ব্যাংকার ডেস্ক
প্রকাশ: ১০:৪৪, ২০ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১০:৪৫, ২০ জুন ২০২৫
ঈদুল আজহার ঠিক আগ মুহূর্তে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট ইস্যু করা হয়। নতুন নোট বাজারে ছাড়া হলেও প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল প্রস্তুতি ও সমন্বয়ের ঘাটতিতে সেটি এখন গ্রাহকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব নতুন নোট ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) না নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ও ভোগান্তি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন গ্রাহক নতুন নোটটি সিআরএম বুথে জমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু মেশিনটি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। মেশিনগুলো নতুন নোট শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বারবার তা প্রত্যাখ্যান করছে—কখনো কখনো কাগজ হিসেবে গণ্য করে নোটটি ফিরিয়ে দিচ্ছে।
গ্রাহকরা এ নোট জমা দিতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় এটিএম ও সিআরএম বুথে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিষয়টি সমাধানে কাজ চলছে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বলছে, ডিজাইন, সিকিউরিটি ফিচার, সাইজ, ওজন, জলছাপ মেশিনে আপলোড করতে হয়। এটা করতে প্রায় দুই মাসের মতো সময় প্রয়োজন পড়ে। আর এসব সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আপাতত কিছুদিন এভাবে চলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, ঈদের আগে ১ জুন নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়। এর পর ৪ থেকে ১৪ জুন টানা ১০ দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। তিন ধরনের নোট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাজারে ছাড়া হয়েছে ৬০০ কোটি টাকার কম। এসব কারণে কোনো কোনো ব্যাংক হয়তো তাদের নিজেদের সফটওয়্যার প্রোগ্রামে নতুন নোট এখনও অন্তর্ভুক্ত করেনি । তবে এটা কঠিন কোনো বিষয় না। ব্যাংকগুলো চাইলেই বুথের ভেন্ডাররা যা করতে পারেন। দুয়েকটি ব্যাংক এটা করলেও বেশির ভাগ ব্যাংক এখনও করেনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, যেসব ব্যাংক এখনও নতুন নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বিষয়ে সিস্টেম হালনাগাদ করেনি, শিগগিরই তারা করবে।
আরিফ হোসেন আরও বলেন, মেশিনের সফটওয়ার চেনাতে হয় যে এটা নতুন নোট। ব্যাংকগুলো কাজ শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো একেক দেশ থেকে একেক কোম্পানির মেশিন সংগ্রহ করেছে। কারণ নতুন নোটের নিরাপত্তা ফিচার ও ডিজাইন সিআরএম মেশিনে প্রোগ্রামিং করে দিলেই মেশিনগুলো নোট চিনতে পারবে। ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে কনসার্ন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, এটিএমে টাকা জমা/তোলা সম্পর্কিত কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। যেমন- টাকার সাইজ ও পুরুত্বে ভিন্নতা, ময়লা বা ভেজা নোট, ইত্যাদি। ফ্রিকশন ও সাকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেশিন নোট ওঠায়, তাই সামান্য ভিন্নতা থাকলেই সেটি ব্যর্থ হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সব নোটের ডিজাইন পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিকভাবে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে। আগামী আগস্টের মধ্যে সব ধরনের নতুন নোট বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন ডিজাইনের নোটের মধ্যে ২০০, ১০ ও ৫ টাকায় স্থান পেয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রদের আঁকা গ্রাফিতি। সব নোটেই ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’ স্থান পেয়েছে।
ডিজাইন চূড়ান্ত করা থেকে শুরু করে একটি নোট বাজারে আনতে কয়েক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। টাকার কালি, কাগজ, নিরাপত্তা সুতাসহ সবই বাইরে থেকে আনতে হয়। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আনতে সাধারণত ১৫ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। তবে এবার বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় ঈদের আগে তিন ধরনের নোট বাজারে আনা হয়।
এএ
ব্যাংকার ডেস্ক