ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

আনন্দময় কর্মব্যস্ততা শরীর ও মন দুয়ের জন্যেই স্বস্তিদায়ক

দি ব্যাংকার ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭:৪৫, ৪ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৪৫, ৪ মে ২০২৫

আনন্দময় কর্মব্যস্ততা শরীর ও মন দুয়ের জন্যেই স্বস্তিদায়ক

ভীষণ ব্যস্ত মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয়, এত কাজ কেন করেন? তার উত্তর হবে, কাজকে ভালোবাসি তাই। উত্তরটি আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু আপাতত আপনি লোকটিকে ধরে নেবেন কাজপাগল বলে। কাজপাগলদের জীবনের অবস্থা অনেকটা এমন—'ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর, তাই বলে ভেবো না আমায় স্বার্থপর!  

ব্যস্ততা কি আপনায় মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে?

মনে করুন আপনি একটি ‘টু-ডু’ তালিকায় একের পর এক টিক দিচ্ছেন। আচমকা খেয়াল হলো, অনেক বেলা হয়ে গেছে। কাজে ব্যস্ত থাকায় দুপুরের খাবার খাওয়া হয়নি। এমনটি রোজকার ঘটনা হয়ে গেছে। আপনি ধরে নিচ্ছেন, আপনার শরীর মানিয়ে নিয়েছে। অথচ বাস্তবে আপনার শরীরের প্রতিটি কোষই পরের কাজের কথা জানান দিচ্ছে। আপনার এই ব্যস্ততাই শরীরে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে, মানসিক উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগাচ্ছে।

কথায় আছে, "যদি কাউকে দিয়ে কাজ করাতে চান, তবে একজন ব্যস্ত ব্যক্তিকে কাজটি করতে বলুন!” কারণ তিনিই সবচেয়ে কম সময়ে ভালো উপায়ে কাজটি করে দেবেন।

 

সুস্থতার জন্যেও চাই ব্যস্ততা!  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মোট মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। প্রায় ২৫ শতাংশ ব্যাক্তি স্তন ও কোলন ক্যান্সার, ২৭ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩০ শতাংশ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনেও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা দায়ি।

প্রশ্ন হলো, অনেকে সারাদিন ডেস্কে বসেও ব্যস্ত থাকেন। এখানে তার পরিশ্রম ব্রেইনস্টর্মিং। এ ধরণের শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার ফলে আপনার শরীরে ঝিম ধরে। অনেকের হাড়ে সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ক্লান্তি বাড়ে। মস্তিস্ক একটানা অলস থাকায় কাজে মনোযোগ ক্রমেই কমে এবং মেজাজও খিটখিটে হয়।

এ ধরণের কাজ করলে অন্তত আধঘণ্টা পরপর বিরতি নিন। হাত-পা নড়াচড়া করুন। একটু হাটুন।

শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এড়াতে সকাল থেকেই নিজেকে সচল রাখতে হবে। সকালে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন। পড়ার অভ্যাসটি দাঁড়িয়েই করুন। সকালে একটু হাটতে পারলে সেটিও ভালো। রান্নাঘরে টুকিটাকি কাজ করে ফেলুন। দিনে অন্তত আধগঘণ্টা হাঁটুন। তবে কাজের ব্যস্ততার তাড়াহুড়ো করে হাঁটা নয়। আরামদায়ক জুতো পায়ে দিন। সকালের নির্মল বাতাসে চারপাশের প্রকৃতিকেও উপভোগ করুন।

 

সন্তানকে সময় দিন

কাজের চাপে আর তরুণ সময়ের মতো হয়তো খেলতে পারেন না। তাতে কী? নিজের শরীরকে সচল রাখার জন্যই নানা উপলক্ষ্য রয়েছে। বাড়িতে নিজের সন্তানকে হয়তো সময় দিতে পারছেন না। কিন্তু অল্প সময় হলেও সন্তানকে নিয়ে খেলুন। সেজন্য মাঠেই আয়োজন করে যেতে হবে এমন নয়। সন্তানকে আপনি সময় দিলে তারাও উৎসাহী হবে। তাদের আনন্দে আপনিও মানসিক প্রশান্তি পাবেন।  বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব ছোটবেলায় এমনকি পাঁচ বছর বয়সের আগে থেকেই যেসব শিশু খেলাধুলা-দৌড়ঝাঁপের মধ্য দিয়ে অধিকতর সক্রিয় থাকতে অভ্যস্ত তাদের সুষম মনোদৈহিক বিকাশ এবং পরবর্তী জীবনে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।

 

বিষণ্ণতা এড়াতে ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম করেন যারা তারা কর্মচঞ্চল থাকেন। যেহেতু মস্তিস্কও সক্রিয় হয়ে ওঠে তাই ব্যস্ততার চাপে তারা সহজে পিষ্ট হন না। মানসিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ব্যায়াম ও কর্মচঞ্চল থাকেন যারা, তাদের মধ্যে বিষণ্নতার প্রকোপ কম। শুধু তাই নয়, এ ধরণের মানুষের মানসিক সুস্থতাও তুলনামূলক বেশি। 

 

শারীরিক সুস্থতায় যায় মনের অসুখ

দুর্ঘটনায় এক পিতা তার আদরের সন্তানকে হারিয়ে বিষণ্ণ। শোকের মাতমে তার স্বাভাবিক জীবন নানাভাবে বিপর্যস্ত। শরীরে আচমকা অনেক রোগের আলামত মিলেছে।

একদিন তার ছোট্ট মেয়েটা আবদার করলো- বাবা! আমাকে একটা নৌকা বানিয়ে দেবে?

কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে তিনি কাঠের একটি নৌকা বানালেন। নৌকাটি মেয়ের হাতে তুলে দিয়ে তার মনে হলো, ওটা বানানোর এই কয়েক ঘন্টা তিনি পুত্রশোকের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত ছিলেন। কারণ ছেলের মৃত্যুর পর এই প্রথম তিনি এতক্ষণ ছেলেকে নিয়ে ভাবার সময় পাননি।

এরপর থেকে তিনি কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন এবং একসময় পুত্রশোক কাটিয়ে সুস্থ-কর্মক্ষম হয়ে উঠলেন।

 

আনন্দময় কর্মব্যস্ততা 

গবেষক এবং নিউরো-সায়েন্টিস্টরাও এই বিষয়ে একমত।  কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট প্রফেসর ইয়ানিক গ্রিপ। ৬৫ বছর বয়সে অবসরে গেছেন এমন ১০০১ জন সুইডিশ নাগরিককে দুবছর পর্যবেক্ষণ করেন।

প্রফেসর গ্রিপের মতে, প্রবীণদের কর্মসম্পৃক্ততা বিশেষত সেবাধর্মী কাজে ব্যস্ততা, তাদের সুস্থতার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে তারা উদ্যমী থাকেন। এভাবে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডেও তারা সক্ষম থাকেন।

শরীরকে সচল রাখতে দৌড়াতেই হবে এমনটা নয়। মেডিটেশন বা আত্মউন্নয়নমূলক কাজে জড়িত থাকাকেও ব্যস্ত থাকা হিসেবে গণ্য করা হয়।

ফরাসি সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো একবার লিখেছিলেন, "একজন মানুষ নিষ্ক্রিয় হয় না। কারণ সে চিন্তায় নিমগ্ন থাকে। একটি দৃশ্যমান শ্রম আছে এবং একটি অদৃশ্য শ্রম আছে।"

তাই বাস্তব কারণে দৈহিক কসরত করতে না পারলেও মনের চাকাকে সচল রাখুন। আপনি থাকবেন ফিট!

আরও পড়ুন