ব্যাংকার প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭:৪২, ৫ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৪৩, ৫ মে ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিশন হল মানসম্মত সেবা ও এর কর্মীদের দক্ষতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে একটি আধুনিক, গতিশীল, কার্যকর ও দূরদর্শী কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে দেশের অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ঘটানোর জন্য বাংলাদেশি টাকার অভ্যন্তরীণ ও বহিঃমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে দেশের মুদ্রা ও আর্থিক বাজার ব্যবস্থাপনার কাজ করা। আর এই ভিশন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মিশন হলো জাতীয় স্বার্থে দেশের উৎপাদনশীল সম্পদের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে এবং বাংলাদেশি টাকার অভ্যন্তরীণ মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও এর প্রতিযোগিতামূলক বহিঃমূল্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মুদ্রা ও ঋণনীতির ব্যবস্থাপনা করা।
এসব উদ্দেশ্যাবলি অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধানত (১) মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে; এবং (২) সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে।
১৯৭২ সালের ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার’ অনুযায়ী নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত হয়:
১. মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষিত তহবিল রক্ষণাবেক্ষণ;
২. অভ্যন্তরীণভাবে মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে মুদ্রা ও ঋণকাঠামোর ব্যবস্থাপনা;
৩. বাংলাদেশি টাকার বৈদেশিক মান রক্ষণ;
৪. উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও প্রকৃত আয়ের উচ্চমান সৃষ্টি ও তা রক্ষণ এবং
৫. জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশের উৎপাদনী সম্পদের প্রসার ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ।
সংগঠন ও কাঠামো
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ ১৯৭২ অনুসারে এই ব্যাংকের অফিস ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেটে স্থাপিত হবে বলে বলা হয়। এছাড়া ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে ‘ঢাকা অফিস’ নামে একটি স্থানীয় অফিসও (বর্তমানে মতিঝিল অফিস) করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে বা বাইরে অফিস, এজেন্সি, শাখা ইত্যাদি খোলার অধিকার বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে। অবশ্য এর জন্য সরকারের পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। এসব শাখা প্রধান কার্যালয়ের আদেশ-নির্দেশ অনুসারে পরিচালিত হয়।
ব্যাংকটির বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ও কার্যক্রম অনুমোদনের দায়িত্ব একটি পর্ষদের উপর ন্যস্ত। ৯ (৩) মোতাবেক এ পর্ষদ গঠিত হবে- গভর্নর; গভর্নর কর্তৃক মনোনীত একজন ডেপুটি গভর্নর; সরকার কর্তৃক মনোনীত সরকারি কর্মকর্তা নন এমন চারজন পরিচালক যাদের ব্যাংকিং, ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত তিনজন সরকারি কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে জারিকৃত আদেশে শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তা মনোনয়ন করা হতো। তাঁর ভোট দানের ক্ষমতা ছিল না। নতুন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাতন্ত্র্য কিছুটা খণ্ডিত হয়েছে। গভর্নর সরকার কর্তৃক মনোনীত হন। তাঁর কার্যকাল চার বছর এবং তিনি পুনরায় নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারেন।
সরকার এক বা একাধিক ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ করতে পারে। ডেপুটি গভর্নরগণ দৈনন্দিন কার্যক্রমে গভর্নরকে সাহায্য করে থাকেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে তিনটি ডেপুটি গভর্নর পদ রয়েছে। ডেপুটি গভর্নরদের কাজে সহায়তা করার জন্য রয়েছেন নির্বাহী পরিচালক। নির্বাহী পরিচালকগণের প্রত্যেকেই ব্যাংকের এক বা একাধিক বিভাগের কার্যাবলি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে নিয়োজিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য এর কিছু বিভাগ রয়েছে। বর্তমান বিভাগগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ, অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ, ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, মনিটারি পলিসি বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, কৃষিঋণ বিভাগ, এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, পরিসংখ্যান বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি প্রধান। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব নির্দিষ্ট। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে একজন মহাব্যবস্থাপক বিভাগের কাজের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন করে থাকেন।
প্রধানত ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ অনুযায়ী ব্যাংকটির কার্যাদি পরিচালিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৯৬২ সালের ব্যাংকিং কোম্পানি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী কার্যক্রম ও নীতি নির্ধারণ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ কার্যক্রম ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতোই প্রধানত দুটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই দুটি বিভাগ হলো ইস্যু বিভাগ এবং ব্যাংকিং বিভাগ। ইস্যু বিভাগের মূল দায়িত্ব হলো নোট ইস্যু করা এবং ব্যাংকিং বিভাগ মূলত সাধারণ ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাত্রার প্রাথমিক পর্যায়ে এই দুই বিভাগের হিসাব নিকাশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক কার্যবিবরণী’র মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হতো।
পরিচালনা পর্ষদ
‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার-১৯৭২’ এর ৯ ধারায় এর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সবিস্তার নির্দেশনা রয়েছে। উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা একটি পরিচালনা পর্ষদের উপর ন্যস্ত করা হয়। পরিচালনা পর্ষদের বিন্যাস নিম্নরূপ:
(ক) গভর্নর;
(খ) সরকার মনোনীত একজন ডেপুটি গভর্নর;
(গ) ব্যাংকিং, ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প অথবা কৃষিতে অভিজ্ঞ এমন চারজন সরকার মনোনীত পরিচালক যারা সরকারি কর্মকর্তা নন;
(ঘ) সরকার মনোনীত তিনজন সরকারি কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, এ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণকালীন প্রধান নির্বাহী ও গভর্নর স্বয়ং।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২’ অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণকালীন প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন গভর্নর। এ অর্ডারে গভর্নরের পদমর্যাদা অন্যান্য ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর তুলনায় ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী অর্থাৎ গভর্নর নিজেই বোর্ডের চেয়ারম্যান।
এএ
ব্যাংকার প্রতিবেদন