ব্যাংকার প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭:১১, ২৩ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৭:১১, ২৩ জুন ২০২৫
দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার ব্যানানা জাতের আম ইউরোপের তিনটি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার মো. মমিনুল ইসলামের আমবাগান থেকে ১শ' কেজি আম সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সুইডেন ও কাতারে তিন মেট্রিক টন ব্যানানা, কাটিমন, বাবি ফোর জাতের আম রপ্তানি করা হবে।
গত ২১ জুন ব্যানানা জাতের বাছাইকৃত আম ক্যারেটভর্তি করে প্রথম চালান সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আমবাগানের মালিক মমিনুল ইসলাম।
তিনি জানান, বিরলের সদরডাঙ্গা গ্রামে ৪ একর জমিতে ব্যানানা, বারি ফোর, কাটিমন ও বিএন সেভেন জাতের আম চাষ করা হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিরা বিরল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসে ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে আমের চাষ শুরু করেছেন। তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরামর্শক্রমে আমবাগান শুরু করি। ২০১৯ সালে ৪ একর জমির ওপর উন্নত জাতের ও সুস্বাদু এই আমবাগান প্রকল্প হাতে নিই।
মমিনুল জানান, গত বছর গাছে সামান্য পরিমাণ আম ধরলেও এবার ব্যাপক হারে ফলন হয়েছে। ছোট আকারের ব্যানানা জাতের একেকটি গাছে ১০০ থেকে ২৫০টি পর্যন্ত আম ধরেছে। চমৎকার রং ও আকৃতির কারণে আমটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রথমে স্বল্প পরিমাণে চাষ শুরু করলেও সফলতা দেখে আগ্রহ বেড়ে যায়। বর্তমানে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে জমি লিজ নিয়ে মোট ১৮ একর জমির ওপর আমবাগান করেছি। বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ৫৬০টি বিভিন্ন জাতের আমগাছ রয়েছে।
তিনি আরো জানান, আমার এই আমবাগানে ২৫ থেকে ৩০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গত বছর স্বল্প পরিমাণ ফলন হলেও এবার কয়েক টন আম পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। ২০ জুন থেকে আম সংগ্রহ শুরু করেছি। বাগান থেকেই ব্যানানা জাতের আম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে আম কিনে নিচ্ছেন। আশা করছি, এই দামে বিক্রি হলে কয়েক লাখ টাকা আয় হবে।
ক্রেতা দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী মহল্লার কলেজ শিক্ষক মো. নাজমুল হাসান বলেন, গত বছর তিনি মমিনুল ইসলামের বাগান থেকে ২ কেজি ব্যানানা আম কিনেছিলেন। এই আম খেতে খুব সুস্বাদু হওয়ায় এবারও ১২০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি কিনেছেন। তিনি জানান, নিজে খাবো এবং আত্মীয়-স্বজনদেরও খাওয়াবো।
মমিনুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তফা হাসান ইমামের পরামর্শ ও সহায়তায় গত বছর ইংল্যান্ডে আম পাঠিয়েছিলাম। এ বছর সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও কাতারে রপ্তানির জন্য কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ নির্দেশনা পেয়েছি। এবার প্রথমবারের মতো আমার সদরডাঙ্গা বাগান থেকে ব্যানানা জাতের ১০০ কেজি আম ক্যারেটে করে রপ্তানি করছি। আশা করছি, ইউরোপের আরো কিছু দেশ থেকে অর্ডার পাব।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, কৃষি সম্ভাবনাময় উপজেলা হিসেবে বিরল ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। এখানে আগে থেকেই প্রচুর লিচু উৎপাদন হত। এখন আম উৎপাদনও উন্নতি বেড়েছে। ইতিমধ্যে অনেক চাষি আম চাষে উৎসাহিত হয়ে বড় বড় বাগান গড়েছেন। গত বছর এখান থেকে ইংল্যান্ডে প্রথম আম পাঠানো হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে আমরা তিনটি দেশ থেকে আম রপ্তানির সুযোগ পেয়েছি। এরই অংশ হিসেবে ১০০ কেজি ব্যানানা আমের প্রথম চালান পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো তিন মেট্রিক টন পাঠানো হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, দিনাজপুরে উৎপাদিত ব্যানানাসহ কয়েকটি জাতের আম গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানি করা হয়। চলতি বছর ইউরোপের কয়েকটি দেশ ফলটি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করে আম সংগ্রহ ও রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এএ
ব্যাংকার প্রতিবেদন