ব্যাংকার খবর
প্রকাশ: ১৯:১৭, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৪৪, ২ মে ২০২৫
মনে প্রশ্ন আসতে পারে, মানুষ কেন সঞ্চয় করে? অধিকাংশই সঞ্চয় করে ভবিষ্যতের প্রয়োজন পূরণ কিংবা অপ্রত্যাশিত বিপদ মোকাবেলার আশায়। পরিবারের নিরাপত্তা ও সুখের কথা ভেবে সঞ্চিত অর্থ জমিয়ে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগও করেন অনেকে। কিন্তু এমন কোনো সঞ্চয় বা বিনিয়োগ কি আছে যা জীবনে যেমন লাভজনক, মৃত্যুর পরও তেমনি কাজে আসে?
এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে ধর্মবাণীতে। প্রতিটি শাশ্বত ধর্ম মানুষকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে- অন্যের কল্যাণে দান করো। দিনে ও রাতে, প্রকাশ্যে ও গোপনে, সচ্ছল এমনকি অসচ্ছল অবস্থায়। কেননা এটাই জীবনের আসল সঞ্চয়! ভেবে দেখুন তো, দুস্থ বিপন্ন মানুষের উপকার করার পর আপনার মনে কি একটু সুখ সুখ অনুভ‚তি হয়? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, পরার্থে সেবা শুধু মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, শারীরিক সুস্থতা এবং দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনাও অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। তবে সঙ্ঘবদ্ধভাবে সৎকর্মে অংশ নেয়ার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আসলে উপকৃত অসহায় মানুষের হৃদয় নিংড়ানো দোয়া। আপনার ইহকালীন ও পরকালীন সঞ্চয়কে যা বহুগুণে সমৃদ্ধ করবে। ৩২ বছর ধরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এই সুযোগটিই করে দিচ্ছে। দাতা হোন, সত্যিকারের সঞ্চয় করুন। বঞ্চিতের মুখে হাসি ফোটানোর নির্ভেজাল আনন্দে ভেসে যাক আপনার হতাশা, দুশ্চিন্তা ও বালা-মুসিবত।
সুস্থতা ও সুখে বৈজ্ঞানিক দান
দান করুন মস্তিষ্ক হবে ইতিবাচক
সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ফিলিপ টবলার ও প্রফেসর আর্নস্ট ফার ২০১৬ সালে ব্যতিক্রমী একটি গবেষণার সূত্রপাত করেন। ৪৮ জন ব্যক্তির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, ভালো খাবার বা অত্যন্ত আনন্দদায়ক কোনো ঘটনা ঘটলে মস্তিষ্কের যে অংশ উদ্দীপ্ত হয়, সেই একই অংশ উদ্দীপ্ত হয় যখন আমরা দান করি, অসহায় কারো উপকার করি। প্রফেসর টবলারের মতে, ‘প্রতিদিনের জীবনে আপনি আরেকটু বেশি সমমর্মী আচরণ করতে শিখুন, দেখবেন আপনার সুখের পরিমাণ বাড়বে অনেক বেশি।’
দান আপনাকে রাখবে সুস্থ
২০০৬ সালে যৌথভাবে একটি গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর র্যাচেল পিফেরি এবং টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ক্যাথলিন লওলার। তারা দেখেন- যারা নিয়মিত দান করেন, তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তারা তুলনামূলক বেশি সুস্থ। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এলিজাবেথ ডান গবেষণায় দেখেন, যখন কেউ দান করে তার রক্তচাপ হ্রাস পায় উল্লেখযোগ্য হারে। অথচ যখন সে নিজের জন্যে ব্যয় করে, রক্তচাপে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।
দানে বাড়ে উপার্জন
আমেরিকাতে পরিচালিত একাধিক নির্ভরযোগ্য গবেষণায় উঠে এসেছে, দান করলে দাতার শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি বাড়ে। শুধু তা-ই নয়, ২০০৭ সালে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, আমেরিকার ৪৪টি অঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত জরিপে পাওয়া গেছে যে, যারা দান করেছে তাদের উপার্জনও বেড়েছে।
দীর্ঘজীবনের জন্যে দান
যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব হেলথ সাইকোলজি-র রিপোর্ট অনুসারে, দাতারা দীর্ঘায়ু হন। অন্যের উপকার করতে পেরে যে ভালোলাগা সৃষ্টি হয় তা ছড়িয়ে পড়ে দেহ-মনে। রক্তে ‘হ্যাপিনেস কেমিক্যাল’ যেমন : ডোপামিন, এন্ডোরফিন, অক্সিটোসিনের প্রবাহ বাড়ে। ফলে দাতার মনে দুশ্চিন্তা হতাশা ভয়-আতঙ্ক খুব একটা সুবিধা করতে পারে না।
অন্যের জন্যে ব্যয় করলে আসে দীর্ঘস্থায়ী সুখ
হ্যাপি মানি : দ্য সায়েন্স অব হ্যাপিয়ার স্পেন্ডিং বইয়ের লেখক মাইকেল নরটনের মতে, ‘নতুন জুতো, জামা, গাড়ি, বাড়ি কেনার আনন্দ যতই অতুলনীয় হোক তা বড্ড তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়।’ নিজের জন্যে ব্যয় করাটা সুখের, তবে এ সুখ স্থায়ী হয় না। অন্যদিকে একই অর্থ যখন আমরা অন্যের প্রয়োজনে ব্যয় করি বা দান করি, তখন যে সুখের সৃষ্টি হয় তার স্থায়িত্ব অনেক বেশি।
আপনার দানের অর্থের পরিণতি জানুন
দানের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ হলো, দানের অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা জানা। এ নিয়েও দীর্ঘ গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাইকেল নরটন। তার মতে, দান কীভাবে মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করছে, এ বিষয়ে দাতার সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে দানের তৃপ্তি বহুগুণে বেড়ে যায়।
ধর্মবাণীতে দান
পাপমোচন ও ক্ষমা
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও (সৃষ্টির সেবায় ব্যয় করো)। তিনি এর বহুগুণ প্রতিদান দেবেন আর তোমাদের ক্ষমা করবেন। ৬৪ : ১৭
সময় থাকতে দান
আমি তোমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি, সময় থাকতেই তা থেকে অন্যের জন্যে ব্যয় করো, যাতে মৃত্যুর মুহূর্তে একথা বলতে না হয়, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরেকটু সময় দাও, আমি দান করে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হই।’ কিন্তু মৃত্যুর নির্ধারিত
সময় উপস্থিত হলে আল্লাহ কাউকেই অবকাশ দেন না। ৬৩ : ১০-১১
প্রিয় জিনিস থেকে দান
(হে বিশ্বাসীগণ!) তোমার প্রিয় ও পছন্দের জিনিস থেকে দান করতে না পারলে তুমি কখনো সত্যিকারের ধার্মিক হতে পারবে না। ৩ : ৯২
দান নিজেরই কল্যাণে
(হে মানুষ!) যে অর্থবিত্ত তোমরা দান করো, সে দান তো তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যেই। তোমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করো। অতএব দানের পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদেরকে অবশ্যই দেয়া হবে। তোমাদের হক কখনো নষ্ট করা হবে না। ২ : ২৭২
দানে প্রবৃদ্ধি বহুগুণ
আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্যে শুদ্ধচিত্তে (যাকাত হিসেবেও) যা দান করো, তা-ই বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ৩০ : ৩৯
বেদ
সমাজকে ভালবাসো। ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও। দুর্গতকে সাহায্য করো। সত্য-ন্যায়ের সংগ্রামে সাহসী ভ‚মিকা রাখার শক্তি অর্জন করো। ঋগ্বেদ : ৬.৭৫.৯ নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব। ঋগ্বেদ : ১.১২৫.৬ এসো প্রভুর সেবক হই! গরিব ও অভাবীদের দান করি। ঋগ্বেদ : ১.১৫.৮
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা
স্থান কাল বিবেচনা করে কোনো প্রত্যাশা না করে উপযুক্ত পাত্রে প্রদত্ত দান সাত্তি¡ক বা উত্তম দান। প্রতিদানের প্রত্যাশায় অনিচ্ছাসত্তে¡প্রদত্ত দানকে রাজসিক দান বলা হয়। অযোগ্য পাত্রে অনাদরে এবং অবজ্ঞাসহকারে যে দান, তা হচ্ছে তামসিক। শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগযোগ : ২০-২২
বুদ্ধবাণী
দানের অনন্ত কল্যাণ সম্পর্কে আমি যা জানি, যদি মানুষ তা জানত, তাহলে কাউকে না দিয়ে সে অন্ন গ্রহণ করত না। স্বার্থপরতার কালিমা তাকে বশীভ‚ত করতে পারত না। তার মনের গভীরে নীচতার কালিমা প্রবেশ করতে পারত না। ইতিবুত্তক : ২৬ প্রকৃত নিরন্ন মানুষকে যে অন্ন দান করে, সে পরলোকে স্বর্গে গমন করবে। ইতিবুত্তক : ২৬
বাইবেল
যখন দান করো গোপনে দান করো। ডান হাত কী দিচ্ছে বাম হাত যেন জানতে না পারে। তোমার নীরব দান সদাপ্রভু দেখছেন। তিনি তোমাকে
পুরস্কৃত করবেন। মথি ৬ : ৩-৪ অভাবীদের সাহায্য করো। ঈশ্বরের সন্তুষ্টিমূলক কাজে অগ্রগামী থাকো। রোমীয় ১২ : ৯-১৩ সার্থক তাদের জীবন যারা দানশীল, কারণ তারা দয়া পাবে। সার্থক তাদের জীবন যাদের অন্তর নির্মল, কারণ তারা ঈশ্বরের দর্শন পাবে। মথি ৫:৬-৮
এএ/
ব্যাংকার খবর