ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

কম খরচে আনারকলি চাষে লাখ টাকা মুনাফা

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭:৩৫, ১০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৩৫, ১০ অক্টোবর ২০২৫

কম খরচে আনারকলি চাষে লাখ টাকা মুনাফা

মৃদু টক মিষ্টি স্বাদের আনারকলি বাংলাদেশে ট্যাং ফল নামেও পরিচিত। তবে বিদেশে এর নাম ‘প্যাসন ফ্রুট’। এই ফলটির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে দিন দিন। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে আনারকলি বা ট্যাং ফল চাষ করা যায়। যে কারণে এর উৎপাদন খরচও কম। নেই কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি।

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্ট্যালিন (৩৬) বিদেশি আনারকলি ফল চাষ করে সফল হয়েছেন। বিদেশি ফল হলেও আনারকলি স্বাদে গন্ধে অনন্য। দেশের পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে কয়েক বছর আগেই এই ফলটির চাষ শুরু হয়। তবে এই প্রথম সমতলে আনারকলির বাণিজ্যিক চাষ করেছেন মাহমুদ হাসান স্ট্যালিন।

তরুণ উদ্যোক্তা মহেশপুরের পান্তাপাড়া ইউনিয়নের ঘুঘরি গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদ হাসান স্ট্যালিন জানান, প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর আগে থেকে তিনি কৃষি কাজ শুরু করেন। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের  মাধ্যমে চমকপ্রদ ফল উৎপাদনের ইচ্ছা থেকেই তিনি এই কাজ বেছে নেন। প্রথম দিকে প্রায় ৬ বিঘা জমিতে ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারা ও আঙুর চাষ শুরু করেন।

পরে গণমাধ্যমের খবর দেখে তিনি প্যাসন ফ্রুট বা আনারকলি আবাদের বিষয়ে আগ্রহী হন। এরপর পরীক্ষামূলকভাবে ২ শতাংশ জমিতে আনারকলি চাষ করেন। বর্তমানে আড়াই বিঘা জমিতে তিনি আনারকলি বা প্যাসন ফ্রুট লাগিয়েছেন। গাছ লাগানোর দুই বছর পরেই পেয়েছেন উচ্চ ফলন। ফল বিক্রি করে পেয়েছেন উচ্চ মূল্য।

তিনি জানান, প্রথম দুই শতক জমিতে ২০টি আনারকলি গাছ লাগিয়েছিলেন। দুই বছর পরে তার গাছে ফল উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১০ হাজার পিস। প্রতি পিস আনারকলি পাইকারি বিক্রি করেছেন ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। সব মিলিয়ে দুই শতক জমি থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছেন। দুই শতক জমিতে এই ফল চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। বছরে মাত্র দুই শতক জমিতে আনারকলি চাষ করে তিনি প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন। 

স্ট্যালিন জানান, বিঘাপ্রতি আনারকলি চাষে খরচ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা৷ ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমি থেকে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। প্রতিটি গাছ থেকে বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮ মাস একাধারে ফল পাওয়া যায়।

প্রথমে দুই শতক জমিতে আনারকলি চাষ করে ভালো আয় হওয়ায় তিনি বাগানের পরিধি বাড়িয়েছেন। লাভের টাকা দিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে শুরু করেছেন আনারকলির আবাদ। এই ফল বিক্রির টাকা দিয়ে ড্রাগন, পেয়ারা ও মাল্টার বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি।

তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, এখন আড়াই বিঘা জমিতে এই ফলের গাছ লাগিয়েছি। বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। প্রতিটি গাছে নানা আকারের ফল, ফুল ও কুঁড়ি রয়েছে। বাগান দেখে আমার মন ভরে যায়।

তিনি আরও বলেন, যখন এই ফলের আবাদ শুরু করি, অনেকেই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। এখন আর কেউ মশকরা করে না। প্রতিটি গাছের ডগায় প্রচুর ফল ধরে। এই ফলের চাহিদাও বাড়ছে। দামও ভালো।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আনারকলি ফল বিদেশে প্যাসন ফ্রুটস নামে পরিচিত হলেও দেশে এটাকে আনারকলি বা ট্যাং ফল বলা হয়ে থাকে। ভিটামিন সি, আয়রণ, জিংক, ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফল। এই ফল চাষ করতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। জৈব পদ্ধতিতে এটি আবাদ করা যায়। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কাও নেই।

ঝিনাইদহের মহেশপুরের ঘুঘরি গ্রামের মানিক হোসেন মিয়াজি বলেন, স্ট্যালিন ভাইয়ের আনারকলি ফলের বাগান দেখতে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে উদ্যোক্তারা ছুটে আসছেন। বাগানে যে পরিমাণ ফল ধরে, তা দেখে আমরা অবাক। প্রচুর ফল ধরে, স্বাদও অসাধারণ।

এই এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রথমে এই ফল আমরা চিনতাম না। স্ট্যালিন ভাই লাগানোর পরে অনেকেই মশকরা করত। কিন্তু ফল ধরা শুরু হওয়ার পর আমাদের সবার ভুল ভেঙেছে। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ফল ও চারা কিনতে আসছেন।

উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান বলেন, ১০ কাঠা জমিতে আনারকলি চাষ করলে কয়েক লাখ আনারকলি ফল পাওয়া সম্ভব। এই ফল পিস হিসেবে বিক্রি হয়। উৎপাদন খরচ খুবই কম, তবে দাম ভালো পাওয়া যায়।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঝিনাইদহের মাটি অত্যন্ত উর্বর। এই মাটিতে নানা জাতের দেশি বিদেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকরাও উদ্যমী ও পরিশ্রমী। কৃষকরা জেলার প্রতিটি এলাকায় দারুণ সফলতা পাচ্ছেন। বিশেষ করে, মহেশপুরের স্ট্যালিন বিদেশি প্যাসন ফ্রুট চাষ করে যে সাফল্য দেখিয়েছেন, তা অনন্য। তরুণ যুবকরা চাইলে অল্প বিনিয়োগে উন্নত পদ্ধতিতে কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করলে তারাও সাবলম্বী হবে।

সূত্র: বাসস

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন