ব্যাংকার প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১:০১, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:০১, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
আট বছরে দায়িত্ব পাওয়া ৬ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে ৪ জন নারী জেলা প্রশাসক পেয়ে খুশি কুড়িগ্রামের সাধারণ মানুষ। তাদের কাছে এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। তারা মনে করছেন, নারী জেলা প্রশাসকেরা সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নেন। এলাকার উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৬ জন জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৩ মার্চ ২০১৮ থেকে ১৬ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত মোছা. সুলতানা পারভীন, ১৯ মার্চ ২০২০ থেকে ৪ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মো. রেজাউল করিম, ৪ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে ৩১ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত নুসরাত সুলতানা, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে ১৮ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সিফাত মেহনাজ এবং ১৮ নভেম্বর ২০২৫ থেকে অন্নপূর্ণা দেবনাথকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কুড়িগ্রামের সর্বশেষ ছয় জেলা প্রশাসকের মধ্যে চারজনই নারী। এ বিষয়টি জেলাবাসীর কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, এতে কোনো বিশেষ নীতি বা সিদ্ধান্ত নেই। বিষয়টি পুরোপুরি কাকতালীয়।
সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কুড়িগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অন্নপূর্ণা দেবনাথ। তিনি ভূমি সংস্কার বোর্ডে উপভূমি সংস্কার কমিশনার ছিলেন। তার বদলি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন উপসচিব আমিনুল ইসলাম।
স্থানীয় সাংবাদিক, নারী নেত্রী ও নাগরিক সমাজের নেতারা বলছেন, পরপর নারী নেতৃত্ব জেলাজুড়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে নুসরাত সুলতানা চরাঞ্চলে যেসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন তা এলাকাবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তারপর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ আড়াই মাস আগে যোগদান করেন। তিনিও অল্প সময়ে কুড়িগ্রামের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক নাজমুননাহার বিউটি বলেন, ‘এটি প্রশাসনে নারীর ক্ষমতায়নের শক্তিশালী প্রতিফলন। এতে মেয়েরা অনুপ্রাণিত হচ্ছে।’
স্থানীয়রা মনে করছেন, জেলার নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথও পূর্বসূরিদের ধারাবাহিকতায় জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করবেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে ভেবেছি চরের মানুষ বলে আমাদের খবর কেউ নেবে না। কিন্তু এই বছরে দেখলাম, জেলা প্রশাসক স্বয়ং নৌকায়, মোটরসাইকেলে, কখনো পায়ে হেঁটে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত এসে সেবা দিচ্ছেন। তার উদ্যোগে জেলায় নৌ অ্যাম্বুলেন্স চালু হওয়ায় অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে পারছি। এটা আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।’
গৃহবধূ আমেনা খাতুন বলেন, শিশুদের পুষ্টি নিয়ে যে দুধ দিবস আর মেডিকেল ক্যাম্প হলো, তা আমাদের সন্তানদের জন্য বড় উপকার করলো। আগে এসব সুযোগ আমরা কখনো পাইনি।
তিনি বলেন, শহরও বদলে গেছে। ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক হওয়ায় জলাবদ্ধতা কমেছে, আর ধরলা নদীর পাড়ে নতুন ডিসি পার্কে আমরা পরিবার নিয়ে সন্ধ্যায় সময় কাটাতে পারছি। মনে হয় কুড়িগ্রাম সত্যিই বদলে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রামের প্রান্তিক কৃষকরাও নারী জেলা প্রশাসক নিয়োগে বেশ আশাবাদী। তারা বলেন, নদী ভাঙন নিয়ে প্রশাসন যে বারবার এলাকা পরিদর্শন করেছে, প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তা আমাদের ঘরবাড়ি রক্ষার আশা জাগিয়েছে।
তারা বলেন, সবচেয়ে ভালো লেগেছে, প্রশাসনের মানুষ নিজে এসে আমাদের জিজ্ঞেস করেছে, ‘আপনাদের সমস্যা কী?’ এই সম্মান, এই যত্নটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
কুড়িগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন ৩ মার্চ ২০১৮- ১৬ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর কুড়িগ্রামের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। কুড়িগ্রাম-ঢাকা ইন্টারসিটি ট্রেন, দ্বিতীয় ধরলা সেতু চালু করা এবং চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসে। কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও আধুনিক পার্ক নির্মাণে তার উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হয়। উন্নয়ন ও মানবিক সেবায় তিনি দুইবার শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হন।’
সম্প্রতি অন্নপূর্ণা দেবনাথকে কুড়িগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় এলাকাবাসীর মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তাদের প্রত্যাশা নতুন জেলা প্রশাসকও যেহেতু একজন নারী তিনিও এলাকাবাসীর সুযোগ-সুবিধা ও প্রান্তিক মানুষের সুখ-দুঃখের কথা চিন্তা করবেন।
তবে এ ঘটনাকে কাকতালীয়ই বলছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মো. রাহেদ হোসেন বলেন, ‘এটি কাকতালীয় ঘটনা। কুড়িগ্রাম নারী ডিসির জন্য নির্ধারিত জেলা নয়। সবাই তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ পেয়েছেন।’
সূত্র: বাসস
এএ
ব্যাংকার প্রতিবেদন