ব্যাংকার প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০:৫৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২০:৫৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেজারি বিলের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় সরকারের সুদ ব্যয়ও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এ অবস্থায় ব্যয় কমাতে শরিয়াহভিত্তিক ট্রেজারি বন্ডের দিকে ঝুঁকছে সরকার।
চলতি অর্থবছরেই ২০ হাজার কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যু করতে চাইছে অর্থ বিভাগ। বিশেষ এ ট্রেজারি বিলের কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে আগামী সপ্তাহে বাহরাইনে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কর্মকর্তা।
জানা গেছে, অর্থ বিভাগের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) সাম্প্রতিক এক সভায় ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রচলিত ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি কমিয়ে সমপরিমাণ অর্থ স্বল্পমেয়াদি ইসলামিক বিল বা সুকুকের মাধ্যমে অর্থায়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ট্রেজারি বিলের পরিবর্তে ৯ শতাংশ ভাড়া হারে ২০ হাজার কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যু করা সম্ভব হলে প্রতি বছর সরকারের আনুমানিক ২৪০ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যু করা যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মত দিয়েছে সিডিএমসি কমিটি।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের পরিচালন ব্যয়ের ২৮ শতাংশই গেছে ঋণের সুদ পরিশোধে। এ সময়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার সুদ পরিশোধ হয়েছে, যার মধ্যে স্থানীয় ঋণের সুদ ১ লাখ ১৬ হাজার ৬১৭ কোটি এবং বিদেশী ঋণের সুদ ১৭ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদ বাবদ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে, সেহেতু আমি মনে করি ইসলামিক ট্রেজারি বিলও বিক্রি হবে। এক্ষেত্রে পণ্য বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। বর্তমানে প্রচলিত ট্রেজারি বিল-বন্ডে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারে না। ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যু করা হলে তখন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো সেটি কিনতে পারবে। এক্ষেত্রে যারা শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক পণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তারাও ইসলামিক ট্রেজারি বিল কিনতে আগ্রহী হবেন।’
বিশ্বের অনেক দেশে শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক পণ্যের বড় বাজার গড়ে উঠলেও বাংলাদেশে এটি এখনো সেভাবে বিস্তৃত হয়নি। দেশে শরিয়াহভিত্তিক মূল আর্থিক পণ্য হচ্ছে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত আমানত। ফলে আমানতের বাইরে অন্যান্য ইসলামিক আর্থিক পণ্যের বিষয়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।
এ অবস্থায় ইসলামিক ট্রেজারি বিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞান অর্জনের জন্য অর্থ বিভাগের চারজন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চারজন কর্মকর্তা মোট ৮ জনকে বাহরাইন ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে (বিআইবিএফ) পাঁচদিনের জন্য প্রশিক্ষণে পাঠাচ্ছে সরকার। আগামী ২১ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা বাহরাইনে এ বিষয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।
প্রসঙ্গত, রাজস্ব আয়ের অর্থে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মেটানো সম্ভব না হওয়ায় প্রতি বছরই স্থানীয় ও বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। স্থানীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণের বড় একটি অংশ আসে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে।
এএ
ব্যাংকার প্রতিবেদন