ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সুবিধা

দি ব্যাংকার ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫:৪৭, ৬ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৪৮, ৬ মে ২০২৫

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সুবিধা

ছবি : সংগৃহীত

এজেন্ট ব্যাংকিং সীমিত পরিসরের ব্যাংকিং লেনদেন সুবিধা। সহজ ভাষায়, প্রচলিত ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা থেকে যারা দূরে এবং অবকাঠামোগতভাবে এ সেবা যারা পান না, তাদের জন্য বিশেষ ব্যাংকিং ব্যবস্থাই এজেন্ট ব্যাংকিং। অনেকেই এজেন্ট ব্যাংকিং ও শাখা ব্যাংকিং সম্পর্কে জানেন না। ফলে কোন ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা তাদের জন্য ভালো হবে এ বিষয়ে মনস্থির করতে পারেন না।

মূলত গ্রামীন অর্থনীতির বিকাশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহীত করতেই এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার উৎপত্তি। গোটা বিশ্বেই বিভিন্ন দেশে এজন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এ প্রতিবেদনে আমরা মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

 

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস

এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার উৎপত্তি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। সর্বপ্রথম ব্রাজিলে এ সেবা চালু হয়। পরবর্তীতে মেক্সিকো, পেরু, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা এবং ভারত সহ অন্যান্য দেশ এ ব্যাংকিং সেবা চালু  করে। এ ধরনের ব্যাংকিং সেবা গ্রামীণ জনগণের জন্য  সহজলভ্য হওয়ায় সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করা যায়। শুধু তাই নয়, এভাবে ব্যাংক তার পরিচালন ব্যয় কমিয়েও সেবার পরিসর বাড়াতে পারে।

 

উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং

ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, মালয়েশিয়া এবং কেনিয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিং দীর্ঘদিন অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এ দেশগুলোতে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে গ্রাহকরা ইউটিলিটি বিল, কর দেওয়ার মতো কাজ করতে পারতেন সহজেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিসটার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সরাসরি লেনদেনের তুলনায় এজেন্ট ব্যাংকের লেনদেন ৭০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশেও এজেন্ট ব্যাংকিং ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশে ৫০টিরও বেশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান এ ধরনের পরিসেবা দিয়ে থাকে। এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার বড় সুবিধা, একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক শাখা খোলার ব্যয় লাগে না। অনেক সময় শাখা খোলা অসম্ভব বিধায় ক্লায়েন্ট বেজ গড়ে তোলাই সুবিধাজনক।

এ ধরনের ব্যবস্থায় কোনো এলাকার একজন এজেন্ট কোনো ব্যাংকের পক্ষ থেকে মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধা দিয়ে থাকে। ওই ক্লায়েন্ট বেজ তার অংশীদার নিকটস্থ ব্যাংকের শাখা থেকে লজিস্টিক সুবিধা নেয়। ফলস্বরূপ, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং এর জনপ্রিয়তা আরও বেশি হয়ে ওঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিকা অনুসারে যদি এই ব্যাংকিং খাত সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে এজেন্ট ব্যাংকিং আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু আর্থিক সেবায়  মানুষের পাশে দাড়াতে পারবে। এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিস্ময়কর কাজ করতে পারে।

 

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সুবিধা

যেকোনো দেশেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম সুসংহত রাখার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম এজেন্ট ব্যাংক। এজেন্ট ব্যাংকের সুবিধাগুলো একবার দেখে নেওয়া যায়।

কোনো এলাকায় ব্যাংকের শাখা না থাকলেও ক্লায়েন্ট বেজের মাধ্যমে ব্যাংকিং সুবিধা নেওয়া যায়। গ্রাহকরা যথাযথ সময়েই লেনদেন করতে পারেন।

এজেন্ট ব্যাংকেও গ্রাহকরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের তহবিলে এক্সেস পেয়ে থাকেন। সেজন্য তাদের অনেকদূর বা নিকটস্থ শাখায় যেতে হয় না।

এজেন্ট ব্যাংকিং অনলাইনকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। ফলে গ্রাহকরা সহজেই লেনদেন করতে পারেন। ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় উন্নত ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত হয়। গ্রাহকরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাংকের সেবা পান বলে সময় সাশ্রয় হয়।

দক্ষ এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রামীন অর্থনীতির বিকাশ সহজ হয়। কারণ এ ধরনের পরিসেবায় গ্রাহকরা নানা ধরনের আর্থিক পরামর্শ এবং বাড়তি প্যাকেজ পেয়ে থাকেন।

এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের জন্য ঋণ নেওয়ার পথ সহজ করেছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সব কাজ সম্পন্ন হওয়ায় প্রচলিত পন্থায় ক্লান্তিকর ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা দূর করা যায়। এভাবে ব্যাংকেরও সময় বাঁচে এবং গ্রাহকরাও সহজে ঋণ পেয়ে যান। গ্রাহকরা শুধু ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং আইটি রিটার্ন আপলোড করেন। এভাবে ঋণ প্রসেসের কাজ অনলাইনেই সম্পন্ন হয়।

গ্রাহকরা শুধু তাদের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং আইটি রিটার্ন আপলোড করে লোন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। একটি শক্তিশালী  ব্যাংকিং সলিউশন মানুষের স্পর্শ এড়ানোর জন্য QR কোড, OCR, NFC প্রযুক্তি ইত্যাদি কন্টাক্টলেস পেমেন্ট সলিউশনে ব্যবহার করে যাতে করে আপনার  টাকা অনেক নিরাপদ থাকে। বর্তমান এই ব্যাংকিং সিস্টেম বায়োমেট্রিক পদ্ধতি উপর নির্ভরশীল হওয়াতে আপনার লেনদেন এখন আরো নিরাপদ।

 

কিছু অসুবিধাও রয়েছে

অবশ্যই এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রচলিত শাখা ব্যাংকিং থেকে এজেন্ট ব্যাংক কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে। তবে এজেন্ট ব্যাংকের সুবিধা বিবেচনা করলে অসুবিধাগুলো তেমন বড় মনে হয় না। ব্যাংকিং সেবাকে সহজলভ্য করতেই এ ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে।

এজেন্ট ব্যাংকের মূল সমস্যা, এর লেনদেনের পরিসর সীমিত। লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। সীমা অতিক্রম করলে লেনদেন করা যায় না। আগে এজেন্ট ব্যাংকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করা যেত। এখন তা ৬ লাখ বাড়ানো হয়েছে। তবু যারা মাসে অনেক লেনদেন করেন, তাদের জন্য এটি একটি সমস্যা।  

 

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মূল সেবাসমুহ

  • এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্লায়েন্ট বেজের কিছু প্রধান সুবিধা এখানে আলোচনা করা হলো :
  • এজেন্ট ক্লায়েন্ট বেজের মনোনিত আউটলেটে নিবন্ধিত অ্যাকাউন্টের বিপরীতে অর্থ নেওয়া যায়।
  • অ্যাকাউন্ট থাকলে মনোনীত আউটলেট থেকে অর্থ উত্তোলন করা যায়।
  • এটিএম বুথ থেকে ডেবিট কার্ড দিয়ে অর্থ উত্তোলন করা যায়। ব্যাংকের অ্যাপ সুবিধা থাকলে ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা পাবেন।
  • আউটলেটে যেকোনো সময় অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স জানতে পারবেন।
  • আউটলেট থেকে আর্থিক পরামর্শ নিতে পারবেন।
  • এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা যাবে।
  • বায়োমেট্রিক ডিপোজিট প্লাস স্কিম (ডিপিএস) নামে একটি বিশেষ ধরনের সঞ্চয় করতে পারবেন।

যেভাবে এজেন্ট ব্যাংক কাজ করে

প্রচলিত ব্যাংকের মতোই এ ধরনের ব্যাংকিং সেবা। প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহকরা যে যে সুবিধা পান, এজেন্ট ব্যাংকের গ্রাহকরাও একই সুবিধা পেয়ে থাকেন। পার্থক্য হলো, আপনার নির্ধারিত শাখা ছাড়া আপনি এজেন্ট পয়েন্টে এসে লেনদেন করতে পারছেন। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য এজেন্ট পয়েন্ট গুলিতে এখন বায়োমেট্রিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে কাজ করে থাকে। এজেন্ট পয়েন্ট এ এসে প্রত্যেককে আঙুলের ছাপ দিয়ে কাজ করতে হয়। আপনাকে এর  ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আঙুলের ছাপ দিতে হবে।

যেভাবে অ্যাকাউন্ট খুলবেন

যে কোন  ব্যক্তি এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলতে গ্রাহকদের তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না। আপনার শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র (এন-আইডি কার্ড) লাগবে। যদি আপনার এন-আইডি কার্ড না থাকে সেই ক্ষেত্রেও আপনি এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। সেই সিস্টেমটি হচ্ছে আপনাকে আপনার বাবা, মার এন-আইডি কার্ড নিয়ে যেতে হবে। তবে সেই ক্ষেত্রে এটি স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে।

আরও পড়ুন