ব্যাংকার প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮:১৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:১৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর জবাবদিবিহিতা ও সুবিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে শুরু হয়েছে তৃতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ-২০২৫। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারির ফ্রন্টলাইন দেশগুলোর একটি। অথচ গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উদ্বোধনী বক্তব্যে শারমিন এস. মুরশিদ বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে কম দায় থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বড় ভুক্তভোগী দেশ। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারির ফ্রন্টলাইন দেশগুলোর একটি। অথচ গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।” শিল্পোন্নত দেশগুলোর দায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আমরা তাদের কাছে ঋণী নই—বরং তারা আমাদের কাছে ঋণী। জলবায়ু ন্যায্যতা এখন জবাবদিহি ও কার্যকর পদক্ষেপের বিষয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আকতার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে আর কেবল প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। “জলবায়ু ন্যায্যতা মানে ন্যায়, টিকে থাকা এবং জবাবদিহি।” জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অব্যাহত নির্ভরতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক চুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখনও বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। “গ্লোবাল নর্থ প্রায়ই ন্যায়বিচারের বদলে ঋণ দেয়,” বলেন তিনি, এবং জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)–এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশে সরকারি প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক জলবায়ু আন্দোলন কর্মী, গবেষক এবং জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ প্রায় ২,০০০ মানুষ অংশ নিয়েছেন। বক্তারা জলবায়ু সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব পদক্ষেপের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ুর অভিঘাতে টিকে থাকা বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু ন্যায্যতা শুধুই একটি দাবির জন্য দাবি নয়, এটি বাংলাদেশের টিকে থাকার শামিল। এই ন্যায্যতা আমরা যদি নিজেদের ঘর থেকে শুরু করতে না পারি তাহলে আমরা বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যায্যতার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব না।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরাও জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে ধনী দেশগুলোর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। ফিলিপাইনের লিডি ন্যাকপিল, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি)–এর সমন্বয়ক, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত সরে আসা এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আরও জোরালো বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বান জানান।
সমাবেশের প্রথম সেশনে আরও বক্তব্য রাখেন আসাদ রেহমান, প্রধান নির্বাহী, ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ; কাইনান হটন, ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, তারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশন; এবং আশিস দামলে, কান্ট্রি ডিরেক্টর, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন ভাবনায় রুপান্তরের বাস্তবতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি রুপান্তরের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা, রুপান্তরের বাস্তবতায় প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তি ও সুশাসন শিরোনামে তিনটি প্ল্যানারি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের নামে ঋণ নিয়ে আসলে আমাদের বিপদ বাড়াতে পারে। ১৫ বছরের একটা শাসনামলের পর ১৫ মাস এই সরকারের যে সুযোগ ছিল জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশ নিয়ে তারা তার কিছুই করতে পারেনি।
অধিবেশনের বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী প্রধান শাহীন আনাম বলেন, জলবায়ু অভিঘাতের ফলে আমাদের মত দরিদ্র দেশগুলো ক্ষতি এবং ঝুকির সম্মুক্ষিন হচ্ছে। চরাঞ্চল, হাওরাঞ্চল, উপকুলের মানুষদের জীবন ও জীবিকা সংকটের মুখে। জলবায়ু ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী এবং শিশু। নারী স্বাস্থ্য শিক্ষা জীবন-জীবিকা সবই জলবায়ু অভিঘাতে বিপন্ন।
এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য ছিলেন জালাল আহম্মেদ চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন; ড. ডিটার রেইনহার্ড, সিনিয়র রিসার্চার, রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগ, সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়; আয়ান রিভেরা, ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস; মালো তাবিয়োস নুয়েরা, সিনিয়র এনার্জি ক্যাম্পেইনার, এপিএমডিডি; আনা মে বুয়েনাভেন্টুরা ডলেটন, এপিএমডিডি; ইউকি তানাবে, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, জাপান সেন্টার ফর এ সাসটেইনেবল এনভাইরোনমেন্ট এন্ড সোসাইটি; মারিকা কিতা; ডোনা লিসেনবি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, রিভারফক্স এনভাইরোনমেন্টাল; হারজিত সিংহ, স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি; শিবায়ান রাহা, পার্টনারশিপ কোঅর্ডিনেটর, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি; মুনিরা চৌধুরী, ডিরেক্টর, এশিয়া এনার্জি ট্রানজিশন, মার্কেট ফোর্সেস; এবং মাকিকো আরিমা, জাপান ফাইন্যান্স ক্যাম্পেইনার, অয়েল চেঞ্জ ইন্টারনেশনাল ও ফসিল ফ্রী জাপান; মুহাম্মদ বাদর আলম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পলিসি রিসার্স ইনিস্টিটিঊট ফর একুইটেবল ডেভেলপমেন্ট, পাকিস্তান; স্টুয়ার্ট ম্যাকউইলিয়াম, ডিরেক্টর, গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড অয়েল নেটওয়ার্ক।
সম্মেলনের আগে এক হাজারের বেশি দেশি ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু কর্মী একটি র্যালিতে অংশ নেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে আগারগাঁও হয়ে র্যালিটি সম্মেলনস্থলে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে বৈশ্বিক দূষণকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
রোববার সমাবেশের দ্বিতীয় দিনে থিমেটিক সেশন, কর্মশালা ও নেটওয়ার্কিং আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র অডিটোরিয়ামে “মিট দ্য প্রেস” এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
এএ
ব্যাংকার প্রতিবেদন