ঢাকা, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

২০ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ মুহররম ১৪৪৭

ব্যাংকিং খাত ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১:৩৮, ৪ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১১:৩৮, ৪ জুলাই ২০২৫

ব্যাংকিং খাত ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা

চলমান বিশ্বে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও সর্বোত্তম ব্যবহার অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন দেশের আর্থিক খাত, বিশেষত ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আর্থিক খাতে গতি সঞ্চারের জন্য অত্যাবশ্যক। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আধুনিক ও সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড করতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে। 

সর্বোচ্চ দক্ষতা ও নিপুণতার সঙ্গে সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকারাবদ্ধ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম পাঁচ বছর মেয়াদি (২০১০-১৪) একটি কৌশলগত পরিকল্পনার মেয়াদ সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচবছর মেয়াদি (২০১৫-১৯) একটি কৌশলগত পরিকল্পনা শেষ করেছে।
 
পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর আন্তর্জাতিক মানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম অটোমেশনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০৩ সালের শেষার্ধে সেন্ট্রাল ব্যাংক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট সেল গঠনের মাধ্যমে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট (সিবিএসপি)’-এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। এরপর হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ এর ২২ জুলাই ২০১৫ তারিখের প্রশাসনিক পরিপত্র ১১ এর মাধ্যমে সেলটি পুনর্গঠনপূর্বক ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট এন্ড স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট নামকরণ করা হয়। 

বিভাগটির পূর্বতন সেন্ট্রাল ব্যাংক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট সেল ও স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ইউনিট কর্তৃক সম্পাদিত কাজ এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বাস্তবায়নযোগ্য ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্টের কাজসহ আনুষঙ্গিক সকল কাজ সম্পাদন করা হয়। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম অটোমেশনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। 
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সার্ভার ও যন্ত্রসামগ্রী ব্যবহার করে এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার স্থাপন করা হয়েছে। পেপারলেস ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রয়োগ করে গ্রিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।

আন্তঃশাখা নেটওয়ার্কিং
নেটওয়ার্কিং প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক, শাখাসমূহের মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপনসহ আধুনিক ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক ডাটা সেন্টার এবং ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষিত সকল তথ্য-উপাত্তের যথাযথ নিরাপত্তা বজায় রেখে সঠিক তথ্য পাওয়া সহজলভ্য করা হয়েছে। ইন্টারনেট ও ইন্ট্রানেট সংযোগ চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত সব বিভাগ এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ১০টি শাখা অফিসকে একটি অভিন্ন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা ইন্টারনেট ও ইন্ট্রানেট সুবিধা পাচ্ছেন। সর্বোপরি ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী ও ব্যবহারকারী উভয়েই উল্লিখিত সমন্বিত নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার সুবিধা গ্রহণ করে।

এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি)
এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) এর আওতায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় ও নির্ভুলভাবে সম্পাদন করা হচ্ছে। এর সুফল হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ নিজ নিজ ডেস্ক থেকে ইন্ট্রানেটের মাধ্যমে তাদের নিজেদের বেতন বিবরণী, হিসাব স্থিতি এবং মানবসম্পদ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যাদি জানতে পারছেন। ইআরপি ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদরাজি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে।স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত হচ্ছে।

ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম অটোমেশনের লক্ষ্যে ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের আর্থিক লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণ অর্থাৎ ট্রেজারি বিল/বন্ডের মাধ্যমে গৃহীত ঋণ ব্যবস্থাপনা; ট্রেজারি বিল/বন্ড বিক্রয়, পুনঃক্রয়, সেকেন্ডারি ট্রেডিং; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা; প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র, ওয়েজ আর্নার্স বন্ড, বিভিন্ন বিনিয়োগ বন্ড বিক্রয়, মুনাফা প্রদান ও ভাঙানো ইত্যাদি কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এই সফ্টওয়্যারের আওতায় ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার পদ্ধতির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে। তাছাড়া এই সফ্টওয়্যারটি এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং ও এন্টারপ্রাইজ ডাটা ওয়্যারহাউজের চাহিদামাফিক ডাটা সরবরাহ করছে।

এন্টারপ্রাইজ ডাটা ওয়্যারহাউজ
বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার হিসেবে এন্টারপ্রাইজ ডাটা ওয়্যারহাউজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সফ্টওয়্যারসমৃদ্ধ এই ডাটা ওয়্যারহাউজে রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাভাণ্ডার। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত যেমন-আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রানীতিসহ ব্যাংকিং খাতের অন্যান্য বিষয়সহ ক্রেডিট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে এখানে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রেশনালাইজড ইনপুট টেমপ্ল্যাট ফরমেটে তাদের অফিস থেকেই বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবপোর্টালে আপলোড করার সুবিধা পাচ্ছে। এসব তথ্য ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি, মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক সুপারভিশন সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণ প্রভৃতি কাজ দ্রæত সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। ১৯৭২ সাল থেকে সব ঐতিহাসিক তথ্য ডিজিটাল ফরমেটে রূপান্তর ও হালনাগাদ করে সেগুলো তথ্য সার্ভারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

ওয়েবসাইট উন্নয়ন
নিজস্ব উদ্যোগে ২০০১ সালে প্রথম চালুকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বাধুনিক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে। সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল এই ওয়েবসাইটটি থেকে ব্যবহারকারীরা ইতোমধ্যে উপকৃত হচ্ছেন। ওয়েবসাইটটি আর্থিক ও অর্থনৈতিক গবেষণার প্রয়োজনীয় হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করছে এবং ব্যবহারকারীদের সব রকমের চাহিদা পূরণ করছে।

ইন্ট্রানেট উন্নয়ন
ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ তথ্য বিনিময় ও শেয়ারিংয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে ইন্ট্রানেট উন্নয়ন করা হয়েছে। বিভিন্ন রেগুলেশন, গাইডলাইন, সার্কুলার, ফরম ইত্যাদির ডিজিটাল ভার্সন ইন্ট্রানেটে আপলোড ও প্রদর্শন করা হচ্ছে। ইন্ট্রানেটের ফোন ডাইরেক্টরি মডিউলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তার ফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি ও অন্যান্য তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছুটি ব্যবস্থাপনা, সভাকক্ষ বুকিং, মোটরযান রিকুইজিশন ইত্যাদি ইন্ট্রানেটে অন্তর্ভুক্ত করায় খুব সহজেই কম সময়ের মধ্যে এ সংক্রন্ত দৈনন্দিন কাজ আরও দ্রুত ও সহজে সম্পন্ন সম্ভব হচ্ছে।

ওপেন ডাটা ইনিশিয়েটিভ
জনসাধারণকে সহজে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সেপ্টেম্বর ২০১১ সাল থেকে ওপেন ডাটা ইনিশিয়েটিভ নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখানো হচ্ছে। এতে গবেষকদের পক্ষে মুখ্য অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া সহজ হয়েছে। বিভিন্ন সূচকের তথ্য-উপাত্ত এক্সেল ফরমেটে পাওয়া যাচ্ছে। এর মাধ্যমে জনসাধারণ লেনদেন ভারসাম্য, অর্থের জোগান, জাতীয় আয় ও ব্যয়ের হিসাব, ভোক্তা মূল্যসূচক, পুঁজিবাজারের মূল্যসূচক, সুদের হার, রেমিট্যান্স, বিনিময়হার, পণ্যমূল্য, রাজস্ব আয় ইত্যাদি বিষয়ে হালনাগাদ তথ্যসহ বিশ বছরের পুরোনো তথ্যও অনলাইনে সংগ্রহ করতে পারছেন। প্রতিমাসেই এসব তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব সফ্টওয়্যার
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম অটোমেশনের অংশ হিসেবে এর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত প্রায় ৮৫টি সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে এর বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজের দক্ষতা ও স্বচ্ছতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এসব সফ্টওয়্যার বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব জনবল দিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ই-টেন্ডারিং
ক্রয়সংক্রান্ত কার্য সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১২ মে ২০১০ ওয়েবভিত্তিক ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করেছে। বাংলাদেশের সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকেই প্রথম অনলাইনে দরপত্র আহ্বান, দরপত্র গ্রহণ, মূল্যায়নসহ দরপত্র সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সুচারূভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে নিরপেক্ষ টেন্ডারিং পদ্ধতি বাস্তবায়িত হয়েছে। এ সফ্টওয়্যারে ডাটা সিকিউরিটি ও ডাটা ইন্টিগ্রিটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অডিট ট্রায়ালসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিটি সিকিউরিটি পলিসি অনুসরণ করা হয়েছে।

ই-রিক্রুটমেন্ট
৩১ মে ২০০৯ তারিখ থেকে অনলাইন রিক্ক্রুটমেন্ট সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে সরাসরি দরখাস্ত গ্রহণ থেকেশুরু করে সার্বিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাকরিপ্রার্থীরাও খুব সহজেই অনলাইনে ছবিসহ আবেদন দাখিল করতে পারছেন। চাকরিপ্র্রার্থীদের আবেদনপত্র অনলাইনে গ্রহণ, বাছাই, প্রবেশপত্র প্রদান, দৈবচয়ন পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীদের আসন বণ্টন, ফলাফল ঘোষণা, নিয়োগপত্র দেওয়াসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সামগ্রিক কাজ এই সফ্টওয়্যার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সিস্টেমটি চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে ২৭টি ব্যাচে এক হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

ই-লাইব্রেরি
বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ মে ২০১২ তারিখে একটি অনলাইন লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যার ‘ই-লাইব্রেরি’ সেবা চালু করেছে। ই-লাইব্রেরিতে বর্তমানে ৫ হাজার ই-বুক, ২৫ হাজার ই-জার্নাল, প্রায় ৫০০ আর্টিকেল সমৃদ্ধ তিনটি ই-ম্যাগাজিন এবং প্রায় ১৮ হাজার শিরোনামের ৩৫ হাজার বইয়ের তথ্য রয়েছে। লাইব্রেরির বই ও জার্নালগুলো ইস্যু, রিটার্ন, এন্ট্রিসহ বই লেনদেনের সকল প্রক্রিয়া ই-লাইব্রেরি সেবার মাধ্যমে করা হচ্ছে। ই-লাইব্রেরি সফ্টওয়্যার ব্যবহারকারীরা ‘লগইন’ করে প্রয়োজনীয় বই ও জার্নালের সরবরাহ থাকা সাপেক্ষে আটচল্লিশ ঘণ্টার জন্য তা রিজার্ভ করতে পারছেন এবং পড়ার জন্য ইস্যুও করতে পারছেন।

ই-নিউজ ক্লিপিং
বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ মে ২০১২ তারিখ থেকে ই-নিউজ ক্লিপিং সেবা চালু করেছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত ও আর্থসামাজিক অবস্থাসহ নানা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সংক্রান্ত সংবাদগুলো যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীরা নিজ নিজ ডেস্কে বসে পড়তে পারেন সেজন্য ‘ই-নিউজ ক্লিপিং’ সফ্টওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে সব পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রতিদিন অনলাইনে এসব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ক্লিপিং পড়তে পারছেন।

ইএক্সপি অনলাইন মনিটরিং সিস্টেম
দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল, নির্ভুল এবং স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে ইএক্সপি অনলাইন মনিটরিং সিস্টেম সফ্টওয়্যারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। তবে, তার আগেই ১ নভেম্বর ২০১১ তারিখ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য অনলাইন ইএক্সপি ফরম ম্যাচিং সিস্টেম চালু হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা থেকে অনলাইনে রপ্তানির তথ্য সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটাবেজে যুক্ত হয়। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের রপ্তানি বাণিজ্য মনিটরিং করে থাকে। ব্যাংকগুলো যেন তাদের রপ্তানির তথ্য নিজেরাই মনিটরিং করতে পারে সে ব্যবস্থাও এ সফ্টওয়্যারটিতে রয়েছে। একইসঙ্গে একটি ব্যাংকের তথ্য যাতে অপর ব্যাংকের কাছে গোপন থাকে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ইএক্সপি অনলাইন মনিটরিং সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে রপ্তানিকৃত পণ্যের বিপরীতে প্রত্যাবাসিত অর্থের পরিমাণ, মেয়াদোত্তীর্ণ রপ্তানি বিল ইত্যাদি মনিটর করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিষয়ে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়াসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা
হচ্ছে।

রপ্তানি ও আমদানি মনিটরিং
ব্যাংকগুলো বর্তমানে ওয়েবভিত্তিক রপ্তানি ও আমদানি মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্য সংক্রান্ত তথ্যাদি আপলোড করতে পারছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশের সার্বিক আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের দৈনিক বা সমসাময়িক তথ্য সহজেই সংগ্রহ করতে পারছেন।

টিএম ফরম ও ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স মনিটরিং
আমদানি ছাড়া অন্যান্য বহির্মুখী বৈদেশিক রেমিট্যান্সের তথ্য ওয়েবভিত্তিক টিএম ফরম ম্যানেজমেন্ট ও সকল অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের তথ্য অনলাইন ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পাঠাতে হচ্ছে। এ সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স সংক্রন্ত তথ্যাদি সহজেই দেখতে পারছে।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজার মনিটরিং সিস্টেম
এ সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, মানি চেঞ্জার ও অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংক শাখার বৈদেশিক মুদ্রাবাজার সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।

কৃষিঋণ মনিটরিং সিস্টেম
কৃষিঋণ মনিটরিং সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃক বিতরণকৃত কৃষিঋণ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য, যেমন ঋণ ও পাসবই বিতরণ, মামলা, সুদ মওকুফ ইত্যাদি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে এবং চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে। ফলে কৃষিঋণ বিষয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরির কাজ সহজ ও গতিশীল হয়েছে।

প্রাইজবন্ড ও সঞ্চয়পত্র সিস্টেম
পূর্বে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে জনসাধারণ প্রাইজবন্ডের ফলাফল জানতে পারত। নিজের কাছে সংরক্ষিত প্রাইজবন্ডের প্রতিটি নম্বর তখন পৃথক পৃথকভাবে মিলিয়ে দেখতে হতো যা ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। অনলাইন সুবিধা চালুর ফলে তাঁরা দৈনিক পত্রিকা ছাড়াও খুব সহজেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে সহজেই প্রাইজবন্ডের ফলাফল দেখতে ও সার্চ ইঞ্জিনে প্রাইজবন্ডের সিরিয়াল নম্বর টাইপ করে যুগপৎ দুই বছরের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে মেলাতে পারছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখ থেকে সঞ্চয়পত্র সিস্টেমে সফ্টওয়্যার প্রচলন সম্ভব হয়েছে। কার্যত ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঞ্চয়পত্রের অর্থ সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ সংক্রান্ত এ সফ্টওয়্যার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অটোমেশনকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। এটি সরকারের রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে নতুন একটি মাইলফলক। নতুন সিস্টেমে অটোমেটেড পদ্ধতিতে গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধিকল্পে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের পরিশোধ সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এতে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা জমা হওয়ায় তিনি তাঁর সুবিধামতো যে কোনো সময়ে হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারেন।

এক কথায়, বিনিয়োগকারী সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ভাঙানো, মুনাফা উত্তোলন এবং মেয়াদপূর্তিতে আসল নগদায়ন প্রক্রিয়াও আগের তুলনায় দ্রুততার সঙ্গে ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করতে পারছেন। এ ছাড়াও অনলাইন সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিক্রিত সব রকমের সঞ্চয়পত্রের বিক্রয় বিবরণী, মুনাফার হিসাব ও সঞ্চয়পত্রের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালিত হচ্ছে।

মেডিকেল ইনফরমেশন সিস্টেম
মেডিকেল ইনফরমেশন সিস্টেম সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেডিকেল সুবিধার আওতায় চিকিৎসকদের দেওয়া প্রেসক্রিপশন প্রদান, ওষুধের মজুদ হালনাগাদ করাসহ বাংলাদেশ ব্যাংক চিকিৎসা কেন্দ্রের সার্বিক কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এ সিস্টেমের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসগুলোর চিকিৎসাকেন্দ্র সংযুক্ত করে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।

ট্রেনিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
ট্রেনিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (টিএমএস) সফ্টওয়্যারে বার্ষিক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণসূচি, ক্লাসরুটিন তৈরি, প্রশিক্ষণার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ছাড়পত্র, ফলাফল তৈরি, বক্তার তথ্য, বক্তা মূল্যায়ন, ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি (বিবিটিএ) আয়োজিত সকল ট্রেনিং কর্মসূচি এই সফ্টওয়্যারে সুশৃঙ্খলভাবে সন্নিবেশিত থাকায় যে কোনো সময় প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে।

অনলাইনে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সেকেন্ডারি ট্রেডিং
১৭ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে অনলাইনে ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনাবেচার সেকেন্ডারি বা দ্বিতীয় স্তর বাজারের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। একটি ট্রেড ওয়ার্ক স্টেশনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের মতো অনলাইনে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনাবেচার এ নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। টিডব্লিউএস এর মাধ্যমে কেনাবেচার ক্ষেত্রে কে বিক্রি করছে, কে কিনছে তা সবাই জানতে পারবে না। এখানে টিকার স্ক্রিনে বিভিন্ন মেয়াদের বিল ও বন্ডের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য, বিক্রি বা কেনার পরিমাণের আগ্রহ, আয় (ইল্ড) ইত্যাদি তথ্য থাকবে। যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে।

ইলেকট্রনিক ড্যাশবোর্ড
ব্যাংকগুলোর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন সংক্রান্ত অনিয়ম সনাক্ত করার জন্য চারটি অনলাইন রিপোর্টিং মডিউল সমন্বয় করে প্রবর্তন করা হয়েছে ইলেকট্রনিক ড্যাশবোর্ড। এই পদ্ধতিতে আমদানির ক্ষেত্রে এলসি, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি, স্থানীয় এলসি, স্থানীয় বিল ক্রয়; রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানির পরিমাণ, রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসন, বকেয়া রপ্তানি বিল ও মেয়াদোত্তীর্ণ রপ্তানি বিল এবং প্রবাসী-আয় (ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স) ও বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো অর্থের (আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স) তথ্যসহ সব রকমের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের তথ্য অনলাইনে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হবে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের নিজ নিজ শাখাগুলো মনিটর ও তত্ত্বাবধান করতে পারবে।

বৃহৎ ঋণ মনিটরিং সফ্টওয়্যার
বৃহৎ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নততর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং ঋণের কেন্দ্রীভ‚ত হওয়ার প্রবণতা রোধ করার প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্যে গ্রাহকের ঋণ তথ্যসম্বলিত বৃহৎ ঋণ মনিটরিং সফ্টওয়্যার চালু করা হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় প্রায় সকল বৃহৎ ঋণগ্রহীতার ঋণের হিসাব তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রাখা সম্ভব হবে। এর ফলে প্রত্যেকটি ব্যাংকের নন-ফান্ডেড সুবিধা ফান্ডেড ঋণে রূপান্তর, ধারাবাহিক বিবর্তন ও এর পরিমাণ জানা যাবে এবং এসব ঋণের মনিটরিং সহজতর হবে। বর্তমানে আরও কিছু সফ্টওয়্যার উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ সিস্টেম, সার্কুলার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, স্ট্যাট্যুইটরি রিজার্ভ মনিটরিং সিস্টেম, ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আইটি ল্যাব স্থাপন
তথ্য-প্রযুক্তিগত প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন পরবর্তী কার্যক্রমকে সমর্থন জোগাতে সব ধরনের লজিস্টিক সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আইটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

তথ্য-প্রযুক্তিগত উন্নয়নে স্বীকৃতি
২০১১ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফ্টওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত সফ্টওয়্যার মেলায় ‘ডিজিটাল চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে পুরস্কৃত করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংককে এই পুরস্কার
দেওয়া হয়।

সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস
এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন