমি যদি তাকে ব্যবহার না করো, সে তোমাকে কেটে ফেলবে। ইমাম আলী (র.)

Time is very slow for those who wait,

very fast for those who are scared,

very long for those who lament,

very short for those who celebrate.

But for those who love, time is eternal. উইলিয়াম শেক্সপিয়ার

 

চাই না সময়ের স্রোতে অকারণে ভেসে যেতে, চাই সময়ের মতোই ধাবমান, দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে। সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না প্রাচীন প্রবাদ

সময়ই আমাদের সবচেয়ে দামী সম্পদ, অথচ আমরা সেটাই সবচেয়ে বেশি অপচয় করি। Seneca (Stoic দার্শনিক)

যে ব্যক্তি তার সময়ের মূল্য বোঝে না, সে কখনও জীবনের মূল্য বুঝবে না। চার্লস ডারউইন

যা কিছু করার, এখনই করো। আগামীকাল বলে কিছু নেই।’— মার্ক টোয়েন

সময় ব্যবস্থাপনা

প্রাধান্য নির্ধারণ: আপনার কাজগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি তা চিহ্নিত করুন। এতে আপনি আগে সেগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন।

সময় সারণি: দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন। এতে আপনি জানবেন কোন কাজ কখন করতে হবে এবং কখন সময় নষ্ট হচ্ছে।

বিরতি নেওয়া: দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে গেলে একটানা চাপের মধ্যে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া প্রয়োজন, যাতে নতুন উদ্যমে আবার কাজে মনোযোগ দেওয়া যায়।

দূরদর্শী লক্ষ্য: শুধুমাত্র দৈনন্দিন কাজের দিকে মনোযোগ না দিয়ে, ভবিষ্যতের জন্যও পরিকল্পনা তৈরি করুন। এতে আপনি আপনার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা পাবেন।

নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরি: আপনি যখন কাজ করবেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোনও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনার মনোযোগ পুরোপুরি কাজের প্রতি থাকবে।

 

সময়কে কাজে লাগান

সময় বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মতালিকা প্রণয়ন। প্রতি মুহূর্তেই হাজারটি ভিন্ন ধরনের কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোন কাজটি বিশেষভাবে করা প্রয়োজন তা নিরূপণ করতে পারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা সবকিছুই নিখুঁত সুন্দরভাবে করতে চাই। আর বড় কিছু করার তাড়না আমাদের স্নায়ুর ওপর এক অবর্ণনীয় চাপ সৃষ্টি করে। তবে বড় কিছু করতে চাওয়া ও বড় কিছু করা এর মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। বড় কিছু করতে গেলে ছোটখাট অনেক কিছুকে এড়িয়ে যেতে হয়।

কাজের ঝামেলা কমানোর জন্যে আপনার জমে থাকা কাজগুলোকে দুভাগে ভাগ করে ফেলুন। একটি হচ্ছে জরুরি আরেকটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি গ্রুপে অনেক তুচ্ছ বিষয়ও থাকতে পারে। যেমন বসের চিৎকার, টেলিফোনের ঘণ্টাধ্বনি এ ধরনের ব্যাপার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, তুচ্ছ বিষয় নিয়েই আমরা বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি মন দিলে দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যায় এবং সময়ও অনেক বেঁচে যায়।

সবসময় দেখবেন জরুরি কাজ করতে করতে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তের প্রয়োজন পূরণ করার পর দূরপ্রসারী কাজের জন্য সময় পাওয়া যাচ্ছে না। দূরপ্রসারী লক্ষ্যের জন্য প্রতিদিন আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা সময় ব্যয় করুন। পরবর্তী জীবনে দেখবেন এই আধঘণ্টা-একঘণ্টা সময়ই আপনাকে বড় ধরনের তৃপ্তি দিচ্ছে।

আপনার যা যা করা প্রয়োজন তার তালিকা প্রস্তুত করুন। তারপর গুরুত্বের ভিত্তিতে এক থেকে দশ পর্যন্ত নম্বর দিন। এক হচ্ছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ, আর দশ হচ্ছে সর্বনিম্ন। এরপর তালিকার প্রতিটি বিষয়কে জরুরি ভিত্তিতে নাম্বার দিন। এক হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি, আর তিন হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম জরুরি। এরপর গুরুত্ব ও জরুরি এই দুই-এর সংখ্যাকে পূরণ করুন। যে কাজের সংখ্যা সবচেয়ে কম তাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বলে বিবেচনা করুন।

অগ্রাধিকার নিরূপণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে প্রতিদিন দিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত করা। সারাদিন কি করতে হবে লিখে ফেলুন। তারপর সবচেয়ে জরুরি কাজগুলোর পাশে চিহ্ন দিন। এরপর এই কাজটি করতে কত সময় লাগতে পারে তা অনুমান করে দেখুন। যদি দেখেন সবগুলো কাজ করতে আট ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে তাহলে তালিকা সংক্ষেপ করুন। সারাদিন অনুসারে কাজগুলো করতে চেষ্টা করুন।

আমাদের অনেকেই অগোছালো অবস্থায় কাজ করি। এতে সময় লাগে বেশি। একটু সচেতনভাবে গুছিয়ে কাজ করলে সময় ও অর্থ দুইই বাঁচানো যায়।

আমাদের যে সময় নেই তা নয়, আসলে আমাদের মনে হয় আমরা খুব ব্যস্ত। কিন্তু মূল্যবান সময়ের একটা বিরাট অংশ অপচয় হয়, এটা ঠিক। আমাদের অজ্ঞাতসারেই অনেক সময় অহেতুক নষ্ট হয়ে যায়। এই নষ্ট সময়কে বাঁচাতে পারলেও দিনে একাধিক কর্মঘণ্টা যোগ করা সম্ভব।

আমাদের দিনের ৫০ থেকে ৬০ ভাগ সময় অনাহুত দর্শনার্থীর সঙ্গে ও টেলিফোনে খোশালাপ করতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এরকম অনাহুত দর্শনার্থী অফিসে আপনার কক্ষে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান। কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করার পরিবর্তে একটু হেসে জিজ্ঞেস করুন, আমি আপনার জন্য কি করতে পারি? অফিসকক্ষে দেয়ালে একটি বড় ঘড়ি রাখুন, যাতে করে আপনি প্রয়োজনবোধে ঘড়ির দিকে তাকাতে পারেন। তাহলে আপনি দেখবেন যে, আলাপ অহেতুক দীর্ঘায়িত হচ্ছে না।

বোকার মত আমরা অনেক সময় কাজ করার প্রস্তুতি নিতেই প্রচুর সময় ব্যয় করে ফেলি। যেমন কাজ শুরু করার আগে এক কাপ চা বা কফি খেয়ে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া বা কোন টেলিফোন করার আগে পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া। এ সব প্রস্তুতি বাদ দিয়ে সরাসরি কাজে বসে যান এবং সেরে ফেলুন। কাজ শেষ করে নিজেকে চা বা কফি দ্বারা পুরস্কৃত করুন।

এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো নিয়ে আপনি মূল্যবান সময় বাঁচাতে পারেন। দীর্ঘসূত্রিতার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন। সময় যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আসলে আমরা বুঝি না। আধুনিক সভ্যতাই যে শুধু সময়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছে তা নয়, পবিত্র কোরআন শরীফেও সূরা আর রাহমান-এ সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কুল্লো ইয়াওমিন হুয়া ফিস্শান। ফাবি আইয়্যে আলায়ে রাব্বি ক্যুমা তুকাজ্জিবান। অর্থাৎ সময়ের প্রতিটি মুহূর্তেই আমার মহিমা নব নব রূপে দীপ্যমান। তুমি আমার কোন দানকে অস্বীকার করবে? বস্তুত, সময়ের অপচয় করা নিজের অজ্ঞাতসারে স্রষ্টার দান ও মহিমাকে অবহেলা করারই শামিল।

সময় একটি ধারাবাহিক সত্য যার শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও সময় চিরন্তন। জীবনে সফল হতে চাইলে সময়ের মূল্য বুঝতে হবে, এবং তাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

আরও পড়ুন