দি ব্যাংকার ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:৫৬, ৬ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৫৭, ৬ মে ২০২৫
এক সময় মানুষ নিজের মূল্যবান সম্পদ, অর্থ ও দামি জিনিসপত্র সিন্দুকে নিরাপদে রাখত। সময়ের সাথে মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। এখন ব্যাংকই সম্পদ গচ্ছিত রাখার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ব্যাংক কেন এত বড় ঝুঁকি নিতে গেল? ডিপোজিট ব্যাংকিং গ্রাহকদের সম্পদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এ কথা সত্য। কিন্তু ব্যাংকের তাতে সুবিধা কী?
একবার ভেবে দেখুন। ব্যাংকে আপনি ডিপোজিট বা আমানত রাখলে যেকোনো প্রয়োজনের মুহূর্তে খরচ করতে পারবেন। কিন্তু একটি ব্যাংকের জন্য অলস অর্থ বা জমাকৃত আমানত অসহনীয়। ব্যাংক অর্থের বিনিময়ে অর্থ বানায়। ব্যাংকে যখন গ্রাহকরা অর্থ রাখেন, সেই অর্থ দিয়েই ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। তবে এ ঋণ দেওয়ার বিষয়টি এমন নয় যে, কারো আমানতের পুরোটাই দিয়ে দেয়। বরং কাজটি আলগোছে করে।
মনে করুন, কেউ ব্যাংকে অন্তত ১০০টি মোহর জমা রাখল। ব্যাংকে প্রতিনিয়ত অনেক গ্রাহক ডিপোজিট করে থাকেন। ব্যাংকাররা এই ডিপোজিট হিসেব-নিকেশ করে কতটুকু অংশ ঋণের অংশ হিসেবে নিতে পারবেন তার প্রাক্কলন করে থাকেন। প্রাক্কলনের নিরিখে এই জমাকৃত আমানতের সামান্য একটু অংশ তারা সুদের বিনিময়ে ঋণ দেয়। এভাবে বছর শেষে সুদে-আসলে বেড়ে ব্যাংকের আয় বাড়ে। মনে করুন, ওই ব্যাংক থেকে কেউ ১০ হাজার মোহর ঋণ নিল। এই ঋণের জন্য নির্ধারিত সময়ে তাকে ১০ শতাংশ সুদ দিতে হবে। এভাবে বছর শেষে ব্যাংক কোনো পুঁজি ছাড়াই অন্তত ১ হাজার মোহর আয় করতে পারবে। মূলত ডিপোজিট স্কিল ব্যাংকিং খাতে সম্পদের প্রবাহ এবং অর্থ আয়ের অনেক সম্ভাবনা উন্মোচন করে দিয়েছে।
ডিপোজিট স্কিম ব্যাংকিং
ডিপোজিট স্কিম ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সম্পদ জমা করার পাশাপাশি ঋণও নেওয়া যায়। এ ধরনের ব্যবস্থায় ব্যাংক পুঁজিশুণ্য থাকে। ব্যাংক যদি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না চায় তাহলে এ পন্থা সবচেয়ে কার্যকর। মূলত এ ব্যবস্থায় ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। গ্রাহকরা প্রয়োজনবোধে যেকোনো সময় তাদের সম্পদ উত্তোলন করতে পারে। কিন্তু এ স্কিমের মাধ্যমে ব্যাংকের সুবিধা কী?
আগেই বলা হয়েছে, ব্যাংক অলস অর্থ রাখতে পারে না। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতই তাদের মূলধন। ব্যাংক সচরাচর নির্দিষ্ট অর্থ জরুরি জমা হিসেবে রেখে বাকি অর্থ ঋণ দিয়ে দেয়। ধরে নেওয়া যাক, ব্যাংকে প্রায় ১ হাজার মোহর গচ্ছিত রয়েছে। তারা ১০০টি মোহর জরুরি জমা হিসেবে রেখে ৯০০টি মোহর ঋণ দিয়ে দিল। এভাবে প্রতি বছর তারা সুদ আয় করতে পারে। গ্রাহকেরই সম্পদ দিয়ে এভাবে লাভ আদায় করা সহজ।
মুদ্রার বৈশিষ্ঠ্য, কারো হাত থেকে খরচ হলে কারো লাভ হয়। তাই ব্যাংকে জমা করা অর্থ ঘুরেফিরে ব্যাংকের কাছেই আসে। এখানে বলে নেওয়া ভালো, নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যাংকের কাছে অর্থ ফেরা মানে এই নয় যে ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে। বরং দেখা যায়, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ হাতবদল হয়ে আবার ব্যাংকে ফিরে আসে। এভাবে নতুন কিছু সদস্যের আয় বাড়ে। এভাবে ব্যাংকে তারল্য প্রবাহ থাকে। আবার বাড়তি অর্থও আয় হয়।
ব্যাংকে যখন বিক্রয়যোগ্য পণ্য থাকবে তখন প্রতিষ্ঠানটি ঋণ দিয়ে থাকে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক অনেক সতর্ক থাকে। ব্যাংকে সতর্কতার মাধ্যমে ঋণ দিয়ে সুদ আদায়ের প্রক্রিয়াকে মাল্টিপ্লায়ার ইফেক্ট দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। এ জন্য অসীম ধারার সমীকরণ ব্যবহার করা হয়। ব্যাংক চালু করার পর প্রতি বছরে প্রাপ্ত নতুন সুদ হবে তার নিজস্ব পুঁজি । এই অর্জিত পুঁজি দিয়ে সে নিশ্চয়ই মোক্ষ লাভের সাধনা করবে না। বরং সুদের চক্র অবিরতভাবে চালিয়ে নতুন পুঁজির বিপরীতে আরো দশ গুণ ঋণ তৈরি করবে এবং সুদ খাবে । এভাবে ছুটতে থাকবে নতুন মুদ্রা তৈরি করে ঋণ প্রদানের ঘোড়দৌড়, তার সাথে বাড়তে থাকবে আয়, ঋণ ও সুদ । আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থায় ডিপোজিট স্কিম ব্যাংকিং তাই এত জরুরি।
প্রশ্ন হচ্ছে, যারা অর্থ জমা রাখেন তারাও তো বিষয়টি অনুধাবন করেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক আমানতকারীদের সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টের বিপরীতে নির্দিষ্ট সুদহার কিংবা বাড়তি সুবিধা দিয়ে থাকে। ফলে আমানত রাখার বিষয়েও মানুষের আগ্রহ থাকে ব্যাপক।