ঢাকা, সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫

৯ ভাদ্র ১৪৩২, ২৯ সফর ১৪৪৭

খাদের কিনারা থেকে উঠে অর্থনীতি স্থিতিশীল পর্যায়ে: ড. মঞ্জুর হোসেন

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯:৪৩, ২৪ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৪৩, ২৪ আগস্ট ২০২৫

খাদের কিনারা থেকে উঠে অর্থনীতি স্থিতিশীল পর্যায়ে: ড. মঞ্জুর হোসেন

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন বলেছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে এবং স্বস্তির বিষয় হচ্ছে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেশ কমেছে, তবে চালের মূল্য ক্রমাগত বাড়ছে, তাই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মূল্যস্ফীতি আরও কমতে পারে। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর  পাশাপাশি বিনিয়োগ যেন হ্রাস না হয়ে সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে, এমতাবস্থায় বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, সরকার এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে, তবে আমাদেরকে সামগ্রিক প্রস্তুতির বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে উঠে এসেছে, এমতাবস্থায় সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির টেকসই রূপান্তরের উপর বেশ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং  বিশেষ করে ব্যাংক খাতকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান তিনি।

শুধু ঋণের সুদ হার বেশি থাকা, নাকি বাণিজ্যিক সহায়ক পরিবেশ অনুপস্থিতির কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না, সেটি খতিয়ে দেখার উপর তিনি গুরুত্বারোপ  করেন।

সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারস্পরিক শুল্কারোপসহ বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস, শিল্পখাতে জ্বালানি সরবরাহ অনিশ্চয়তা, নানাবিধ দুর্নীতি প্রভৃতি কারণে বেসরকারিখাতের অগ্রগতি তেমন আশাব্যঞ্জক নয় এবং এ অবস্থার আলোকে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্নের লক্ষ্যে আরো কিছুদিন সময় প্রয়োজন।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়কালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত, সিএমএসএমই, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, লজিস্টিক অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতের উপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা উল্লেখজনক হারে বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে এবং ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২.৩ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর কারণে গত বছরের তুলনায় বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি আরও বেশি মন্থর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে, ডিসিসিআই কমপক্ষে ৩বছর এলডিসি উত্তরণ স্থগিত করার প্রয়োজন বলে মনে করে, যাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি, একটি শক্তিশালী ট্রানজিশন কৌশল বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলো হালনাগাদ সম্ভব হয়।

তাসকীন আহমেদ বলেন, এলডিসি উত্তরণে আমরা ভীত নই, তবে বৈশ্বিক অস্থিরতা এবং আভ্যন্তরীণ আন্দোলন বিক্ষোভ এবং সর্বশেষ ট্রাম্প কর্তৃক পারস্পরিক শুল্ক আরোপের উদ্যোগ এ পরিস্থিতি আরো অসহনীয় করে তুলেছে। তাই আরো কিছুটা সময় পেলে আমরা নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারব এবং এ উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা), মুদ্রানীতি বিভাগ মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের, পরিচালক  (এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মুস্তাফা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

ড. মোস্তাফিজ করেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউস ও ব্যাংক-টু-ব্যাংক এলসি সুবিধার কারণে তৈরি পোষাক খাত আজকে এ পর্যায়ে এসেছে, তাই রপ্তানির সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতগুলোকে এ ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও কর আহরণ বাড়ানোর উপর বেশি মনোনিবেশ করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও যোগাযোগ সংযোগসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তিতে বেশ পিছিয়ে রয়েছি, এটার উন্নয়ন জরুরি। উন্নত দেশগুলোতে এসএমইরাই হলো মূল চালিকাশক্তি, তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমশক্তির তৈরিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা মন্দের ভালো। দুর্নীতি যে খুব একটা কমেছে তা বলা যাবে না, অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং দুর্নীতির কারণে শুধু বদলি দিয়ে শাস্তি দিলে হবে না, মানুষের ভিতরকার পরিবর্তন প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি এখন বেশ কঠোর বলে বেসরকারিখাতের অভিযোগ রয়েছে, তবে আমরা বেসরকারিখাতের সহনীয় পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মুস্তাফা বলেন, বর্তমান অবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে নিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে ট্রেড কানেক্টিভিটি বাড়ানো এবং রপ্তানি বাজারের সাথে এসএমইদের সংযোগ বৃদ্ধি এবং পণ্য পরিবহন খরচ হ্রাসে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে তিনি তৈরি পোষাক খাতে ম্যান মেইড ফাইবারের ব্যবহার বাড়ানো এবং চামড়া শিল্পে স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলাসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারিখাতের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন