ঢাকা, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মুহররম ১৪৪৭

কার্বন নিঃসরণে যুগান্তকারী উদ্যোগ ব্রাক ব্যাংকের

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১:৫৩, ২৪ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ২১:৫৩, ২৪ জুলাই ২০২৫

কার্বন নিঃসরণে যুগান্তকারী উদ্যোগ ব্রাক ব্যাংকের

টেকসই ব্যাংকিংয়ের পথে আরেক ধাপ এগিয়েছে বেসরকারি খাতেন শীর্ষস্থানীয় ব্র্যাক ব্যাংক। বাংলাদেশে টেকসই ব্যাংকিংযাত্রার অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে দেশের প্রথম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের একটি হিসেবে সব ধরনের গ্রিনহাউজ গ্যাস (জিএইচজি) নিঃসরণের তথ্য প্রকাশ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।  

২০২৪ সালের ‘সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’ প্রকাশের মাধ্যমে তারা এই তথ্য প্রকাশ করে। এতে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম থেকে শুরু করে ফাইন্যান্সিয়াল কার্যক্রম পর্যন্ত সব বিষয়ে মোট কার্বন নিঃসরণের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক বছরে ব্যাংকের নিজস্ব কার্যক্রম ও অর্থায়নসহ মোট কার্বন নিঃসরণ হয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪৬৮ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ অর্থায়নকৃত খাত থেকে এসেছে, যা মোট নিঃসরণের ৯৬ শতাংশের বেশি।

ব্র্যাক ব্যাংক জানিয়েছে, নির্গমন হিসাব তৈরিতে তারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। নিঃসরণ তথ্য মাপা হয়েছে তিনটি ভাগে: সরাসরি (স্কোপ–১), বিদ্যুৎ ব্যবহার (স্কোপ–২) এবং অর্থায়নসহ পরোক্ষ কার্যক্রম (স্কোপ–৩)।

স্কোপ–১ অনুযায়ী, ব্যাংকের নিজস্ব গাড়ি ও জেনারেটর থেকে এসেছে ১ হাজার ৬৩০ টন নিঃসরণ। স্কোপ–২-তে বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিঃসরণ হয়েছে ১৬ হাজার ৬৭১ টন। স্কোপ–৩-এর মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম, ব্যবসা সফর, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের যাতায়াত থেকে নির্গত হয়েছে ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৭ টন।

এর মধ্যে শুধু অর্থায়ন কার্যক্রম থেকেই এসেছে ১৪ লাখ ২৩ হাজার ৪৭৯ টন নিঃসরণ। এই হিসাব বিশ্বের স্বীকৃত পিসিএএফ মানদণ্ড মেনে করা হয়েছে, যা ব্যাংক খাতের কার্বন পরিমাপের একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, ব্যাংকের অর্থায়ন করা হয় তিনটি খাতে। এগুলো হচ্ছে— পেট্রোলিয়াম ও কেমিক্যাল, খাদ্য ও পানীয়। এদিকে ধাতব পণ্য উৎপাদন ৬১ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। অথচ ব্যাংকের মোট ঋণের মাত্র ২১ শতাংশ গেছে এসব খাতে।

এটি ব্র্যাক ব্যাংককে দক্ষিণ এশিয়ায় অনন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে দিয়েছে, যারা গ্রিনহাউস প্রোটোকল দ্বারা সংজ্ঞায়িত স্কোপ ৩-এর অধীনে স্বেচ্ছায় ক্যাটাগরি ১৫ নির্গমন রিপোর্ট করে - যা একটি ব্যাংকের জলবায়ু প্রভাবের সবচেয়ে জটিল এবং বস্তুগত দিক হিসাবে বিবেচিত হয়, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পার্টনারশিপ ফর কার্বন অ্যাকাউন্টিং ফাইন্যান্সিয়ালস (PCAF) স্ট্যান্ডার্ডের উপর ভিত্তি করে পরিমাপের মাধ্যমে। 

২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সৌরবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করে প্রায় ১৮ হাজার টন নিঃসরণ কমাতে পেরেছে। ফলে নিট নিঃসরণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৬ টনে।

নির্গমন হিসাবকে আরো নির্ভরযোগ্য করতে ব্যাংকটি আইএফআরএস, জিআরআই, আইএসএসবি ও জিএইচজি প্রোটোকলের মতো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করেছে। সেই সঙ্গে সেক্টরভিত্তিক কার্বন ইনটেনসিটি ও জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ব্যবহার করে আরো বিশ্লেষণ যুক্ত করা হয়েছে।

ব্র্যাক ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় এখন থেকে কার্বন নির্গমন তথ্যও বিবেচনায় নেয়া হবে। পাশাপাশি উচ্চ নিঃসরণকারী খাতের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরির কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ব্যাংকটি একটি ৬৮ মেগাওয়াটের গ্রিড-টাইড সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, যা প্রতি বছর ৭০,০০০ টনেরও বেশি কার্বন নিঃসরণ প্রতিরোধ করতে পারবে। এছাড়াও, ব্যাংকটি এখন পর্যন্ত জলবায়ু-স্মার্ট প্রযুক্তির উন্নয়নে ৫৩,৩৫৭ মিলিয়ন টাকা ট্রানজিশন ফাইন্যান্সে বরাদ্দ দিয়েছে। 

ব্র্যাক ব্যাংকের এই যুগান্তকারী উদ্যোগ এক নতুন বেঞ্চমার্ক স্থাপন করেছে। কার্বন নিঃসরণ রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক প্রমাণ করেছে যে, শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই নয়, বরং পরিমাপযোগ্য ও তথ্যভিত্তিক বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানও অর্থনীতির কার্বন নিরপেক্ষীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন