ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মুহররম ১৪৪৭

প্রথমবারের মতো হিলির আম গেল সুইজারল্যান্ডে

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭:৫১, ৭ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৫২, ৭ জুলাই ২০২৫

প্রথমবারের মতো হিলির আম গেল সুইজারল্যান্ডে

গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (গ্যাপ) বা উন্নত কৃষি পরিচর্যা পদ্ধতিতে আম চাষ করে প্রথমবারের মতো বিদেশে রপ্তানি করেছেন হিলি জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হাকিমপুরের  কৃষক নিরঞ্জন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবছর জেলার বিভিন্ন স্থানে সৃজন করা হয়েছে উন্নত জাতের আম বাগান।

এ বাগানগুলোতে গ্যাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন হাকিমপুর উপজেলার গোহাড়া গ্রামের কৃষক আম চাষি নিরঞ্জন চন্দ্র রায় (৪০)। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ জানায়, হাকিমপুর উপজেলায় এই প্রথম বারি-৪ আম  বিদেশে  রপ্তানি শুরু করা হয়েছে। নিরঞ্জনের আম বাগান থেকে এ পর্যন্ত ২ মেট্রিক টনের অধিক আম সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। 

নিরঞ্জন চন্দ্র রায় জানান, ‘হাকিমপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো বারি-৪ জাতের আম উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে। গ্যাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নত জাতের আম সফলভাবে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এই পদ্ধতি ব্যবহারে খরচ কম, উৎপাদন বেশি।’ 

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, গ্যাপ পদ্ধতি বলতে, উন্নত কৃষি পরিচর্যা বা গুড এ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস বোঝানো হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ফল একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পরিণত হওয়ার পর গাছে থাকা অবস্থায় বিশেষ ধরনের ব্যাগ দিয়ে ফলকে আবৃত করা হয়। ব্যাগিং করার পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে ব্যাগটি। এই পদ্ধতিতে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও বিদেশে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন করা যায়। এছাড়া বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই শতভাগ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত আম পাওয়া যায়। 

তিনি বলেন, ‘গ্যাপ পদ্ধতিতে ব্যাগিং করলে বালাইনাশকের ব্যবহার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে যায়। যে কোনো জাতের আমের ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও হলুদাভ করা যায় এবং আমের সংরক্ষণকাল বাড়ানো যায়। যা রপ্তানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, জেলার হাকিমপুর হিলি সদর থেকে আড়াই থেকে তিন কিঃমিঃ পূর্বে পৌর শহরের গোহাড়া গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র রায় উন্নত জাতের বারি-৪ আম চাষ করেছেন। গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করে এক একর জমিতে বারি-৪, গৌরমতি ও আম্রপালি জাতের আম চাষ করে তিনি সফল হয়েছেন। 

তিনি জানান,  ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ-পার্টনার এবং ক্লাস্টার ডেমোনস্ট্রেশন ফর গ্যাপ স্ট্যান্ডার্ড অব ফ্রুটস’ প্রকল্পের আওতায় এই কৃষক আম বাগান করেছেন।

বাগানের পরিচর্যা কর্মী মো. আব্দুল হাকিম বলেন, এই বাগানের বয়স পাঁচ বছর। আমি গত চার বছর ধরে এই আম বাগানের পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করে আসছি। এবছর এই বাগানে আমের উচ্চ ফলন হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় আমের দাম কম। 

কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র রায় বলেন, প্রথমে এটি আবাদি জমি ছিল। তারপর ইউক্যালিপটাসের বাগান করা হয়। পরবর্তীতে পরিবারের সিদ্ধান্তে আম বাগান করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় গ্যাপ পদ্ধতিতে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রকল্পের আওতায় আম বাগান করেছি। প্রথমে মাটির ধারণ ক্ষমতা ও পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। আম যখন পরিপক্ক হয়ে আসে তখন কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানবদেহের ক্ষতিকর কোন উপাদান আছে কি না সেটা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও রফতানিযোগ্য আমের জন্য ম্যাক্সিমাম রেসিডিউ লিমিট (এমআরএল) পরীক্ষা জরুরি। কৃষি অফিসের মাধ্যমে এই পরীক্ষা করা হয়। 

নিরঞ্জন বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী বাগান পরিচর্যা করে উচ্চ ফলন পেয়েছি। এ পদ্ধতিতে খরচ কম, ফলন বেশি। এছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকাও আমের ফলন ভালো হওয়ার অন্যতম কারণ। আমার বাগানের আম বিদেশে রপ্তানি করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম জানান, এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো গ্যাপ পদ্ধতিতে পার্টনার প্রকল্পের আওতায় আম চাষ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হয়েছে। পৌর শহরের গোহাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা কৃষক নিরঞ্জন রায়কে এক একর আম বাগানের একটি প্রদর্শনী প্লট দেয়া হয়। বাগানের মাটি ও পানি পরীক্ষা, পরিচর্যা থেকে শুরু করে কখন কোন বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে, সব বিষয়ে তাকে পরামর্শ দেয়া হয়। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত তার বাগান মনিটরিং করা হয়েছে। ফল তোলার  আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে পরিচর্যাগুলো না করলেই নয়, তার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

আরজেনা জানান, উপজেলা কৃষি অফিস যখন যে পরামর্শ দিয়েছে কৃষক নিরঞ্জন রায় তা অনুসরণ করেছেন। তিনি গ্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করে বারি-৪ আম চাষ করে প্রথম বারের মতো হাকিমপুর উপজেলা থেকে ২ হাজার ৪৫০ কেজি আম সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে রফতানি করেছেন। এটি এই উপজেলার কৃষিক্ষেত্রে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছে বলে আমি মনে করি। 

নিরঞ্জনের মতো জেলার আম চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুসরণ করে আম চাষ করলে উৎপাদিত আম বিদেশে রফতানি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। (সূত্র: বাসস)

এএ

 

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন