ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

‘ট্রাভেল এজেন্সি অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের দিনই বেকার হবে লাখো কর্মী’

ব্যাংকার প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯:২৭, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২৮, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

‘ট্রাভেল এজেন্সি অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের দিনই বেকার হবে লাখো কর্মী’

বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের জন্য সরকার যে খসড়া অধ্যাদেশ-২০২৫ তৈরি করেছে তা বাস্তবায়নের দিনই ট্রাভেল, হজ ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর লাখ লাখ দক্ষ জনবল বেকার হয়ে যাবে। এমনটাই দাবি করছেন এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাই তারা অধ্যাদেশটি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনের এক হোটেলে এজেন্সিগুলোর পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব।

মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে দেশের প্রায় ছয় হাজার ট্রাভেল এজেন্সি, এক হাজার ৪০০ হজ এজেন্সি ও দুই হাজার ৭০০ রিক্রুটিং এজেন্সি সরাসরি ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ নতুন অধ্যাদেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রাভেল এজেন্সিকে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আয়াটা) টিকিট বিক্রির প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে হবে। অথচ দেশে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি থাকলেও এর মধ্যে মাত্র এক হাজারের মতো এজেন্সি আয়াটায় যুক্ত। ফলে নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হওয়ার দিনই বাকি ট্রাভেল এজেন্সিগুলো কার্যত ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। তাদের ওপর নির্ভরশীল অন্য এজেন্সিগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ট্রাভেল, হজ ও রিক্রুটিং এজেন্সির লাখ লাখ দক্ষ জনবল বেকার হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নতুন অধ্যাদেশে এমন সব ধারা সংযোজন করা হয়েছে যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবারের সদস্যদের তথ্যাদি দাখিল বাধ্যতামূলক করা, ঋণসংক্রান্ত সিআইবি অনুমোদন, অফলাইনে ১০ লাখ এবং অনলাইনে এক কোটি টাকা ব্যাংক জামানত রাখা, বার্ষিক আর্থিক বিবরণী প্রদানের শর্তে লাইসেন্স নবায়ন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার ওপর কঠোর শর্ত আরোপ। এসব বিধান বাস্তবায়িত হলে দেশের পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং সেগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান সংবাদ সম্মেলনে।

মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব জানান, বিশ্বের সব দেশে ট্রাভেল এজেন্সির এজেন্ট-টু-এজেন্ট (বিটুবি) ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। তবে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিটুবি ব্যবসা বাংলাদেশে বন্ধ করা হচ্ছে। অর্থাৎ এক ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে অন্য ট্রাভেল এজেন্সির টিকিট ক্রয়-বিক্রি করা যাবে না। বিটুবি বন্ধের ফলে সব ট্রাভেল এজেন্সিকে আয়াটা নিতে হবে, যার খরচ প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিটের জন্য আরও অতিরিক্ত ২২ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। ৯০ শতাংশ ট্রাভেল এজেন্সির এত টাকা নেই। এর ফলে এসব এজেন্সিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

আটাবের সাবেক সভাপতি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মালিকরা বিদেশে পাড়ি জমালেও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা পূর্বেই অনুরোধ করেছিলাম নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা স্থগিত রাখতে। কিন্তু তা না করায় প্রতারকরা নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে পেরেছে এবং এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা চাই আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সবার স্বার্থ রক্ষায় সমাধান বের হোক। সরকার যেন হাজারো ট্রাভেল উদ্যোক্তা ও কর্মীর ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে না ঠেলে দেয়।’

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নতুন আইন যেন আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হাতিয়ার না হয়ে যায়; বরং একটি সুষ্ঠু, টেকসই ও ন্যায্য ট্রাভেল শিল্প গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।

এএ

ব্যাংকার প্রতিবেদন

আরও পড়ুন