ফেরদৌস সালাম
প্রকাশ: ১৮:০৯, ১ মে ২০২৫ | আপডেট: ২২:৫৬, ১ মে ২০২৫
সে সময়গুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শিক্ষাঙ্গনে সেশনজট ছিল ভয়াবহ। বলছি ৮০ দশকের শুরুর কথা। ১৯৮২/৮৩ সাল। আমরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর এর শিক্ষার্থী। ১৯৭৬-৭৯ ব্যাচের মাস্টার্স পরীক্ষা হবার কথা ৮০/৮১ সালে। কিন্ত সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো ১৯৮২ সালে। আমাদের মধ্যে অনেকেই অনার্স এর ফলাফল দিয়েই সরকারি আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-বীমায় চাকরির আবেদন করছিল। অনেকে চাকরিতে যোগও দিয়েছে। সে সময় বিসিএস ক্যাডার, সরকারি কিছু চাকরি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চাকরি ছাড়া আর কোনো চাকরির সুযোগই ছিল না। ১৯৮২ সালের শেষ দিকে মাস্টার্স পরীক্ষা হবার পর থেকেই অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন চাকরিতে দরখাস্ত করতে থাকে। আমি মাস্টার্সের ফলাফল বেরুনোর পর বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদন শুরু করি। তখন চাকরির পদসংখ্যা ছিল খুবই স্বল্প। ঠিক সেই মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহে সরাসরি কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটির (বিআরসি) মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ দেয়। আমি এ পর্যায়ে আবেদন করি।
এখানে উল্লেখ্য করা প্রয়োজন মনে করছি যে আমি ছাত্রাবস্হায় ১৯৭৪ সাল থেকেই টাঙ্গাইলে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে দৈনিক দেশবাংলার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করি। আমি তখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ পর্বের ছাত্র। থাকি কবি জসিম উদ্দিন হলে।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানার অন্তর্গত বারইপাড়ায় পৈতৃকভিটা থাকলেও টাঙ্গাইল শহরের প্যাড়াডাইসপাড়ার আমঘাট রোডে স্থায়ী বাসা ও ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে আমঘাট রোডের বাসার ঠিকানাই ব্যবহার করতাম।
চাকরির লিখিত পরীক্ষার পর থানার সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা ও থানা বিআরডিবি কর্মকর্তা পদে নিয়োগপ্রাপ্তির চিঠি আসে। এক পর্যায়ে বিআরসি থেকে চিঠি আসে প্রবেশনারী অফিসার পদে সোনালী ব্যাংকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য। বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন।
মনে পড়ে মৌখিক পরীক্ষায় প্রবাদপ্রতীম ব্যাংকার ব্যাক্তিত্ব সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর লুৎফর রহমান সরকার স্যার ভাইবা বোর্ডে ছিলেন। দৈনিক দেশবাংলায় রীতিমত ইন্টারভিউ দিয়ে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলাম । এরপর সোনালী ব্যাংকেই দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাই ।
ভাইবা বোর্ড মানেই একটা ভীতিকর অনুভূতি। জানা প্রশ্নের উত্তর দিতেও তোতলামি এসে যায়। না পারলে লজ্জার ব্যাপার। এ বিষয়ে এক ধরনের অস্বস্তি অনুভব করি। মাস্টার্সের ভাইভা পরীক্ষায় আমাকে সরদার ফজলুল করিম স্যার চারটা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা এক্সটার্নাল স্যার একটা প্রশ্ন করেছিলেন। সরদার স্যারের একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। তিনি হেসে বললেন, আপনি পারতেন কিন্ত ইন্টারভিউ ভীতি কাজ করছে মনে হয়। তিনি নিজেই উত্তর দিতে সহায়তা করলেন।
বললাম, স্যার পত্রিকায় প্রকাশিত আপনার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ি।
তিনি বললেন, আপনিও কি লেখালেখি করেন ?
বললাম, চেষ্টা করি স্যার।
এরপর আর কোথাও মৌখিক পরীক্ষা দেয়া হয়নি।
স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকের ভাইবা বোর্ড ছিল আমার দ্বিতীয়বার। সোনালীর ভাইবা বোর্ডে আমাকে খুব বেশি প্রশ্ন করা হয়নি।আব্বা এবং আম্মা দুজনেই বলে দিয়েছিলেন সুরা ইখলাস বেশি বেশি পড়ে ভেতরে ঢুকতে। আমাকে বসতে বলা হলো। আমাকে প্রথম প্রশ্ন করা হলো, কেন ব্যাংকে চাকরি করতে চাই?
বললাম, দেশের আর্থ-সামাজিক কার্যক্রমের সাথে এ পেশার সম্পৃক্ততা গভীর। এ ছাড়া এ পেশা সম্মানের। লোকজন সমীহ করে। এখানে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আরও বললাম, আমার আব্বা চান আমি পেশাজীবী হিসেবে ব্যাংকার হই।
একজন বললেন যদি বিসিএস হয়ে যায় তবুও কি থাকবেন।
বললাম, সেক্ষেত্রে অবশ্য ভাবব।
অন্য একজনের প্রশ্ন আপনাকে গ্রামে পোস্টিং দেয়া হলে যাবেন?
বললাম, আমি জানি দেশব্যাপী বিস্তৃত সোনালী ব্যাংক। যে কোনো স্থানে কাজ করতে ইচ্ছুক। উপলব্ধি করলাম ইনশাআল্লাহ নিয়োগপত্র পাব। তখনো আমি জসিম উদ্দিন হলে অবস্থান করছি।
পরদিন দৈনিক দেশবাংলার সহকর্মীদের জানালাম সোনালী ব্যাংকের ভাইবাতো ভালোই হলো। সম্ভবত চাকরি হয়ে যাবে। ভাবছি কী করব? সাংবাদিকতা পেশা থেকে চলে যাব ?
চলবে…