ব্যাংকার প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০:৩৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২০:৩৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দেশের গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে একটি বড় উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। তিনটি নতুন অনুসন্ধান কূপ খননে ১ হাজার ১৩৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ প্রস্তাবিত এ প্রকল্প বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) বাস্তবায়ন করবে। এর লক্ষ্য হলো শিল্প ও গৃহস্থালি খাতে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদায় দেশের নিজস্ব গ্যাস সরবরাহ জোরদার করা।
নতুন কূপ তিনটি হলো- কুমিল্লার শ্রীকাইল, পাবনার মোবারকপুর ও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ‘তিনটি অনুসন্ধান কূপ খনন (শ্রীকাইল ডিপ-১, মোবারকপুর ডিপ-১ এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১)’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এর অর্থায়ন মূলত সরকারের পক্ষ থেকে আসবে, যার মধ্যে ঋণ বরাদ্দ থাকবে ৯০৯ কোটি টাকা এবং বাপেক্স নিজস্ব তহবিল থেকে ২২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রদান করবে।
দেশব্যাপী বাপেক্সের ২০টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সর্বশেষ সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
একনেক সভার শেষে প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা সবসময়ই একটি পুনরাবৃত্ত সমস্যার সম্মুখীন— নতুন গ্যাস অনুসন্ধান, তা নতুন কূপ খনন করে হোক বা ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত কূপ থেকে গ্যাস আহরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পন্ন করেই হোক। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিটি সভায় অন্তত এ ধরনের একটি বা দুটি গ্যাস প্রকল্প ছিল।
উপদেষ্টা বলেন, গ্যাস আমদানি এখনও প্রয়োজন। মূল সমস্যা হলো গত ১৫ বছরে কোনো নতুন কূপ খনন হয়নি, এমনকি বাপেক্সকেও শক্তিশালী করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা এখন শুরু করলেও এক বছরেই গ্যাস পাওয়া যাবে না। কিন্তু যদি শুরু না করা হয়, তাহলে আমরা কখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছতে পারব না। প্রথমবারের মতো আমরা খনন ও পরবর্তী ধাপের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্য অর্থায়ন করে বাপেক্সকে শক্তিশালী করছি। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের অংশ।
প্রকল্প নকশা অনুযায়ী, শ্রীকাইল ডিপ-১ এবং মোবারকপুর ডিপ-১ কূপ ৬ হাজার মিটার গভীরতায় খনন করা হবে, আর ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ-১ কূপ খনন করা হবে ৪ হাজার মিটার গভীরতায়। কাজের মধ্যে থাকবে রিগ মোবিলাইজেশন ও ডিমোবিলাইজেশন, রিগ ফাউন্ডেশন নির্মাণ, খনন কার্যক্রম, পরীক্ষা ও সম্পন্নকরণ সেবা।
বিশেষ করে শ্রীকাইল ও মোবারকপুরের দুটি গভীর কূপের জন্য পরামর্শক সহায়তাও নেওয়া হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, বাপেক্স কর্তৃক সংগৃহীত বিস্তৃত ভূতাত্ত্বিক তথ্য পর্যালোচনা এবং থ্রি-ডি সিসমিক জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের পর কূপ খননের স্থানগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনটি কাঠামোর ভূতাত্ত্বিক সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য গ্যাস মজুদের শক্তিশালী সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
যদি বাণিজ্যিক গ্যাস আবিষ্কৃত হয়, তাহলে তিনটি কূপ থেকে প্রাথমিকভাবে স্থাপিত গ্যাসের (জিআইআইপি) আনুমানিকপরিমাণ হবে ১,৬৯৬.৩৬ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। এর মধ্যে প্রায় ১,০১৮.১৪ বিসিএফ উত্তোলনযোগ্য হতে পারে। নীতিনির্ধারকদের মতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে এটি ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ পালন করবে।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও জ্বালানি বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকল্প কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সরকারের দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানি করা এলএনজি’র ওপর নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, এই কূপগুলোর অনুসন্ধান ফলাফল জাতীয় রিজার্ভ বেসকে ‘উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি’ করতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) ২০২৫ সালের ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত সভায় প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে, যেখানে তারা প্রকল্পটিকে অনুমোদনের সুপারিশ করে। কমিটি সময়মতো বাস্তবায়ন, পেট্রোবাংলার সঙ্গে সমন্বয় জোরদার এবং সাফল্যের হার বাড়াতে আধুনিক খনন প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
একনেক অনুমোদনের মাধ্যমে নতুন খনন উদ্যোগ সরকারের জ্বালানি খাতের রোডম্যাপের অধীনে বিস্তৃত অনুসন্ধান কার্যক্রমে গতি সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা মনে করেন, এটি গ্যাস অনুসন্ধানে বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগও আকর্ষণ করবে।
সূত্র: বাসস
এএ
ব্যাংকার প্রতিবেদন