ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

বিদেশে শাখা খুলতে পারবে শুধু ভালো ব্যাংকগুলোই

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৬:৫৩, ১২ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৫৩, ১২ মে ২০২৫

বিদেশে শাখা খুলতে পারবে শুধু ভালো ব্যাংকগুলোই


কোন ব্যাংকগুলো দেশের বাইরে অফিস বা শাখা খুলতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতিমালায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, শুধুমাত্র আর্থিকভাবে মজবুত, অভিজ্ঞ ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির ব্যাংকগুলোই দেশের বাইরে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি পাবে। ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিদেশে দেশীয় ব্যাংকগুলোর ব্যবসা করা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালা দিয়েছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদেশে শাখা খুলতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কমপক্ষে সাত বছরের কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি, ব্যাংকটির আর্থিক রেটিং ‘শক্তিশালী’ বা ‘সন্তোষজনক’ হতে হবে এবং অবশ্যই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত হতে হবে। ফলে দুর্বল এবং স্বল্প অভিজ্ঞ ব্যাংকগুলোর জন্য বিদেশে কার্যক্রম বিস্তারের পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে গেল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসার ঘটেছে। এ জন্য লেনদেন সুষ্ঠু ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য দেশের কোনো কোনো ব্যাংক ২০০১ সাল থেকে বিদেশে শাখা, ফাইন্যান্স কোম্পানি, এক্সচেঞ্জ হাউস, প্রতিনিধি অফিস ইত্যাদি স্থাপন করে বিদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দেশের গ্রাহকদের আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো বিদেশে তাদের বিভিন্ন সহযোগী কোম্পানি স্থাপনের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, দুই দশকে বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবসায়ের ধরন ও পরিধি বেড়েছে। বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির বাস্তবতায় ব্যাংক খাতে অবকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন পণ্য ও সেবার প্রচলন ঘটেছে। তবে বৈশ্বিক নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওভারসিস ব্যাংকিং–সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটানোর পাশাপাশি আত্তীকরণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার রূপরেখা ও এ–সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রণয়নের বিষয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম আদর্শরূপে পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণের জন্য নীতিমালায় পরিবর্তন, সংযোজন, পরিমার্জন, পরিবর্ধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক, ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, সেগুলোতেই কেবল ব্যাংক-কোম্পানির শাখা, প্রতিনিধি অফিস ও সহযোগী কোম্পানি স্থাপন করা যাবে।

শর্তে হিসেবে বলা হয়েছে, বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশি নাগরিক নিয়োগ দিতে হবে। তাদের অর্জিত অর্থ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের নীতিমালা বাংলাদেশের জন্য অনুকূল হতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা মনিটরি অথরিটি তথা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে। কোনো দেশে বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ইতিমধ্যে অন্য কোনো বাংলাদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা, প্রতিনিধি অফিস বা কোনো সহযোগী কোম্পানি বিদ্যমান থাকলে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনে নতুন শাখা স্থাপনের যৌক্তিকতা উপযুক্ত তথ্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিদেশে প্রস্তাবিত শাখা, প্রতিনিধি অফিস বা সহযোগী কোম্পানিতে প্রয়োজনীয় লোকবলের সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগ বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্য থেকে হতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এক্সচেঞ্জ হাউস স্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ও তাদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ এবং সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেনের মোট পরিমাণ বিবেচনায় আনতে হবে। বিদেশে শাখা, প্রতিনিধি অফিস বা সহযোগী কোম্পানি স্থাপনের প্রস্তাব আবেদনকারী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। ব্যাংকের বিদেশে শাখা বা সহযোগী কোম্পানি থেকে অর্জিত নিট মুনাফা প্রতি আর্থিক ও পঞ্জিকা বছর শেষে দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত শাখা বা সহযোগী কোম্পানির দৈনন্দিন পরিচালন ব্যয় এবং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বেতন–ভাতা শাখা বা সহযোগী কোম্পানির অর্জিত আয় থেকে নির্বাহ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে দেশের কিছু ব্যাংক বিদেশে শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস, ফাইন্যান্স কোম্পানি ও প্রতিনিধি অফিস খুলে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কিন্তু এর পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করতে এই নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এএ

 

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন