ঢাকা, সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫

৯ ভাদ্র ১৪৩২, ২৯ সফর ১৪৪৭

আনার চাষে সফল দিনাজপুরের দুই বন্ধু, ১৪ লাখ টাকা বিক্রির আশা

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭:৪৬, ২৪ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৪৬, ২৪ আগস্ট ২০২৫

আনার চাষে সফল দিনাজপুরের দুই বন্ধু, ১৪ লাখ টাকা বিক্রির আশা

আনার চাষের ওপর ভারতের মুম্বাইয়ের একটি কৃষি খামার থেকে প্রশিক্ষণ নেন দিনাজপুরের নাদিম হোসেন (৩৫) ও তার বন্ধু মনিরুজ্জান চৌধুরী (৩৬)। প্রশিক্ষণ শেষে তারা সেখান থেকে চারা নিয়ে এসে ৪ বছর আগে দেশে বাগান করেন। আনার চাষে সফল হয়েছেন তারা। তাদের বাগানে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে ভিনদেশি ফল আনার।

প্রথম অবস্থায় অনেকেই আনার বাগান করায় নিরুৎসাহিত করেছিল তাদের। কিন্তু এখন দেশে সর্ববৃহৎ আনারের বাগান নিজেরা গড়েছেন বলে দাবি নাদিম ও মনিরুজ্জামানের। 

দিনাজপুর সদরের রানীগঞ্জ বেলবাড়ী গ্রামে এই দুই যুবক নিজ উদ্যোগে ৪ একর জমিতে বিদেশি আনার ফলের বাগান করেছেন। আনার চাষে সফল হয়েছেন তারা।

রানীগঞ্জ বেলবাড়ী গ্রামে ‘গ্রিন লিফ অ্যাগ্রো ফার্ম’ নামের বিশাল আনার বাগান চোখে পড়ে। প্রায় ৪ একর জমিতে আনারের গাছ রয়েছে এক হাজার একশ’টি। গত বছর আনার তেমন একটা ধরেনি তবে এ বছর বাগানের প্রত্যেকটি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে।

কৃষি উদ্যোক্তা এ দুই যুবক জানান, পরীক্ষামূলকভাবে আনার চাষে তারা সফলতা পেয়েছেন। এবার অন্তত ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার আনার ফল বিক্রির আশা করছেন তারা। তারা বলেন, পাইকাররা আগাম তাদের বাগানের আনার ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা খোঁজ খবর নিচ্ছেন কবে নাগাদ আমরা আনার ফল ভেঙ্গে বাজারজাত করবো। 

নাদিম হোসেন ও মনিরুজ্জান জানান, বাগানে চারা রোপণের ৪ বছর পর এবারে গাছগুলোতে ফল এসেছে। একেকটি গাছে আনার ধরেছে ২০ থেকে ৬০টি করে। আগস্ট মাসের শেষ দিকে এসব ফল বিক্রি করা শুরু হবে।

উদ্যোক্তা নাদিম বলেন, রোগবালাই দেখা না দিলে একেকটি গাছ কমপক্ষে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। যত দিন যাবে, এসব গাছ থেকে তত বেশি ফল পাওয়া যাবে। প্রথমবারেই সফল হওয়ায় বাগান আরও সম্প্রসারণ করা হবে। আগামীতে এই ফল উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব বলে জানান তারা।

দুই বন্ধু জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের আনার চাষের সফলতার খবর ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন বাগান দেখতে ভিড় করছেন মানুষ। আনার দেখে অনেকেই এ ফল চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। বিদেশি এই ফল দেশের মাটিতেও ফলানো সম্ভব-এটা দেখে অনেকেই পরামর্শ নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে। 

ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেনসহ পিসি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আনার বাগান পরিদর্শন করেছেন।

দিনাজপুর হর্টিকালচার বিভাগের কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, বাংলাদেশে এত বড় আনারের বাগান আর কোথাও নেই। এই বাগানের সফলতা অর্জনে উদ্যোক্তা দুই যুবককে হর্টিকালচার বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।  

সদর উপজেলা কৃষি দপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা মো. আবু বোরহান জানান, বেশ ঝুঁকি নিয়ে দুই বন্ধু মিলে আনার বাগানটি গড়ে তুলেছেন। কৃষি উদ্যোক্তা ওই যুবকদের বাগান করায় সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, পরীক্ষামূলকভাবে দিনাজপুরে আনারের বাগান গড়ে উঠেছে। এই বিদেশি ফল চাষে তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় কোনো সমস্যা হয়নি। রোগ-বালাই মোকাবেলায় কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে আনার চাষে যেহেতু সফল হওয়া গেছে তাই আশা করা যায় জেলায় আনার চাষের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। এই বাগান দেখে তরুণ ও যুবকেরা আনার চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।

সূত্র: বাসস

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন